মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 11 d ago
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বর্তমান সভাপতি অ্যানালেনা বেয়ারবক
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বর্তমান সভাপতি অ্যানালেনা বেয়ারবক
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পর্কীত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বর্তমান সভাপতি  অ্যানালেনা বেয়ারবক জানান , আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশের কক্সবাজারে একটি প্রস্তুতিমূলক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনটি ছিল জাতিসংঘের বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশবিশেষ। কক্সবাজার সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো-রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্রস্তুতি।"
 
   অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেন,  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে চীন, ভারত, আমেরিকার মতো বড় দেশগুলো। ফলে ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে রাখাইন এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে মানব পাচার, মাদক চোরাচালান ও ক্ষুদ্র অস্ত্রের অবৈধ ব্যবসার মতো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনেও উদ্যোগী হতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে- ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে নানা রকম অন্যায় ও অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের এই সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং মায়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তা স্থাপনও অন্যতম লক্ষ্য হবে । 
 
প্রসঙ্গত, গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল সেই আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে সাড়া পাওয়া যায় এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোই এ ধরনের সম্মেলনে অংশ নেয়। এই ব্যাপারে কথা প্রসঙ্গে পরিষদ সভাপতি অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেন, মনে রাখতে হবে যে রোহিঙ্গারা পরিষদের সদস্য নয়। সে কারণে তারা অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো তাদের কথাটা তুলে ধরতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সে কাজটা করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বর্তমানে ১.৩ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রিত হিসেবে আছে,, যাদের বেশির ভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা। 

অ্যাকশনএইড ইউকের সহায়তায় ও পিপলস পোস্টকোড লটারির অর্থায়নে সম্প্রতি একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোতে যৌন হয়রানি সবচেয়ে 'বড় উদ্বেগের' বিষয়। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য অবিলম্বে জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে। 

গবেষণাটি পরিচালনা করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। অংশগ্রহণকারীরাও জোর দিয়ে বলেছেন, শিবিরগুলোর ভেতরে নারীদের ও কিশোরীদের জন্য নিরাপদ ও পর্যাপ্ত আলোযুক্ত টয়লেট এবং স্নানের স্থান নিশ্চিত করা, নারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা এবং নারীদের নেতৃত্বে সুরক্ষা কমিটি গঠন করা জরুরি। পাশাপাশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরো শক্তিশালী করা এবং আইনি সহায়তা সহজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে।

রোহিঙ্গা সংকট যখন অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে তা না হলে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। 

মায়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় এক যুগ পার হয়েছে কিন্তু সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আন্তর্জাতিক মহল। সুতরাং এবার রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মাতৃভূমিতে দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে।