আরিফুল ইসলাম / গুয়াহাটি
সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জাতি-গোষ্ঠী, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ আমাদের দেশ ভারত। ভারতবর্ষের একটি ছোট রাজ্য হলেও এই দিক থেকে পিছিয়ে নেই অসমও। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য-সংস্কৃতির এক পুন্যভুমি এই অসম। আর এই একতা ও সংহতির বিরল এক নজির স্থাপন করেছে এক মুসলিম কিশোরী।ইসলাম ধর্মাবলম্বী একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মাত্র ১০ বছর বয়সেই সে আয়ত্ত করেছে দেবভাষা সংস্কৃত এবং সুন্দরভাবে গীতার শ্লোক উচ্চারণ করে দেখিয়েছে এক ব্যতিক্রমী প্রতিভার সাক্ষ্য। সংস্কৃতের পাশাপাশি আরবি ভাষাতেও কোরআনের কালিমা ও সূরাগুলি সাবলীলভাবে মুখস্থ বলতে পারে এই প্রতিভাধর কিশোরী । নলবাড়ির শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা আলিয়া নাসরিন রহমান।মকিবুর রহমান ও পাপরি বেগমের জ্যেষ্ঠ কন্যা আলিয়া শুধু সংস্কৃত আর আরবিতেই দক্ষ নয়, সে সত্রীয় নৃত্য,গান, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদিতেও সমানভাবে পারদর্শী এক প্রতিভাবান কিশোরী।
বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে আলিয়া নাসরিন রহমান। তার পিতা মকিবুর রহমান ‘আওয়াজ – দ্য ভয়েস অসম’-এর সঙ্গে কথোপকথনে জানান:"আমার মেয়েকে গীতার শ্লোক শেখানোর উদ্দেশ্য হলো, আমাদের সকলেরই সম্প্রীতির পথে চলা উচিত এবং সব ধর্ম সম্পর্কে জানানো উচিত। শেখা ও পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয়। স্কুলে গীতার যেসব শ্লোক শেখানো হয়, সেগুলি আমি বাড়িতে তাকে অনুশীলন করতে দিই এবং আমিও তাকে শেখাই। আলিয়া শুধু গীতার শ্লোক পড়ে—এমন নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে আমি তাকে কোরআনের শিক্ষাও দিয়ে থাকি। মসজিদে যেসব মৌলভি বা মোক্তারের শিক্ষকরা শিক্ষা দেন, সেখানে যেতে আমি তাকে অনুমতি দিই। যদিও তার নামাজ পড়ার বয়স এখনো হয়নি, তবুও সে আমার সঙ্গে নামাজ পড়ে।”
বাবা মায়ের সাথে আলিয়া নাসরিন রহমান
মকিবুর রহমান আরও বলেন, “আমাদের মসজিদের মৌলভির কাছে আলিয়া বর্তমানে কলমা, নামাজ, রোজা এবং পবিত্রতা সম্পর্কে শিক্ষা নিচ্ছে। ভবিষ্যতে আমি তাকে সব ধর্ম সম্পর্কেও শেখাতে চাই। আলিয়ার নৃত্যের প্রতিও অনেক আগ্রহ রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই কোনো গান বাজলেই সে নাচতে শুরু করে দেয়। স্কুলের যেকোনো অনুষ্ঠানেই সে নৃত্য পরিবেশন করেছে। যদিও তাকে এখনো প্রথাগত নৃত্যশিক্ষা দেওয়া হয়নি, তবে এ বছর আমি তাকে একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়েছি, যেখানে তাকে নৃত্যের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। আলিয়া আমাদের এলাকায় অনুষ্ঠিত নানা প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়ে আসছে।”
আলিয়া নাসরিন রহমানের গীতার শ্লোক শুনে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বহু মানুষ অভিভূত হয়েছেন। মুসলিম সমাজও আলিয়ার এই প্রতিভার প্রশংসা করেছে।মকিবুর রহমান আরো বলেন, “যখন মানুষ আমার মেয়ের প্রশংসা করে, তখন খুব ভালো লাগে। মুসলিম সমাজে দু-একজন অজ্ঞ ব্যক্তি আছে, যারা তাকে কিছু সমালোচনা করেছে। এই ধরনের অজ্ঞতা দূর করতেই আমাদের শিক্ষার প্রয়োজন এবং আমাদের সবার মিলেমিশে, সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করা উচিত।”এখন পর্যন্ত আলিয়া নাসরিন রহমান বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারে সন্মানিত হয়ে তার প্রতিভার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি সে নলবাড়ি জেলার বিহানপুর কাজিপাড়া ক্লাব থেকে "শিল্পী সাধনা পুরস্কার" লাভ করেছে।
আলিয়া নমাজ আদায় করার সময়ে
অত্যন্ত অল্প বয়সেই আলিয়ার এই সাফল্যের জন্য তার পিতা মকিবুর রহমান ও মাতা পাপরি বেগমের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতেই হবে। তারা আলিয়াকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং সম্প্রীতির শিক্ষা দিয়ে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন।