পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ফুটবলার তৈরি করার কাজ করছেন দূর্গাপুরের তীর্থ চট্টোপাধ্যায়

Story by  Shanti Roy Chowdhury | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 3 d ago
পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ফুটবলার তৈরি করার কাজ করছেন দূর্গাপুরের  তীর্থ চট্টোপাধ্যায়
পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ফুটবলার তৈরি করার কাজ করছেন দূর্গাপুরের তীর্থ চট্টোপাধ্যায়
 
শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী:

মেয়েরা এখন আর পড়াশোনা আর রান্নার কাজে জড়িয়ে থাকে না। তাঁরাও খোলাধূলার মধ্যে ঝাঁপিয়ে  পড়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন। এই তো সেদিন শিলিগুড়ির মেয়ে রিচা ঘোষ ক্রিকেটে বিশ্বজয় করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এরকম আরো বহু মেয়ে খেলাধূলাকে সামনে রেখে এগিয়ে এসেছেন এবং আসছেন। 

তবে তাদেরকে প্রথম জীবনে এগিয়ে দিতে একজন না একজনের ভূমিকা থাকবেই। এখানে যার কথা বলছি তিনি হলেন দূর্গাপুরের এক সময়ের  নামী ফুটবলার তীর্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে তার প্রশক্ষিণ ক্যাম্পে শুধু মেয়েরাই নন আছে ছেলেরাও। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রায় ২০০ জন ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ফুটবল টিম গড়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। 

 
তীর্থবাবু দুর্গাপুর মহকুমার অণ্ডাল থানার উখড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইসিএলের কয়লা খনিতে চাকরি করেন। কিন্তু ফুটবল খেলা ছাড়লেও ফুটবলের প্রতি তার  ভালোবাসা যায়নি। আর এই ভালবাসা থেকেই তিনি ২০২১  সাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেও মেয়েদের নিয়ে একটি ফুটবল টিম গড়েছেন এবং তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ-সহ খেলাধুলার নানান খরচ বহন করছেন। এই টিমে শুধু এলাকার ছেলে-মেয়েই নয়, আছে পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরাও। আর তার ওই ছেলে-মেয়েরা এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে জেলা থেকে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় খেলতে যাচ্ছে। শুধু রাজ্য ও দেশের প্রতিযোগিতাতেই নয় তার দলের ছেলে-মেয়েরা মাঝে মধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিচ্ছে। 

তীর্থবাবু প্রশিক্ষণ শিবিরের মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, এখন মেয়েরা শুধু ক্রিকেটেই আগ্রহী নয়, মেয়েরা ফুটবল খেলতেও এগিয়ে আসছে। ফুটবলে মেয়েদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

তীর্থবাবু এদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ফুটবল কোচিং ক্যাম্প।ওই ক্যাম্প গড়ে উঠেছে এলাকার পুজারি ময়দানে। ক্যাম্প নির্মাণে সাহায্য করেছেন এলাকার শুভাকাঙ্ক্ষী এক ব্যক্তি। ক্যাম্পের নাম দেয়া হয়েছে উখড়া পুজারী ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। ক্যাম্পে ৫০ জন মেয়ে সহ প্রায় ২০০ জন  ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তীর্থবাবু তাঁদেরকে খেলাধুলার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম ও প্রতিদিনের খরচ নিজের পকেট থেকে দিচ্ছেন।

সাফল্যও আসছে তীর্থবাবুর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে। কলকাতা কন্যাশ্রী কাপ, দুর্গাপুর লীগ সহ আন্তর্জাতিক স্তরে স্কুল থেকে টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করেছে বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে। চার বছরে আন্ডার ১৪, আন্ডার ১৭ ও আন্ডার ১৯ এর মহিলা টিম গড়ে উঠেছে। 

তবে তীর্থবাবুর দুঃখ  পরিকাঠামোর অভাব যেমন রয়েছে তেমনি প্রায় সকলেই দুঃস্থ পরিবারের হওয়ার জন্য তাদের পুষ্টিকর খাবারদাবারের অভাব রয়েছে। সরকারি একটু সাহায্য পেলে ভালো হয়। কিন্তু তা আর মিলছে কোথায়! 
 

উখড়া পুজারী ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে তীর্থবাবুর নতুন প্রচেষ্টা 

তীর্থবাবু সম্প্রতি উখড়া পুজারী ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে একটা রেসিডেন্সিয়াল একাডেমির জন্য ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল ট্রায়াল এর আয়োজন করেছেন।রাজ্য জুড়ে ছেলে ও মেয়ে ফুটবলাররা এখানে কোচিং নিতে আসতে পারবেন। ওই ট্রায়ালে যেসব ছেলে ও মেয়ে নির্বাচিত হবে তারা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি থাকা খাওয়ার সুবিধাও পাবে।

 

নিজের চেষ্টা এবং এলাকার কিছু মানুষের সহযোগিতায় এইভাবেই তীর্থবাবু গ্রামাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়া জেলার পিছিয়ে পড়া ছেলে ও মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ফুটবলার তৈরি করছেন। তীর্থবাবু নিজের পকেট থেকে পয়সা খরচ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশ, রাজ্য ও আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবলার তৈরি করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে। ক্যাম্পে ছেলে ও মেয়েদের ভালোবাসা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ খরচায় প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য ফুটবলার গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন।