ক্রিকেট দুনিয়াতে একসময়ের সেরা খেলোয়াড় এখন তারা কেউ ড্রাইভার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কেউ বা সন্ন্যাসী!
শান্তি প্রিয় রায়চৌধুরী:
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কত রেকর্ড, নাম, খ্যাতি, কত টাকা, আরো কত কি।কিন্তু তারপর অনেককে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, কেউবা ভিন্ন কোন পথে হাঁটেন, কেউ হারিয়ে যান, কেউবা অর্থ কষ্টে বেছে নেন এমন কোন পেশা, যা ঠিক তাদের পেছনেই হাই প্রোফাইল জীবনের সঙ্গে মানায় না। টাইবু, ক্রিস কোয়েনারস, কার্ল হুপার, উপুল চন্দনা, আরশাদ খানদের বর্তমান পেশা জানলে অবাক হবেন বৈকি!
জিম্বাবুয়ের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান জিতেন্দ্র টাইবু ছিলেন লিটল ডায়নামাইট। ছোট ক্রিকেট ভূমির বড় রাজপুত্র বলা হতো তাকে। ছোটখাটো গড়নের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। দেশের ক্রিকেটের খারাপ অবস্থা দেখে অসময়ে সব ছেড়ে ছুড়ে দিলেন। তারপর পুরোপুরি ধর্মে নিবেদিত করলেন নিজেকে। ২০১২ সালের পর থেকে তাকে আর সেভাবে মিডিয়ায় সামনে দেখা যায় না। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতি তার আর আগ্রহ নেই। কোন অভাবের কারণে যারা আগ্রহ থাকলেও ক্রিকেটে এগোতে পারছে না, নিজের ক্রিকেট সরঞ্জাম সব তাদের দিয়ে দিয়েছেন টাইবু।আর নিজে চলে গেছেন সোজা পথে। বেছে নিয়েছেন সন্ন্যাস। এখন ধর্মই সব তার।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিস কোয়েনার্স তার নিজের দলের ও বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। কি কেরিয়ার ছিল তার। কিন্তু ম্যাচ ফিক্সিং এর দায় মাথায় নিয়ে কোর্ট কাচারি করতে করতে যা টাকা-পয়সা ছিল তার সব গেছে। সম্মানটা টাকা দিয়ে রক্ষা করতে পেরেছেন। মুক্তি পেয়েছেন অভিযোগ থেকে। কিন্তু সব টাকা হারিয়ে কঠিন জীবনের সঙ্গে লড়াইটা এখন খুব কঠিন তার। নিউজিল্যান্ডের বাস সেন্টার গুলোর ধুলো বালি ধোয়া মোছার কাজ করে পেট চলত তার। কিন্তু এখন তিনি জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। তার জীবনে ঘটে গেছে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে মত গুরুতর অসুখ। এর ফলে তিনি প্যারালাইজড হয়েছেন। হাঁটা চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। এরপরেই তার কন্ঠে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তিনি এখন শয্যাশায়ী।
কার্ল হুপার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলছেন তখন সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখা গেল
বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্ল হুপার। বিশ্ব ক্রিকেটে একটি পরিচিত নাম। ১৯ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক রান রয়েছে তার। কার্ল হুপার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পড়ন্ত সময়টাতেও ছিলেন দারুন উজ্জ্বল নাম। কিন্তু তিনি এখন ভুলে যাওয়া এক কিংবদন্তি। অবসরের পর ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোন ও কিছুর সঙ্গে যোগ নেই তার।সব শেষ জানা গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বউ ও ভাইদের নিয়ে একটি বার চালিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন!
শ্রীলংকার সফল বোলার উপুল চন্দনা। তিনি ছিলেন সফল বোলার। বিশেষ করে সীমিত ওভার ক্রিকেটে। তার
৪০টি ওয়ানডেতে শিকার ছিল ১৫১টি উইকেট। অবসরের পর শ্রীলঙ্কায় একটি স্পোর্টস সপ করেই তার জীবন চলছে। সেটির নাম চন্দনাস্পোর্টস শপ।
পাকিস্তানের আরসাদ খান
আর পাকিস্তানের আরসাদ খান ছিলেন পাকিস্তান দলের নির্ভরযোগ্য স্পিনার। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৬৭ টি ম্যাচ খেলেছেন। আইসিএলে গিয়ে তার কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে পাকিস্তান ক্রিকেট থেকে তার নামটাই হারিয়ে গেল। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে উবার ক্যাবের ড্রাইভার!
ম্যাথু সিনক্লেয়ারকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট মনে রাখবে। যিনি অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। খেলেছেন ৩৩টি টেস্ট ম্যাচ। করেছেন ১৬৩৫ রান। সেঞ্চুরি রয়েছে ৩টি। ৫৪ ওয়ানডে তে ২টি সেঞ্চুরি সমেত করেছেন ১৩০৪ রান। দলে অনিয়মিত হয়ে পড়ার জন্য ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে অবসর নেন। এরপর তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ভালো চাকরি না পাওয়ার জন্য একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে সেলস ম্যানের চাকরি নেন! এই চাকরি দিয়ে বেশ কষ্টের মধ্যে কাটছে তার দিন।