এবার মহিলারাও মসজিদের ভিতরে নামাজ আদায় করতে পারবেন; দারান্ধ মসজিদ কমিটির অভিনব পদক্ষেপ

Story by  Munni Begum | Posted by  Aparna Das • 5 d ago
ছয় মাইল দারান্ধ মসজিদের প্রবেশদ্বার এবং মহিলা তীর্থযাত্রীদের জন্য তৈরি প্রার্থনা কক্ষ
ছয় মাইল দারান্ধ মসজিদের প্রবেশদ্বার এবং মহিলা তীর্থযাত্রীদের জন্য তৈরি প্রার্থনা কক্ষ
 
মুন্নী বেগম/গুয়াহাটি

সাধারণত মহিলারা মসজিদের সামনে উপস্থিত থাকলেও ভিতরে ঢুকে নামাজ আদায় করার সুযোগ পান না। স্বামী, পিতা বা পুত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মসজিদের বাইরে বসেই। সমাজে প্রচলিত এক ভুল ধারণার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের প্রবেশে বাধা ছিল। তবে এখন সেই চিত্র বদলেছে। এখন থেকে মহিলারা সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত ও নিরাপদ পরিবেশে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন। কারণ মহিলাদের জন্য অস্থায়ী নামাজ ঘর নির্মাণ করেছে গুয়াহাটিস্থিত ছয়মাইল দারান্ধ মসজিদ।
 
দীর্ঘদিনের ভাবনা-চিন্তার পর এবার দারান্ধ মসজিদ কমিটি মহিলাদের জন্য অস্থায়ী নামাজ ঘর নির্মাণ করে সমাজের উদ্দেশ্যে এক ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। মহিলাদের জন্য এই ঘর নির্মাণ করে কমিটি প্রমাণ করেছে যে, ইসলামের মূল্যবোধ মহিলাদের বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ হয় না। এখন ভ্রমণকারী মহিলারা মসজিদের বাইরে অপেক্ষা না করে স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
 

এই প্রসঙ্গে দারান্ধ মসজিদ কমিটির সম্পাদক রেকিব আহমেদ বলেন, "দারান্ধ মসজিদ কমিটি এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মহিলাদের জন্য অস্থায়ী নামাজ ঘর তৈরি করেছে। অনেক দিন ধরেই আমাদের কমিটি এ বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছিল। কারণ প্রায়ই দেখা যেত দূরদূরান্ত থেকে বহু ভ্রমণকারী মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাঁদের স্ত্রী, কন্যা বা মা নামাজের সময় বাইরে, রাস্তায় বা গাড়ির ভিতরে বসে থাকতে বাধ্য হতেন। মসজিদের সামনে থেকেও তাঁরা নামাজ পড়তে পারতেন না, তা খুবই খারাপ দেখাতো। তাই আমরা মসজিদের একটি অংশ ভেঙে ভ্রমণকারী মহিলাদের জন্য অস্থায়ী নামাজ ঘর তৈরি করেছি। এই পদক্ষেপ সামাজিক প্রয়োজন পূরণ করার পাশাপাশি আমাদের সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনেরও নতুন পথ খুলে দেবে।"
 
এই নামাজ ঘরটি চলতি বছরের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের আর্থিক অনুদানেই এটি নির্মিত হয়েছে। সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে নির্মিত এই ঘরে সব ভ্রমণকারী মহিলা এসে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
 
দারান্ধ মসজিদ কমিটির সদস্য এবং মসজিদের ইমাম
 
আহমেদ বলেন, "নামাজ ঘর নির্মাণের জন্য জামাতের সদস্য ও স্থানীয় মানুষজন অর্থ সাহায্য করেছেন। ঘরের প্রবেশদ্বার মসজিদের মূল প্রবেশদ্বার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়া মহিলাদের সুবিধার্থে আলাদা অজুখানা ও শৌচাগারও নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা নিশ্চিন্তে নিরাপদ পরিবেশে নামাজ আদায় করতে পারেন।"
 
আগামীতে মসজিদ কমিটি একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বলেও আহমেদ জানান। তিনি বলেন, "আমরা একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি করার পরিকল্পনা করছি। যেখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান ও স্কুল শিক্ষার প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যাবে। লাইব্রেরিটি সব ধর্মের মানুষের জন্য খোলা থাকবে, যাতে সবাই এখানে এসে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন।"
 
ইসলামের মূল্যবোধের সুদূরপ্রসারীতা এবং ন্যায়-সমতার ধারণা বাস্তব রূপ পেল দারান্ধ মসজিদের প্রাঙ্গণে। মহিলা ভ্রমণকারীদের জন্য পৃথক নামাজ ঘর নির্মাণ করে কমিটি শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব পালনই করেনি, বরং প্রমাণ করেছে যে মহিলারা সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
 
মহিলা তীর্থযাত্রীদের জন্য নির্মিত একটি পৃথক প্রার্থনা কক্ষের অভ্যন্তর
 
এই পদক্ষেপ প্রসঙ্গে মসজিদের ইমাম বলেন, "সাধারণত মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, মহিলারা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে শরীয়তে মহিলাদের উপর এ রকম কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মহিলারাও মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রায়ই নামাজের সময় অনেক ভ্রমণকারী মহিলা আমাদের মসজিদে নামাজ পড়ার জায়গা খুঁজতে আসতেন এবং তখন আমরা সমস্যায় পড়তাম, কারণ আমাদের মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো জায়গা ছিল না। কিন্তু উপায় না থাকায় আমরা মসজিদের ভেতরে সামান্য অস্থায়ী জায়গা দিতাম। আমরা বারবার এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। তাই মসজিদ কমিটি বহু আলোচনার পর ভ্রমণকারী মহিলাদের জন্য অস্থায়ী নামাজ ঘর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইতিমধ্যেই বহু মহিলা এসে এই ঘরে নামাজ আদায় করেছেন।"
 
মসজিদের ইমাম সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমাদের সমাজে প্রচলিত সংকীর্ণ মানসিকতাকে বদলাতে হবে। মহিলারা আমাদের সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামের মূল্যবোধ এতটা সংকীর্ণ নয়, এটি এক বিশাল সাগরের মতো। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক বিস্তৃত। তাই আমি মনে করি, সব মসজিদেই মহিলাদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।"