সিডনির বন্ডি ট্র্যাজেডি: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতে ৫.৫ লক্ষ মসজিদে একযোগে দোয়া

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 5 h ago
অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান ইমাম ড. ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসি
অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান ইমাম ড. ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসি
 
নয়াদিল্লি

অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান ইমাম ড. ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসি ঘোষণা করেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সমুদ্রতীরবর্তী শহর বন্ডিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে আগামী শুক্রবার ভারতের ৫.৫ লক্ষ মসজিদে মুসলিমরা বিশেষ দোয়া করবেন। ওই হামলায় দুই বন্দুকধারীর গুলিতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়।
 
এএনআই-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এই ঘটনার নিন্দা করার জন্য কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়। নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হত্যাকারীরা ছিল শয়তান, কিন্তু যিনি মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন মুসলিম। ইসলাম মানে জীবন রক্ষা করা, জীবন নেওয়া নয়।
 
আজ ইসলামের নামে উগ্রপন্থা ছড়ানো হচ্ছে এবং ইসলামের নাম ব্যবহার করেই সন্ত্রাসী সংগঠন কাজ করছে। তাই এখন সময় এসেছে উগ্রপন্থার অবসান ঘটানোর এবং সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার।” ইলিয়াসি আরও বলেন, আগামী শুক্রবার ভারতের ৫ লক্ষ ৫০ হাজার মসজিদে নিহত নিরপরাধ মানুষের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা হবে। তিনি বলেন, “মানবতাই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম।”
রবিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে হনুক্কা উৎসব চলাকালীন সংঘটিত গণগুলিবর্ষণে অন্তত ১৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংগঠন ও নেতারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
 
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল এই হামলাকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দিয়ে নিহতদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতি প্রার্থনা ও সমর্থন জানিয়েছে। কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি এমন এক সময়, যখন অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়সহ সকল অস্ট্রেলিয়ানকে ঐক্য, সহমর্মিতা ও সংহতির সঙ্গে একত্রিত হতে হবে।”
 
অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় নিহত সন্ত্রাসীর দাফনে অংশ নিতে অস্বীকার করেছে বলেও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক ইসলামি সংগঠন মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে একে “সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের সমাবেশ লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলা” বলে অভিহিত করেছে। সংগঠনের মহাসচিব মোহাম্মদ বিন আবদুলকরিম আল-ইসা বলেন, মুসলিমরা “সব ধরনের সন্ত্রাস ও হিংসা প্রত্যাখ্যান করে।”
সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রক এই ঘটনাকে “সন্ত্রাসী হামলা” বলে নিন্দা জানিয়ে সব ধরনের “হিংসা, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার” বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও একই সুরে একে “অপরাধমূলক কাজ” বলে অভিহিত করে নিহতদের পরিবার ও অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। জর্ডানের বিদেশ মন্ত্রক অস্ট্রেলিয়ার প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত “সব ধরনের হিংসা ও সন্ত্রাসবাদ” প্রত্যাখ্যান করেছে।
 
ফিলিস্তিনের বিদেশ মন্ত্রকও এই গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী সব ধরনের হিংসা, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ় অবস্থান” পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে। তারা “বন্ধু রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া”-র প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছে।
 
 
 
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে হনুক্কার প্রথম দিনে সংঘটিত এই হামলায় ১৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুই সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর একজনও রয়েছে, এবং ৪২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনরা হলেন ৫০ বছর বয়সি সাজিদ আক্রম ও তাঁর ২৪ বছর বয়সি ছেলে নাভিদ আক্রম। ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
 
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ প্রথমে বন্ডি বিচ হামলাটিকে ইহুদি-বিরোধী বলে উল্লেখ করলেও পরে তা সংশোধন করে বলেন, এটি “আইএসআইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী হামলা।” এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা অস্ট্রেলিয়ার প্রতি শোক ও সংহতি প্রকাশ করেছেন।