হায়দ্রাবাদ:
এআইএমআইএম সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সোমবার বলেছেন,জোরপূর্বক ‘বন্দে মাতরম’চাপিয়ে দেওয়া সংবিধানবিরোধী।লোকসভায় ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণকালে হায়দ্রাবাদ সংসদ সদস্য স্পষ্ট করে বলেন যে, ‘বন্দে মাতরম’ গানকে দেশপ্রেমের মানদণ্ড হিসেবে ধরা যায় না।
তিনি বলেন, “ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে এবং স্বাধীন থাকে কারণ আমরা রাষ্ট্রকে ধর্মের সঙ্গে মিশাইনি। যদি ‘বন্দে মাতরম’-কে দেশপ্রেমের পরীক্ষার মানদণ্ড বানানো হয়, তবে তা মহাত্মা গান্ধী, অম্বেদকর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ চন্দ্র বসু এবং লাখ লাখ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ ত্যাগ করে গডসে ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শ গ্রহণের সমতুল্য হবে।”
ভারতকে বিভিন্ন ফুলের বাগানের সঙ্গে তুলনা করে তিনি সতর্ক করেন, “যদি একজন মালী শুধু একটি ফুল ফুটাতে চায়, তাহলে বাগানটি মরুভূমিতে পরিণত হবে এবং সেই মালী ‘জল্লাদ’ (ফাঁসির দায়িত্বপ্রাপ্ত) হয়ে যাবে।”
ওয়াইসি বলেন, ইসলামের মূলনীতি হল ‘তাওহীদ’ (আল্লাহর একত্ব), এবং সংবিধানের ২৫তম অনুচ্ছেদ মুসলিমদের এই অধিকার প্রদান করেছে। তিনি সতর্ক করেন যে চিন্তাভাবনা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা পরিত্যাগ করা বিপজ্জনক।
তিনি আরও পরিষ্কারভাবে বলেন, মুসলিম হওয়া তাদের দেশপ্রেমকে সীমাবদ্ধ করে না।“মুসলিম হওয়া আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসাকে বাধাগ্রস্ত করে না। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি এবং সবসময় ভালোবাসব,” তিনি বলেন এবং মন্তব্য করেন, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ ছিলেন না তারা অন্যকে দেশপ্রেম শেখানোর চেষ্টা করলে তা ভুল হবে।
তিনি বলেন, “মসজিদে, বাড়িতে, আমাদের পোশাক ও ব্যবসায় হামলার পরও আমরা এই দেশকে ভালোবাসি এবং কখনো ছাড়ব না।”
বিতর্ক চলাকালে দেওয়া বকতাগুলোতে ত্রুটি খুঁজে পেয়ে ওয়াইসি বলেন, দেশপ্রেমের মানদণ্ড হলো দমন, দারিদ্র্য, শোষণ ও বেকারত্ব দূর করা, শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা।
তিনি বলেন, “যদি আপনি ভারতকে দেবী বলেন, তাহলে আপনি জাতীয়তা ও দেশপ্রেমকে ধর্মে পরিণত করছেন। এখানে বলা হয়েছে যে, ভারতবর্ষে বসবাস করতে হলে ‘বন্দে মাতরম’ আবৃত্তি করতে হবে। এটি সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধ।”
ওয়াইসি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতির সমালোচনা দিয়ে। তিনি বলেন, “আমরা জিন্নার কঠোর বিরোধী ছিলাম, এবং তাই আমরা ভারতকে আমাদের দেশ হিসেবে গ্রহণ করি। ১৯৪২ সালে, আপনার প্রিয় বীর এবং জিন্নার দলের জোট সরকার নর্থওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার, বেঙ্গল ও সিন্ধে ছিল, এবং তারা ১.৫ লাখ হিন্দু ও মুসলিমকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।”
এআইএমআইএম সভাপতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর বক্তৃতারও কঠোর সমালোচনা করেন এবং ‘উম্মুল মুমিনীন’ ও ‘উম্মুল কিতাব’-কে নিয়ে তাঁর মন্তব্যকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, “উম্মুল মুমিনীন আমাদের নবীর স্ত্রী। আমরা তাকে আমাদের মা হিসেবে মনে করি, কিন্তু আমরা তার উপাসনা করি না। আমরা আমাদের মায়েরও উপাসনা করি না। উম্মুল কিতাব কোরআন, কিন্তু আমরা কোরআনেরও উপাসনা করি না।”
তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান ‘আমরা জনগণ’ দিয়ে শুরু হয়েছে, ‘ভারত মাতার’ দিয়ে নয়। সংবিধানের প্রস্তাবে চিন্তাভাবনা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যখন সংবিধানের প্রথম পাতাই চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করছে, তখন কীভাবে কোনো নাগরিককে কোনো দেবতা বা দেবীর উপাসনা করতে বা সন্মানসূচক প্রণাম দিতে বাধ্য করা যেতে পারে?”