এলভিস আলী হাজরিকার পরিবার ভারতীয় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির জীবন্ত উদাহরণ

Story by  Imtiaz Ahmed | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 4 d ago
ভারতীয় প্রখ্যাত সাঁতারু এলভিস আলী হাজরিকা
ভারতীয় প্রখ্যাত সাঁতারু এলভিস আলী হাজরিকা
ইমতিয়াজ আহমেদ , গুয়াহাটিঃ
 
অসমের প্রখ্যাত সাঁতারু এলভিস আলী হাজরিকা এবং তার পরিবার সম্প্রতি গুয়াহাটিতে তাদের বাড়ি সাজানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। এটি কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠান বা ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুতি নয়।  দীপাবলির উৎসব উপলক্ষে সে তার বাড়ি সাজিয়ে তোলে।

জন্মসূত্রে সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারী না হলেও এলভিস এবং তার পরিবার মুসলিম এবং হিন্দু উভয় ধর্মের সব উৎসব আনন্দ-উল্লাসের সাথে পালন করে। প্রকৃতপক্ষে, এলভিছ একাধারে একজন ভক্তিময় মুসলিম, আবার মা কামাখ্যা দেবী এবং বগলামুখী দেবীরও ভক্ত।
 
বিশ্বের তিনটি বড় চ্যানেল,ইংলিশ চ্যানেল, নর্থ চ্যানেল, এবং কেটালিনা চ্যানেল সাঁতরে পার হওয়া এলভিছ আগামী বছর ইংলিশ চ্যানেল তিনবার সাঁতরানোর জন্য দেবী-দেবীদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
 
এলভিছ 

এলভিস আলী হাজরিকার পরিবার

 

এলভিস আলী হাজরিকার ধর্মীয় বিশ্বাসের উদারতা

এলভিস আলী হাজরিকা এবং দীপিকা আলী হাজরিকার নামের আন্তঃধর্মীয় দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করা এলভিছ আলী হাজরিকা শৈশব থেকেই এক উদার পরিবেশে বড় হয়েছিলেন, যা তাকে তার পছন্দের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছিল। এবং, ঠিক তেমনি তিনি তার পুত্র প্রেসলিকো একই শিক্ষা দিয়েছেন। বহু অভিলেখের অধিকারী সাঁতারু এলভিস একে সময়ে একটি উদার হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া কন্যা প্রণামীকাকে তার জীবনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

“হ্যাঁ,আমি জন্মসূত্রে মুসলমান। নবীর সব শিক্ষা পালন করি। আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই, কবরস্থানে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্য প্রার্থনা করি, রমজানে রোজা রাখি, দানদি করি এবং অন্যান্য সব ইসলামিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিই। কিন্তু, একই সময়ে আমি হিন্দু ধর্মকেও সমান শ্রদ্ধা করি এবং মা কামাখ্যা ও মা বগলামুখীর আশীর্বাদে বিশেষ শক্তি রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। মন্দিরে প্রনাম করি। এটি আমাকে অপরিসীম আধ্যাত্মিক শান্তি এবং পূর্ণতা প্রদান করে।”  এলভিস 'আওয়াজ  দ্য ভয়েসকে' এই এভাবে বলেন।

“একইভাবে আমার স্ত্রীও রোজা রাখে এবং রমজানে আমরা রোজাদার মুসলমানদের জন্য ইফতার আয়োজন করি। আমাদের মসজিদের ইমাম প্রতি শুক্রবার আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের মঙ্গল কামনা করে এবং আমাদের পরিবারের সঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। আমরা আমাদের বাড়িতে নাম (নব বৈষ্ণবী অনুষ্ঠান)ও আয়োজন করি। আমি আমার পুত্র প্রেসলিকো একই ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা দিয়েছি, যাতে সে আমার মতো মানবিক পরিবেশে বড় হতে পারে।”  তিনি জানান।এলভিস আলী হাজরিকার ধর্মীয় বিশ্বাস ও দীপাবলীর ভাবনা ।
 

মা কামাখ্যা ধামে সপরিবারে  এলভিস আলি হাজারিকা
 
তার মা এবং স্ত্রী প্রণামি নববৈষ্ণবী প্রথায় বিশ্বাসী, যা মূর্তির সামনে পূজা করেন না। তবে, এলভিছের মতো প্রণামি মন্দিরে সেবা করেন এবং বগালামুখী মন্দিরে পূজা-অর্চনা প্রদান করেন।

“দুটি বা তারচেয়ে অধিক ধর্মের সম্মান করা বা অনুসরণ করাতে কী ভুল থাকতে পারে, যদি আপনি এটি যৌক্তিক মনে করেন? আসলে আমরা সবাই মানুষ। ধর্ম শুধুমাত্র একটি জীবন-ধারণের পদ্ধতি।”  এলভিস বলেন।

তাঁর পরিবার বা বন্ধুমহলে তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর দ্বি-ধর্ম অনুসরণে কোনো আপত্তি আছে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে এলভিছ বলেন, “আমাদের দুই পক্ষের সমাজই আমাদের জীবনশৈলীর প্রতি অত্যন্ত সমর্থন দেখায়। তবে, আমার বন্ধুরা মাঝে মাঝে আমার হিন্দু দেবীদের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে। তবে, সেটা আমাদের জন্য কোনো গুরুত্বের বিষয় নয়। মানুষ আমি আমার ব্যক্তিগত পছন্দ।”
 

পরম্পরাগত অসমীয়া পোশাক পরিধানে  এলভিস পরিবার
 
তিনি তাঁর দীপাবলী সম্পর্কে দক্ষ সাঁতারু এলভিস বলেন, “দীপাবলী এখন আর শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় প্রতিটি ভারতীয় দীপাবলীতে আনন্দ করে। এটি প্রতিটি ভারতীয়র জন্য এক উৎসব। বিশেষ করে অসমের প্রায় সব মুসলিম এবং খ্রিষ্টান মানুষও দীপাবলী পালন করেন। এই আলো ও আনন্দের উৎসব আমাদের জীবনে সতেজতা এবং নতুন শক্তি নিয়ে আসে।”

এলভিস আলী হাজরিকার পরিবেশের প্রতি সচেতনতা এবং দীপাবলীর উদযাপন।এলভিস আরও বলেন ,"যে তিনি পরিবেশের প্রতি যত্ন নেন এবং তাই আতশবাজি ফোটানোর পক্ষে সমর্থন করেন না। তিনি দীপাবলিকে একটি বাজি এবং ধোঁয়ার উৎসব হিসেবে নয়, বরং একটি আলো এবং আনন্দের উৎসব হিসেবে উদযাপন করতে সকলকে আহ্বান জানান ।"
 
এলভিস আরো বলেন, "আমি নিশ্চিতভাবে সবসময়ই মন্দিরে প্রণাম করব এবং দীপাবলী উৎসব যতটা সম্ভব পরিবেশ-বান্ধবভাবে উদযাপন করব।"