অসমের মুসলিম মেয়ের মার্শাল আর্ট থেকে সেরা ভারতীয় প্রশিক্ষক হয়ে উঠার দৃষ্টান্ত

Story by  Sudip sharma chowdhury | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 10 d ago
সবনম বেগম
সবনম বেগম

সুদীপ শর্মা  চৌধুরী,গুয়াহাটিঃ


প্রতিকুল পরিবেশ থেকে উঠে আসা ২৫ বছরের তরুণী, আজ সবার অনুপ্রেরণার এক অনন্য উদাহরণ ।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি আজ বদলে দিয়েছে সমস্ত ধ্যানধারণা। ২৫ বছর বয়সেই সে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে উঠেছে সকলের চোখের মণি হয়ে। একসময় যে নাম কেউ জানত না, আজ সেই নামটি অনেকের মুখে মুখে। তারই অনুপ্রেরণায় অনেকে সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্রী নিজেকে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে লড়াই করে বাঁচার রসদ ও পেয়েছে হাতের মুঠোয়।

এই তরুণীর বেড়ে ওঠা এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে, যেখানে  সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এক চ্যালেঞ্জ ছিল ,মুসলিম মেয়েদের এগিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু তার বাবা-মায়ের নিরলস পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ফলে  আজ সফলতা তাঁদের কুর্নিশ জানাচ্ছে। ছোটবেলায়  ঠিক-ঠাক  শিক্ষার খোঁজে বাবা-মা তাকে নাম লিখিয়ে দেয় ঘরের পাশের ব্যাক্তিগত  স্কুল।সেই স্কুল সাউথ পয়েন্ট স্কুল-এর শিক্ষক- শিক্ষিকাদের অনুপ্রেরণা সবকিছু মিলে গড়ে তুলেছে তাঁর এই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
আজকের দিনে, যখন সমাজে  অনেক তরুণী আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে, তখন এই মেয়েটির জীবনযাত্রা তাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার জীবন্ত উদাহরণ।

 পিছিয়ে পড়া সমাজের মধ্যে থেকেও কিভাবে একজন মানুষ কঠোর পরিশ্রমের পথ বেছে নিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে, তাঁর প্রমাণ সে নিজে। এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয় এটি একটি বার্তা সাহস, শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো পথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় স্বপ্নের ঠিকানায়।মাত্র ২৫ বছর বয়সে, সেই মেয়েটির এই অভাবনীয় সাফল্যের কাহিনি সত্যিই সকলের অনুপ্রেরণার উৎস।

আজ গুয়াহাটি  মহানগরের গর্ব তিনি সবনম বেগম। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই যিনি হয়ে উঠেছেন শিক্ষায়, খেলাধুলায় ও সমাজসেবায় এক অনন্য উদাহরণ। সবনমের বাবা আব্দুল হাসান ও মা রেশমি হাজরিকা শুরু থেকেই চাইতেন মেয়েকে ভালো শিক্ষার সুযোগ দিতে। সেই কারণে সবনমকে ভর্তি করানো হয় ইংরেজি মাধ্যমের South Point School-এ। এখান থেকেই তিনি ২০১৬ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ২০২১ সালে কটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতক এবং ২০২৪ সালে প্রাগজ্যোতিষ কলেজ (গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

 খেলাধুলায় সাফল্যের দৃষ্টান্ত

 চতুর্থ শ্রেণি থেকে মার্শাল আর্ট তায়কোয়ান্দো  চর্চা শুরু করেছিলেন সবনম। আজ তিনি একজন ৩ ডান ব্ল্যাক বেল্টধারী, জাতীয় রেফারি, এবং "সেরা রেফারি"্র পুরস্কারজয়ী। ঝুলিতে রয়েছে ২টি স্বর্ণপদক।
 

 সবনম জাতীয় রেফারির আসরে

নারী ক্ষমতায়নে অগ্রণী

নিজের উদ্যোগে সবনম আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ জন সরকারি স্কুলের ছাত্রীকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসী ও সাবলম্বী করে তুলেছেন। তার এই অবদানকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সম্মানিত করেছে।

 অর্জন একের পর এক: পালক জুড়েছে তাঁর সমৃদ্ধির পথে এনসিসি-তে C Certificate হোল্ডার।

২০১৭ সালে দিল্লিতে Republic Day Parade-এ অংশগ্রহণ সেখানে সবনম নর্থ ইস্ট কমান্ডার ছিলেন

কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে Yoga Protocol Training গ্রহণ করে যোগব্যামে পারদর্শী হয়ে উঠেন ।

অসম পুলিশের চতুর্থ বেটেলিয়ানে পিস্তল  শুটিঙের  প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন এবং ফিটনেস ট্রেনিংয়ে  পরীক্ষায় দক্ষতা অর্জন করে আজ সে মহানগরে ফিটনেস প্রশিক্ষক।এতো সব করার পর ও সবনম নিজেকে তাঁর কঠোর পরিশ্রম করে অর্জন করা সফলতা ভাগ করে নিতে পরিকল্পনা করছেন । সবনম গুয়াহাটি  মহানগরের তায়কোয়ান্দো একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন যেন সব মেয়েরা মার্শাল আর্ট তায়কোয়ান্দোর  চর্চার পাশাপাশি নিজেদের বিপদে নিজেরাই লড়তে শিখেন । 

তবে সবনমের স্বপ্ন রয়েছে:

পুলিশ অফিসার হওয়ার সাধারণ শ্রেণির মেয়ে হিসেবে পুলিশে যোগ দেওয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও সবনম বিশ্বাস করেন উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, তাহলে কঠিন কিছুই নয়।তাঁর এই বাক্তিগত চাওয়া পাওনার ছেয়ে তিনি নিজেকে সব সময় অন্যের জন্য ব্যস্ত রেখে বাস্তবিক অর্থে তিনি সমাজের এক রক্ষক হয়ে পড়েছেন । আওয়াজ দ্য ভয়েস কে তিনি জানান,"আমি চাই সমাজের মেয়েরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাক, সমাজের ভালোর জন্য কাজ করুক।"