শতানন্দ ভট্টাচার্য
একজন মসজিদের ইমামের উপস্থিত বুদ্ধি ও তৎপরতায় নিশ্চিত জলে ডুবে মৃত্যু থেকে বাঁচলেন সাত জন মানুষ এবং এরপরই সেই ইমাম স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে হয়ে পড়েছেন 'মানবতার প্রতীক'। এই শব্দেই তিনি এখন পরিচিত। এই ঘটনা জনসমক্ষে আসতেই অসম এবং ত্রিপুরা দুটো রাজ্যেই ব্যাপক চর্চা লাভ করেছে জনগণের মধ্যে এবং ডেনিজেন্সরা ইমামের বুদ্ধিমত্তাকে স্যালুট জানাচ্ছেন।
ঘটনাটি অসম-ত্রিপুরা সংযোগকারী ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে থাকা শ্রীভূমি জেলার নিলামবাজার এলাকার। সোমবার ভোর চারটের সময় ত্রিপুরার দিক থেকে আসা একটি এস ইউ ভি বাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি গভীর জলাশয়ে পড়ে যায়। গাড়ির ভেতরে সবাই ঘুমুছিলেন। জলাশয়টি বরবাড়ি জামে মসজিদের কাছেই ছিল। শীতের কুয়াশাছন্ন ভোরে সবাই ঘুমে থাকলেও গাড়িটি ভীষণ শব্দে জলাশয়ে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই মসজিদের ইমাম আব্দুল বাছিতের ঘুম ভেংগে যায়। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখতে পান একটি গাড়ি জলে ডুবে যাচ্ছে আর দরজা খুলতে না পেরে যাত্রীরা প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ইমাম আব্দুল বাছিত হতবুদ্ধি হয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন তাঁর পক্ষে একা এদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতরে গিয়ে মাইকযোগে গ্রামবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ইমামের কথা শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং উদ্ধারের জন্যে জলে নেমে পড়েন। ইমাম নিজেও গলাজল অব্দি নেমে দরজা খুলে চালকসহ যাত্রীদের উদ্ধার করেন। সামান্য সময় দেরি হলে পুরো গাড়িটি জলের তলায় চলে যেত। ইমামের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অক্ষত অবস্থায় সবাইকে বের করে নিয়ে আসেন জল থেকে।
"সবযাত্রীই হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিলেন কিন্তু উদ্ধারকারীরা কিন্তু ছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের। এতেই প্রমাণিত মানবতার কোন নিদ্রিষ্ট কোন ধর্ম নেই, জাত নেই, বর্ণ নেই কিন্তু কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যেই মানুষে মানুষে বিভেদের সৃষ্টি করেন"। এরকমই মন্তব্য করেন বরবাড়ির এক বৃদ্ধ সামসুল হুদা।
ইমাম আব্দুল বাছিতের মানবতার কাজের জন্য গ্রামবাসীদের তরফে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান
ইমাম আব্দুল বাছিত এই ঘটনায় এখনো মানসিক চাপ সামলে উঠতে পারেননি। তাঁর উপর যেন এক ঝড় বয়ে গেছে। নিজেই জানালেন যে তিনি যাত্রী ও চালককে নিরাপদে জলের উপর নিয়ে আসাটাই তখন তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এত ঠান্ডা, অন্ধকার কুয়াশা কিছুই গ্রামবাসীরা পরোয়া করেন নি কারণ ইমামের মানবিক আবেদন ছিল। আব্দুল বাছিত জানান মানব জীবন শুধু নিজের জীবনের জন্যে নয়, অন্যকে ভালো রাখা, অন্যকে জীবনদান করা, সুরক্ষিত রাখাই হচ্ছে প্রকৃত স্বার্থক জীবন।