শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী
১ অক্টোবর বিশ্ব জুড়ে 'আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে ১৯৯০ সাল থেকে। প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য 'লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড প্রমোটিং আ সোসাইটি ফর অল' - বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় 'থাকব না কেউ পেছনে, গড়ব সমাজ একসনে'।
পৃথিবী জুড়ে জনসংখ্যা আবর্তনের যে জোয়ার পরিলক্ষিত হয়েছে গত শতাব্দীতে, এমনকি এ শতাব্দীতেও, এর ফলস্বরূপ জনসংখ্যার গঠন ও বিন্যাসে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। আর এর প্রভাবও পড়েছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। পৃথিবী তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশাল প্রবীন জনগোষ্ঠী নিয়ে এগিয়ে চলছে। সুতরাং পৃথিবীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রবীনদের যথার্থ একটি নতুন শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা
সমীচীন।
জাতিসংঘের সূত্র মতে, বর্তমান পৃথিবীর ৬০০ মিলিয়ন অধিবাসীর বয়স ৬০ বছরের ওপর, ২০২৫ সালে এই সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ এবং ২০৫০ এ গিয়ে এই সংখ্যা দু বিলিয়ন অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, এই দুই বিলিয়নের আশি শতাংশই হবেন উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী।
প্রতীকী ছবি
কেন পৃথিবীতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে?
বর্ধিত আয়ুষ্কালের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকেl বর্ধিত গড় আয়ু নিঃসন্দেহে উন্নয়নের সাফল্য নির্দেশ করে। যে দেশে মানুষের গড় আয়ু যত বেশি, সে দেশ তত বেশি উন্নত বলেই ধরে নেওয়া হয়।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশ, এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোও গত শতাব্দীতে গড় আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে এবং এ লক্ষ্যে নিরলস কাজও করে যাচ্ছে। কিন্তু আয়ুস্কালের উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠী নিয়ে আমাদের ভাবনা কি, আমরা কতটুকু প্রস্তুত তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদা মেটাতে, এ বিষয়ে আরো অনেক বেশি কাজ করতে হবে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিমন্ডলে।
বলে রাখা ভালো যে, বর্তমান পৃথিবীর ১৮০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীরই বাস দারিদ্র্যের সঙ্গে, দারিদ্র পীড়িত উন্নয়নশীল দেশে।এদের বড় অংশের বাস আমাদের দেশে। বর্তমান ভারতের ৭ শতাংশ অর্থাৎ ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষের বয়স ৬০ বছরের উপর এবং ২০৫০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনে একজন হবেন প্রবীণ।
সরকার নিঃসন্দেহে প্রবীণ হিতৌষী। তাই সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্বেও বয়স্ক ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখছে প্রতিবছর। যদিও এই বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু আমাদের উপরিকাঠামো কতটা প্রবীণ বান্ধব?
জীবনের পড়ন্ত বেলায় তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, সম্মানজনক সামাজিক অবস্থান, সবই যেন দুরাশা, গ্রাম কেন্দ্রীকতা থেকে হঠাৎ শহরকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা এই দেশে মধ্যবিত্ত প্রবীনদের জায়গা খুপড়ির মতো ফ্লাট বাড়ির নামমাত্র বারান্দার ইজি চেয়ারে। প্রবীনদের জন্য কটা পার্ক, মাঠ, হাঁটার জায়গা, সামাজিক যোগাযোগের সংযোগস্থল গড়ে দিতে পেরেছি আমরা কিংবা আমাদের সরকার? চিকিৎসা ব্যয়, বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক প্রাইভেট বিশেষায়িত হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা ব্যয় এ সরকারের কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আছে তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়ে যায়।