১৫০ বছর বাঁচা—কল্পনা, না কি বিজ্ঞানসম্মত সম্ভাবনা?

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 26 d ago
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি

সুদীপ শর্মা চৌধুরী,গুয়াহাটি

২০২৫ সালের ৩–৫ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে এক সরকারি অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের “হট-মাইক” কথোপকথনে মানুষ ১৫০ বছর বাঁচতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। কথায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন, বায়োটেক ও “অমরত্ব” নিয়েও ইঙ্গিত ছিল, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। 
 
বর্তমান বাস্তবতা—মানুষ আসলে কতদিন বাঁচে?
 
সর্বোচ্চ নথিভুক্ত আয়ু: ফ্রান্সের জ্যাঁ কালমঁ (Jeanne Calment) – ১২২ বছর (১৯৯৭ সালে মৃত্যু)। এখনো এটিই যাচাইযোগ্য রেকর্ড। 
 
 গড় আয়ু (উদাহরণ):
 
নরওয়ে: ২০২৫ সালে আনুমানিক ৮৩.২ বছর (দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় স্থিতিশীল/উচ্চ)। 
 
জাপান (শতবর্ষী): ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর নাগাদ ৯৫,১১৯ জন শতবর্ষী—টানা ৫৪ বছর ধরে বৃদ্ধি; নারীদের অনুপাত বেশি। 
 
স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ আয়ু (HALE), নরওয়ে উদাহরণ: ২০০০ থেকে ২০২১—প্রায় ৩.৩ বছর বৃদ্ধি (৭১.২ বছরে পৌঁছায়)। 
 
সারকথা: গড় আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, কিন্তু সর্বোচ্চ মানব-আয়ু (১২২+) এখনো অতিক্রম করা যায়নি—এটা বহু বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণ। 
 
 বিজ্ঞান কী বলছে—দীর্ঘায়ুর প্রধান গবেষণা ধারা
 
 পার্শিয়াল রি-প্রোগ্রামিং (Yamanaka factors/OSK):
 
প্রাণীতে বয়সজনিত ক্ষয় আংশিক উল্টানো ও আয়ু-প্রসারণের প্রমাণ মিলছে; ভাইরাল-জিনথেরাপি দিয়ে বয়স্ক ইঁদুরে উল্লেখযোগ্য আয়ু বাড়ার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে (প্রোটোকল: ডক্সিসাইক্লিন সাইক্লিং ইত্যাদি)। তবে মানুষে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা এখনো প্রমাণাধীন। 
 
 সেনোলাইটিকস (বার্ধক্য কোষ অপসারণ):
ডাসাটিনিব+কুয়েরসেটিনের মতো ককটেল প্রাণীতে বার্ধক্য-সম্পর্কিত কার্যকারিতা উন্নত করেছে; ২০২৫ সালে মানব-পাইলট গবেষণায় চলাফেরা/জ্ঞানগত সূচকে অগ্রগতির প্রাথমিক ইঙ্গিত—তবে বড়, দীর্ঘমেয়াদি ট্রায়াল দরকার। 
 
 মেটফর্মিন (TAME ট্রায়াল):
 
৬৫–৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বহুরোগ-উদ্ভব বিলম্বিত হয় কি না তা যাচাইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু-কেন্দ্রিক ট্রায়াল পরিকল্পিত। এটি বার্ধক্যকে চিকিৎসাযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে দেখার পথ তৈরি করছে; পূর্ণ তহবিল/অগ্রগতি সময় নিলেও লক্ষ্য স্পষ্ট। 
 
 পুষ্টি, জীবনযাপন ও প্রিভেনশন:
জাপান/নরওয়ের উদাহরণে উচ্চ স্বাস্থ্যসেবা-প্রাপ্তি, সুষম খাদ্য (মাছ, সবজি), নিয়মিত শারীরিক সক্রিয়তা, কম ধূমপান, সামাজিক সংযোগ, এসবই শতায়ুর পেছনে বড় চালক। (উপরের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য দেখুন।) 
 
১৫০ বছরের সম্ভাবনা—বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশ
 
এখন পর্যন্ত প্রমাণ: ১২২ বছরের রেকর্ড অক্ষত; ১৫০ কেবল সম্ভাবনা/অপ্টিমিজম—পাকা ক্লিনিকাল প্রমাণ নেই। 
 
কী দরকার?
 
ক) বহুগুণ ঝুঁকি-কারক (হৃদরোগ, ক্যান্সার, নিউরোডিজেনারেশন) একইসাথে দমনে ব্রেকথ্রু থেরাপি
 
খ/ নিরাপদ ও রিভার্সেবল জিন/কোষীয় পুনর্গঠন (reprogramming)
 
গ/ সেনোলাইটিকস ও ইমিউন-রিজুভেনেশনকে মানুষের বড় ট্রায়ালে কার্যকর প্রমাণ
 
ঘ/ সামাজিকভাবে প্রাপ্য প্রিভেনটিভ কেয়ার-এর বিস্তার
 
বিশেষজ্ঞমত (সামগ্রিক): “গড় আয়ু” বাড়ানো সম্ভব, কিন্তু “সর্বোচ্চ আয়ু” ১২০–১২৫ বছরের জৈবিক সীমা ভাঙা কঠিন, এমন সতর্ক মত প্রচলিত। 
 
 নীতিগত/সামাজিক প্রশ্ন
 
১৫০ বছরের সম্ভাবনা সত্যি হলে পেনশন, কর্মবাজার, প্রজন্ম-সমতা, স্বাস্থ্যব্যয়, সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে। এই বিতর্কই শি–পুতিনের হট-মাইক কথোপকথনের পর নতুন করে সামনে এসেছে। 
 
 এখনই আপনি/আমরা কী করতে পারি—প্রমাণনির্ভর “হেল্‌থস্প্যান” কৌশল
 
১/ রক্তচাপ, লিপিড, গ্লুকোজ—নিয়মিত ট্র্যাকিং ও নিয়ন্ত্রণ
 
২/ খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি, ফল, মাছ/উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে ভর; অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার কম
 
৩/ নিয়মিত ব্যায়াম: কার্ডিও + মাংসপেশি শক্তিবর্ধক
 
৪/ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য: ৭–৮ ঘণ্টা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
 
৫/ তামাক পরিহার, অ্যালকোহলে সংযম
 
 টিকা ও স্ক্রিনিং: বয়সভিত্তিক ক্যান্সার/অন্যান্য স্ক্রিনিং অনুশীলন
 
 এগুলোই আজকের দিনে আয়ু নয়, “সুস্থ-আয়ু” (healthspan) বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর পথ, বড় ব্রেকথ্রু না আসা পর্যন্ত।
 
১৫০ বছর, আজকের দিনে তা ধারণা ও গবেষণার লক্ষ্য, প্রমাণিত বাস্তবতা নয়। জাপান ও নরওয়ের মতো দেশগুলো দেখাচ্ছে, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও ভালো স্বাস্থ্যব্যবস্থায় শতায়ু হওয়া বাস্তব। পরবর্তী ধাপ হলো বার্ধক্য-জীববিদ্যাতে চলমান থেরাপিগুলোর মানব-স্তরের শক্ত প্রমাণ। তখনই বোঝা যাবে, মানুষ সত্যিই ১৫০ বছরের দেয়াল পেরোতে পারবে কি না?