চো হিউনের প্রস্তাব: ভারত- কোরিয়া যৌথ সিনেমা নির্মাণে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 Months ago
দক্ষিণ কোরিয়ার  বিদেশমন্ত্রী চো হিউন এবং ডঃ এস জয়শঙ্কর
দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রী চো হিউন এবং ডঃ এস জয়শঙ্কর
 
নয়াদিল্লি

ভারত সফরে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রী চো হিউন ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর দেশের তরুণ প্রজন্ম ভারতীয় সংস্কৃতিতে অত্যন্ত মুগ্ধ এবং একইভাবে ভারতীয় তরুণরাও দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দিকের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক  সাক্ষাৎকারে চো হিউন বলেন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুই দেশ ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করতে পারে, যার মধ্যে যৌথ চলচ্চিত্র নির্মাণও থাকতে পারে।
 
তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে অনেক কিছু একসাথে করতে পারি যেমন যৌথ সিনেমা নির্মাণ… আরও অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্ভব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোরিয়ার তরুণরা ভারতীয় সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাসে মুগ্ধ এবং এর বিপরীতটাও সত্য।”
 
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার (রিপাবলিক অব কোরিয়া) সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে, যা পারস্পরিক স্বার্থ, সৌহার্দ্য এবং উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ দ্বারা উৎসাহিত হয়েছে।
 
দুই দেশের জনগণের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান। ১৩শ শতকে রচিত “সামগুক ইউসা” বা “দ্য হেরিটেজ হিস্ট্রি অফ দ্য থ্রি কিংডমস”-এ উল্লেখ আছে যে, অযোধ্যা থেকে একটি রাজকুমারী (সুরিরত্না) কোরিয়ায় এসে রাজা কিম-সুরোকে বিবাহ করেন এবং ৪৮ খ্রিস্টাব্দে রানী হুর হোয়াং-ওক হন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লি মিয়ং-বাকের স্ত্রী কিম ইউন-ওক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কিম দে-জুং, কিম ইয়ং-সাম এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কিম জং-পিল প্রমুখ তাঁদের বংশধারা ঐ রাজদম্পতির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়।
 
কোরিয়ান বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হেচো (বা হং জিয়াও) ৭২৩ থেকে ৭২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ভ্রমণ করেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনী ‘পিলগ্রিমেজ টু দ্য ফাইভ কিংডমস অফ ইন্ডিয়া’-তে ভারতীয় সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ও আবহাওয়ার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। বুদ্ধের চিরন্তন দর্শন, যা দুই দেশের মানুষের জীবন ও চিন্তায় প্রভাব ফেলেছে, একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
 
চো হিউন জানান, শনিবার তাঁর ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শংকরের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। তিনি দিল্লিতে তাঁর ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত থাকার সময়কাল স্মরণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে এবং গত দশ বছরে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।
 
তিনি বলেন, “দিল্লিতে ফিরে এসে খুব ভালো লাগছে। দশ বছর আগে আমি যখন এখানে এসেছিলাম, তখন ভারতের সংস্কৃতির গভীরতা দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। উপমহাদেশ ও এখানকার মানুষের ব্যাপ্তি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি গর্বিত ছিলাম যে আমি ভারতের জন্য কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছিলাম। তখন আমি লক্ষ্য করি যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে… এখন আমি দেখি আরও ভালো পরিবর্তন এসেছে গত দশ বছরে। তাই এখানে ফিরে আসতে পেরে এবং পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি খুব খুশি।”
 
চো হিউন স্মরণ করেন যে, তিনি যখন রাষ্ট্রদূত ছিলেন তখন এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছিল, যিনি তখন ২০১৫-১৮ পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন।
 
তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার পথ খুঁজেছেন। চো হিউন শুক্রবার জাতীয় রাজধানীতে পৌঁছান।
 
তিনি বলেন, “এটা ছিল এক ভালো বৈঠক। আমি যখন এখানে ছিলাম এবং উনি পররাষ্ট্রসচিব ছিলেন, তখনও আমাদের দেখা হতো। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি—ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটেও।”
 
বৈঠকে চো হিউনকে স্বাগত জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “পুরনো বন্ধুকে নতুন সহকর্মী হিসেবে স্বাগত জানানোর সুযোগ খুব ঘন ঘন আসে না।”
 
তিনি বলেন, “আপনাকে আবার ভারতে স্বাগত জানানোটা আমার কাছে একটা বিশেষ সম্মানের বিষয়। আপনার নিয়োগের জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনি মাত্র এক মাস আগে এই দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আপনার জাতীয় দিবস ও আমাদের জাতীয় দিবসের পরপরই ভারতে আসা—এই সম্পর্কের প্রতি আমাদের পারস্পরিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে।”
 
তিনি আরও বলেন, “আমি সুযোগ নিয়ে আপনাকে কোরিয়ার ন্যাশনাল লিবারেশন ডে-র জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনার এই সফর অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ—এটি আমাদের বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্বের ১০ম বার্ষিকী। আমি সেই সৌভাগ্যবান ছিলাম যিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কানাডার কানানাসকিসে আপনার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। খুব ভালো এক বৈঠক হয়েছিল, তাদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল।”