প্রকাশিত হল পশ্চিমবঙ্গের খসড়া ভোটার তালিকা: কত নাম বাদ পড়তে পারে, তালিকা ঘিরে বিভ্রান্তি
দেবকিশোর চক্রবর্তী
পশ্চিমবঙ্গে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ নতুন না হলেও, এবারের তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ। বহু নাগরিকের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ভোটার হিসেবে নাম থাকলেও খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোথাও ঠিকানা সংক্রান্ত ভুল, বয়সের গরমিল কিংবা একই ব্যক্তির একাধিক এন্ট্রির বিষয়ও সামনে এসেছে।
রাজ্য নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই হলো ত্রুটি শনাক্ত করে তা সংশোধনের সুযোগ তৈরি করা। এই তালিকা কোনোভাবেই চূড়ান্ত নয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি ও আপত্তি জানালে বাদ পড়া নাম অন্তর্ভুক্ত করা, ভুল তথ্য সংশোধন এবং অযোগ্য ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,“খসড়া তালিকায় নাম না থাকলেই ভোটাধিকার শেষ—এমন কোনো বিষয় নেই। যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকায় প্রকৃত ও যোগ্য ভোটারদের নাম অবশ্যই রাখা হবে।”
নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে কয়েক লক্ষ নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। এর মধ্যে রয়েছেন মৃত্যুবরণকারী ভোটার, স্থায়ীভাবে রাজ্যের বাইরে বা বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তি, দ্বৈতভাবে নিবন্ধিত ভোটার এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট এমন ব্যক্তিরা।
জেলা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের সময় দেখা গেছে—অনেক ক্ষেত্রে ভোটারের মৃত্যু হলেও তা যথাসময়ে নথিভুক্ত হয়নি। ফলে ওই নামগুলি দীর্ঘদিন ধরে ভোটার তালিকায় থেকে গেছে। এবারের হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় সেগুলি বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার তথ্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকায় কিছু নাম আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে এক জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বলেন,“যেসব ক্ষেত্রে তথ্যের গরমিল রয়েছে, সেগুলি সরাসরি বাদ না দিয়ে যাচাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। আবেদনকারীর কাগজপত্র সঠিক থাকলে নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
তবে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব থাকায় বিভ্রান্তি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন, খসড়া তালিকায় নাম না থাকলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন এই আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,“খসড়া তালিকা মানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বিডিও অফিস, নির্বাচন অফিস কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে দাবি ও আপত্তি জানানো যাবে।”
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ভোটার তালিকা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। এখানে স্বচ্ছতা ও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রচার অত্যন্ত জরুরি। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েত ও পৌর স্তরে সচেতনতা শিবির বাড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।
রাজনৈতিক মহলেও খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল অভিযোগ তুলেছে, বড় সংখ্যায় নাম বাদ পড়লে তা নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনের দাবি, পুরো প্রক্রিয়া নির্বাচন আইন ও বিধি মেনেই পরিচালিত হচ্ছে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতের সুযোগ নেই।
সব মিলিয়ে, পশ্চিমবঙ্গে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশকে ঘিরে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ভোটারদেরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। সময়মতো তালিকা যাচাই ও দাবি-আপত্তি দাখিল করা হলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যোগ্য নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।