“অপারেশন সিন্দূরের নায়ক রিজওয়ান মালিক: দেশভক্তি, সাহস আর ঐক্যের জীবন্ত প্রতীক”

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 1 d ago
অপারেশন সিন্দূরের নায়ক রিজওয়ান মালিক
অপারেশন সিন্দূরের নায়ক রিজওয়ান মালিক
 
মালিক  আসগর হাশমি/ নয়াদিল্লি

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখনই মাতৃভূমি সংকটে পড়েছে, তখন ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশের সন্তানরা তার রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক অপারেশন সিন্দূর সেই সত্যকে আবারও নতুনভাবে সামনে এনেছে। এই অভিযানে ভারতীয় বায়ুসেনার স্কোয়াড্রন লিডার চেসাবম রিজওয়ান মালিক যে দুঃসাহসিক বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন, তা শত্রুপক্ষকে হতভম্ব করে দেওয়ার পাশাপাশি কোটি কোটি ভারতবাসীর বুক গর্বে ভরিয়ে তুলেছে।
 
অপারেশন সিন্দূর শুরু হয়েছিল তখন, যখন পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিরা পাহালগামে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে বহু প্রাণ কেড়ে নেয়। এর জবাবে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা যৌথ অভিযান শুরু করে। এই সময় স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হয় সুখোই-৩০ এমকেআই উড়ানোর দায়িত্ব।
 
স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিক ছবিতে তাঁর মা ও বাবার সঙ্গে 
 
যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর সঠিক কৌশল ও সাহস পাকিস্তানের দিক থেকে আসা আকাশপথের হুমকিকে ব্যর্থ করে দেয়। শুধু শত্রুপক্ষের ঘাঁটি ধ্বংস হয়নি, বরং তাদের হামলার মনোবলও ভেঙে পড়ে। মালিকের এই অভিযান ভারতের সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্বকে স্পষ্ট করে তোলে। তাঁর শৌর্যের জন্য তাঁকে ‘বীর চক্র’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে, যা দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বপুরস্কার।
 
এই বীরত্বগাথা গোটা দেশকে আলোড়িত করে তুলেছে। সম্প্রতি যখন স্কোয়াড্রন লিডার মালিক নিজ জেলা ইম্ফলে ফিরে আসেন, তখন দৃশ্য ছিল অভূতপূর্ব। ইম্ফল পূর্বের ক্ষেত্রিগাঁও-এর কেখু মানিং লেইকাই এলাকায় হাজার হাজার মানুষ তাঁর অভ্যর্থনার জন্য ভিড় জমায়। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও সাধারণ মানুষ গর্বের সঙ্গে তাঁকে কাঁধে তুলে বরণ করে নেয়। ভিড়ের মধ্যে ছোট ছোট শিশুরাও মালিককে আদর্শ মেনে স্লোগান দিচ্ছিল, “ভারতমাতা কি জয়”, “বন্দেমাতরম্” এবং “রিজওয়ান মালিক অমর রহে।”
 
রিজওয়ান মালিকের এই সাফল্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মুসলমানদের ভূমিকাকেও আবার সামনে এনেছে। ইতিহাস সাক্ষী, হায়দ্রাবাদের আব্দুল হামিদের মতো অমর শহিদ ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে একাই পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে ভারতকে রক্ষা করেছিলেন। আজ রিজওয়ান মালিক সেই ঐতিহ্যের নতুন প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
 
এই ঘটনা এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়, ভারতীয় মুসলমানরা শুধু রাজনীতি ও সমাজের ক্ষেত্রেই নয়, মাতৃভূমির প্রতিরক্ষাতেও সমান অংশীদার। তাঁদের কাঁধে বন্দুক আর হৃদয়ে ভারতমাতার নাম ঠিক ততটাই উচ্চকিত, যতটা অন্য যে কোনও ধর্মের সৈনিকের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
 
 
স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিকের যাত্রাপথও অনুপ্রেরণায় ভরা। তিনি পড়াশোনা করেছেন সেনিক স্কুল ইম্ফল থেকে এবং পরে জাতীয় প্রতিরক্ষা অ্যাকাডেমি (এন ডি এ)-তে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৫ সালে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনায় কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার হন। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় স্থানে থাকা মালিক আজ শুধু তাঁর পরিবার নয়, সমগ্র দেশের গর্বে পরিণত হয়েছেন।
 
তাঁর স্ত্রী, ডাঃ ফারহীন চিশতি, বর্তমানে হরিয়ানার একটি হাসপাতালে কর্মরত। এই দম্পতির একটি আট মাসের সন্তান রয়েছে। যখন স্বাগত অনুষ্ঠানে ছোট্ট শিশুটি মায়ের কোলে ছিল, তখন ভিড়ের মধ্যে বহু চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। সকলের মনে হয়েছিল, আগামী প্রজন্মও একদিন পিতার বীরত্বগাথা নিয়ে গর্ব করবে।
 
স্বাগত অনুষ্ঠানে স্কোয়াড্রন লিডার মালিক ভিড়কে উদ্দেশ করে বলেন, “এই সম্মান কেবল আমার নয়, গোটা দেশের। আমি গর্বিত যে আমি সেই লক্ষ লক্ষ সৈনিকের সারিতে দাঁড়াতে পেরেছি যারা এই মাতৃভূমির রক্ষা করে। আমাদের বড়রা সবসময় শিখিয়েছেন, বড়দের সম্মান করো, প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখো। এই মূল্যবোধই আমাকে সারাজীবন পথ দেখাবে।”
 
তাঁর এই বক্তব্য শুধু তরুণদের নয়, সমগ্র সমাজের জন্য এক বার্তা, ধর্ম ও জাতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশসেবা-ই সর্বোচ্চ পূজা। রিজওয়ান মালিকের বীরত্ব ও সম্মানের খবর সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন মানুষ। #RizwanMalik, #VeerChakraHero এবং #OperationSindoor হ্যাশট্যাগ দ্রুত ট্রেন্ড করতে শুরু করে। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাঁকে “ভারতের গর্ব” আখ্যা দিয়ে স্যালুট জানান।
 
‘বীর চক্র’ সম্মানে ভূষিত স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিক
 
অপারেশন সিন্দূরের নায়ক রিজওয়ান মালিক প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ভারতের আসল শক্তি তার ঐক্যে নিহিত। হিন্দু, মুসলমান, শিখ কিংবা খ্রিস্টান, যখন সীমান্ত রক্ষার প্রসঙ্গ আসে, তখন সকলে ভারতীয় হয়ে দাঁড়ায়। মালিকের বীরত্ব আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়, যেখানে দেশপ্রেম ও শৌর্যের অগণিত দৃষ্টান্ত ভরিয়ে রেখেছে ভারতীয় মুসলমানদের অবদান।
 
স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান মালিক শুধু একজন সৈনিক নন, তিনি এক প্রতীক, দেশভক্তি, সাহস এবং ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক। অপারেশন সিন্দূরে তাঁর কৃতিত্ব আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাঁর নাম ইতিহাসের সেই সোনালি পঙ্‌ক্তিতে লেখা থাকবে, যেখানে ধর্ম বা জাতির নয়, বরং মাতৃভূমির জন্য ঝরানো রক্তের হিসাব রাখা হয়।