নয়াদিল্লি
স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যায় পাঞ্জাবের প্রতিটি জেলাই প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি রাজ্য না হওয়া সত্ত্বেও এবার সমতল পাঞ্জাবই জলবিপর্যয়ের সর্বাধিক শিকার। কিন্তু এই দুর্যোগের মধ্যেও পাঞ্জাবের মানুষ তাঁদের অটল মনোবল ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। শিল্পী, অভিনেতা থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন।
এক মহৎ মানবিক পদক্ষেপে মুসলমানরা রাজ্যের মসজিদগুলো খুলে দিয়েছেন, যেখানে প্রায় ৩ লক্ষ বন্যাদুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
যাঁরা বিশেষভাবে বন্যাদুর্গত মানুষদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সোনু সুদ, অমরিক বীরক, দিলজিৎ দোসাঞ্জ ও সঞ্জয় দত্ত। আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করার পাশাপাশি তাঁরা এক্স ও অন্যান্য মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের জন্য সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোনু সুদ, যিনি কোভিড-১৯ মহামারির সময় সারা দেশে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি এক্স-এ আহ্বান জানিয়েছেন:
রাজ্যের আইপিএস কর্মকর্তারা তাঁদের এক দিনের বেতন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দিলজিত দোসাঞ্জ ১০টি গ্রামকে দত্তক নিয়েছেন, আর বীরক ২০০টি পরিবারকে সহায়তা করছেন। পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সক্রিয়ভাবে কাজ করা সংগঠনগুলিকে অর্থ সহায়তা করেছেন।
বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, যার শিকড় পাঞ্জাবে, তিনিও বন্যাদুর্গতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন:
হরিয়ানার মুসলিম সংগঠনগুলো মাদ্রাসা ও জামিয়াত উলেমা-এ-হিন্দের শাখাগুলোতে পাঞ্জাবের বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছে।
এই সংগঠনগুলির ত্রাণ বিতরণের ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
হরিয়ানার মেওয়াট অঞ্চলের মুসলমানরা ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছেন, যা পাঠানো হচ্ছে পাঞ্জাবের দুর্গত এলাকায়। খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, মশারি, পশুখাদ্য, ওষুধ এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে পাঠানো হয়েছে।
হরিয়ানার জিন্দ জেলার উজানা গ্রাম থেকে স্থানীয় মুসলিম নেতারা ১৫০ কুইন্টাল আটা সংগ্রহ করে ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে করে পাঞ্জাবে পাঠিয়েছেন। গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁদের ত্রাণসামগ্রী জমা করেছেন।
মেওয়াটের মানুষ কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সক্রিয় ছিলেন। আম্বালা জেলার নারায়ণগড়ে অবস্থিত মাদ্রাসা জিনাত উলুমকে ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মাওলানা শওকত আলির তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মাদ্রাসা জিনাত উলুম থেকে ২,৫০০-রও বেশি খাদ্য কিট পাঞ্জাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ১৫টি পিকআপ ভ্যান ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে গেছে।
ইয়মুনানগর জেলার বহু গ্রাম থেকেও মুসলমানরা খাদ্যদ্রব্য ও কয়েক লক্ষ টাকা নগদ সংগ্রহ করেছেন বন্যাদুর্গতদের জন্য।
পাঞ্জাবে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর একটি দৃশ্য
সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলেন, "চাড়্দি কলা" (অদম্য উদ্যম) এর প্রকৃত চেতনায় এই কঠিন সময়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। মসজিদ থেকে মানুষকে নগদ ও দ্রব্যসামগ্রী দান করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এ পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকা নগদ ও বহু কুইন্টাল খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ হয়েছে। এই সমস্ত ত্রাণসামগ্রী আম্বালা জেলার নারায়ণগড়ের এক মাদ্রাসায় পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে তা পাঞ্জাবের দুর্গত জেলাগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
পাঞ্জাবের মুসলিম সংগঠনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দয়ালপুরের আরসিএফ কলোনিতে। সেখানে মসজিদ কমিটির প্রধান হাজি খুশি মহম্মদ সম্প্রদায়ের সদস্যদের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
পাঞ্জাবের মান্ড অঞ্চলে জামিয়াত উলেমা-এ-হিন্দ কাপুরথলার সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ, কাপুরথলার শাহী ইমাম মৌলভি আবদুল হামিদ, মনসুর আলি প্রমুখ বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মানুষ জরুরি প্রয়োজনে পশুখাদ্য ও পশু চিকিৎসার ওষুধকে প্রধান চাহিদা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে পাঞ্জাব ভয়াবহ বন্যার কবলে, যেখানে ইতিমধ্যেই ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী টানা বৃষ্টিপাত ও বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দেওয়া।