শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আজ ও অটুট বাংলার মাটিতে। মানবতার পাঠ পড়িয়ে প্রজন্মর পর প্রজন্ম রয়েছে একে অপরের পাশে। আর ঠিক এই পাঠই দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলির ভদ্রেশ্বরের পালপাড়ার দাস পরিবার। এক অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বয়ে চলেছে এই পরিবার ৷ এলাকায় অবস্থিত সৈয়দ শাহ পীরের মাজারের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে এই পরিবার দীর্ঘ কয়েক প্রজন্ম ধরে।
১৯৬৭ সাল থেকে ভদ্রেশ্বরের পালপাড়ার দাস পরিবার সৈয়দ শাহ পীরের মাজারের দেখভাল করে আসছে ৷ দু’বেলা মাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে, নিয়ম করে ধূপ-মোমবাতি জ্বালানো সবই করে দাস পরিবারের সদস্যরা ৷ তবে, এর পিছনেও রয়েছে একটি সম্প্রীতির কাহিনি ৷
মাজারের বাইরের একটি দৃশ্য
প্রায় ১২০ বছর আগে এই অঞ্চল জঙ্গলে ভরা ছিল ৷ ভদ্রেশ্বর পালপাড়া ও হিন্দুস্তান পার্ক ছিল মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ৷ সেই সময় একাধিক পীরের মাজার তৈরি হয়েছিল সেখানে ৷ পরবর্তীকালে দেশভাগের সময় ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজন এবং বহু অবাঙালি মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করে ৷ সেই থেকে এই অঞ্চলে পুরোপুরি হিন্দুদের বাস ৷
তেমনই ১৯৬৭ সালে পালপাড়ায় শ্রীধামচন্দ্র দাস এক মুসলমান ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গা কিনেছিলেন ৷ সেই সময় সৈয়দ শাহ পীরের মাজারের দায়িত্ব পান তিনি ৷ তখন থেকে দেখভালের দায়িত্ব পালন করে আসছে এই পরিবার ৷ সারা বছর মাজারের দেখভাল করেন তাঁরা ৷ ঈদ, সবেবরাতের মতো অনুষ্ঠানে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে প্রার্থনা করতে আসেন।
দাস পরিবারের সদস্য দেবাশিস দাস বলেন, "আমার বাবা মাজার সমেত এক মুসলিম ব্যক্তির কাছ থেকে এই জমি কিনে ছিলেন ৷ সেই থেকে আমার বাবা পুজো করে আসছেন ৷ উনি মারা যাওয়ার পর আমাদের গোটা পরিবার এই পীরের সেবা করছে ৷ প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন আসেন প্রার্থনা করতে ৷ আগে এটা মাটির ছিল ৷ এখন টিনের চাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৷ এখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই সমান ৷ কখনই ভাগাভাগি করা উচিত নয় ৷ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এক ৷ এটা পশ্চিমবঙ্গেই দেখা যায় ৷"
মাজারের ভেতরের একটি দৃশ্য
এই মাজারের দেখভালের জন্য কোন ধরনের আর্থিক সাহায্য দাস পরিবার কারো থেকে নেয় না। আর এই কথা খুব গর্বের সঙ্গে বলেন দেবাশিস বাবু। তিনি আওয়াজ দ্য ভয়েসকে জানান,' সারা বছর মাজারে দক্ষিণা হিসেবে যে টাকা পড়ে সেটা পুরোটাই তারা জমিয়ে রাখেন। এবং উৎসব অনুষ্ঠানে সেটা মাজারের মৌলবি সাহেবের হাতে তুলে দেন।
বছরে বিভিন্ন উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ দলে দলে এই মাজারে ভিড় করেন। শুধু তাই নয় এলাকার হিন্দুরাও মাজারে আসেন। নিয়মিত চাদর চড়ান ও ধূপ জ্বালান।' ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে মাজারটিকে আলোর রসনাইয়ে সাজিয়ে তোলেন দাস পরিবারের সদস্যরা। দাস পরিবার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা থেকেই এই মাজারটির সঙ্গে নিজেদের জুড়ে দিয়েছেন এমনটাই জানান এলাকাবাসীরা।