"মমতার কর্মসূচিতে থাকবেন না!" — গোপন ডেরা থেকে রাজবংশীদের উদ্দেশে কেএলও নেতা জীবন সিংহের আবেদন

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 7 h ago
কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO)-এর নেতা জীবন সিংহ ( ফাইল ছবি)
কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO)-এর নেতা জীবন সিংহ ( ফাইল ছবি)
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী :
 
৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোচবিহার সফরকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তরঙ্গ তুলেছেন কেএলও-র অন্যতম নেতা জীবন সিংহ। গোপন ডেরা থেকে প্রকাশিত এক ভিডিয়ো বার্তায় তিনি সরাসরি রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা বর্জনের আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনওই পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠনের পক্ষে নন, বরং প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেন। আর সেই কারণেই তিনি রাজবংশী সমাজকে ৯ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
 
জীবন সিংহের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার জানিয়েছেন যে কোনও অবস্থাতেই পৃথক রাজ্য গঠনের অনুমতি তিনি দেবেন না। তাই রাজবংশী জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার দাবি তুলে তাঁর অনুরোধ—মুখ্যমন্ত্রীর কোচবিহারের অনুষ্ঠান যেন রাজবংশী সমাজের কেউ উপস্থিত না থাকেন। তাঁর এই বার্তা মিলতেই উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
 
তবে শাসকদলের বক্তব্য—জীবনের এই মন্তব্যে কোনও প্রভাব পড়বে না। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, জীবনের কথার কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। তিনি দাবি করেন, কোচবিহারের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত, এবং দীর্ঘ এক বছর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা শুনতে উৎসুক হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। তাঁর মতে, জনসভায় ব্যাপক ভিড়ই প্রমাণ দেবে মানুষের সমর্থন কোন দিকে।
 
 
পার্থপ্রতিম রায় আরও জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার বরাবরই রাজবংশী ও কামতাপুরী জনগোষ্ঠীর জন্য নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি চালু করেছে। রাজবংশী এবং কামতাপুরী ভাষার স্বীকৃতি, সংশ্লিষ্ট ভাষা অ্যাকাডেমি গঠন, মনীষী পঞ্চানন বর্মনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, এবং আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের হোম গার্ডে চাকরি—এসবই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। তাই রাজবংশী সমাজের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই বলেই মনে করছেন দলীয় নেতারা।
 
তৃণমূল শিবিরের দাবি, কার মদতে জীবন সিংহ এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তা স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা ব্যাহত করার চেষ্টা হলেও মানুষের সমর্থনেই অনুষ্ঠান সফল হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। ইতিমধ্যেই কোচবিহার জেলাজুড়ে প্রচার শুরু হয়েছে, সাজোয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে মঞ্চ প্রস্তুতি—সব ক্ষেত্রেই প্রশাসন ও দল প্রস্তুত।
 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জীবনের এই ভিডিও বার্তা উত্তরে রাজনীতির সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করলেও বাস্তবে এর প্রভাব কতটা পড়বে, তা দেখতে হবে মমতার জনসভায়। রাজবংশী সম্প্রদায় উত্তরবঙ্গের নির্বাচনী রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। ফলে এই বার্তা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
 
এখন নজর ৯ ডিসেম্বরের দিকে—কোচবিহারের মাটিতে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, এবং জীবনের বার্তার প্রতিক্রিয়া কেমন প্রতিফলিত হয় মানুষের উপস্থিতিতে—তা নিয়েই উৎসুক রাজনৈতিক মহল।