শান্তি প্রিয় রায় চৌধুরী
পূর্ব মেদিনীপুরের গেটওয়ে মেছেদা। আর এই বাসস্ট্যান্ডের লাগোয়া একটি হোটেল, নাম রয়েল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। আগে ছিল শুধুমাত্র পান বিড়ির দোকান। এখন সেই পান বিড়ির দোকান হয়েছে একটা হোটেল। পেটে কিছু দিতে বা একটু জিরিয়ে নিতে অনেকেই আসেন এখানে। একজনকে দেখে একটু চেনা চেনা লাগছে? আরো ভালো করে দেখুন, মনে করুন আগে কোথায় দেখেছেন। ঠিক ধরেছেন, বাংলা ছবিতে। হয়তো মুখটা চিনেছেন, কিন্তু নামটা জানেন না। কারণ চরিত্রাভিনেতাদের নাম সব সময় জানাও থাকে না। আগে সেই নামটা বলে দেওয়া যাক। পূর্ব মেদিনীপুরের শান্তিপুরের ইউনুস আলী খান। টলিপাড়ার তিনি অবশ্য ভিকি নামেই বেশি পরিচিত।
তবে কি এই দোকানে কোন ছবির শুটিং চলছে? নইলে শুটিং ছেড়ে তিনি এখানে কি করছেন? আসলে, এই হোটেলটি তার দাদার। পারিবারিক ব্যবসা। অভিনয়ে নামার আগে নিয়মিত এখানে বসতেন ভিকি। এখন অভিনয়ে নামলেও পারিবারিক ব্যবসা ভোলেন নি। একটু ফাঁকা সময় থাকলেই দেখা যায় দাদার হোটেল সামলাচ্ছেন। ক্যামেরার সামনে অভিনয়ে যতটা সাবলীল দাদার হোটেল চালানোতেও ঠিক ততটাই। না, এমন কাজে কোন সংকোচ নেই ভিকির। নিজে থেকে কাউকে তিনি অভিনেতা পরিচয় দেন না। তবু কেউ যদি চিনতে পারে, যদি কেউ প্রশ্ন করে এখানে কি করছেন, হাসতে হাসতে তার উত্তর দেন ভিকি।
তার কথায়, 'মানুষের জীবনে কোন কাজই ছোট নয়। ছোট হলে তবেই বড় হওয়া যায়।' আর যখন লোকজনের ভিড় একটু কম তখন ভিকিকে দেখা যায় মন দিয়ে কি যেন পড়ছেন। নিজের মনে বিড়বিড় করছেন। আসলে ওটা হল চিত্রনাট্য। হোটেলে বসেই চিত্রনাট্যের সঙ্গে নিজেকে আরও বড়সড়ো করে নিচ্ছেন।
পরিচালকরা সব সময় নতুন মুখের সন্ধানে থাকেন। আবার যে সে পরিচালক নন, বাংলা ছবির সফল পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন ভিকিকে। হরনাথের নির্বাচন যে ভুল ছিল না, একের পর এক ছবিতে তার প্রমাণ রেখেছেন ভিকি। ছবিগুলোর দিকে একটু চোখ বুলানো যাক। ১৯টি ছবি ভিকি করে ফেলেছেন। যার মধ্যে আছে বিদ্রোহ, রাজারানী, বাদশা, রণক্ষেত্র, সাথী, সূর্য, বাজিমাত, তুল কামাল, বডিগার্ড, ছায়াময়। ছায়াময় সিনেমা নন্দনে রমরমিয়ে চলেছে। কখনো মিঠুন বা কখনো প্রসনজিতের সঙ্গে। কখনো রঞ্জিত মল্লিক বা ভিক্টর ব্যানার্জি। আবার নায়িকাদের মধ্যে কখনো শতাব্দি রায় আবার কখনো ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। অভিনয়ের সুবাদে সকলেই এখন চেনা। অনেকের প্রশংসাই জুটছে।
এমন তারকাদের সান্নিধ্য। কেমন লাগছে? বেশ রোমাঞ্চিত মনে হল মেচেদার এই যুবককে, 'ছোটবেলায় যাদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতাম তাদের সঙ্গে অভিনয় করছি, এটা আমার কাছে বিরাট এক প্রাপ্তি। তবে এটা সম্ভবই হতো না যদি হরনাথদা না থাকতেন। ইনস্টিটিউট অফ ফিল্ম অ্যান্ড এলায়েড থেকে ডিগ্রি নেওয়ার পর হরনাথদাই আমাকে সুযোগ করে দেন। তিনিই আমাকে ছবির জগতে নিয়ে আসেন। আমার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। আমি চেষ্টা করেছিলাম সেই আস্থার মর্যাদা রাখতে। ছোটবেলার স্বপ্নটাকে উনি আরো বেশি করে উসকে দিয়েছিলেন। উনি আমার গডফাদার। এত এত পরিচালক যখন কাজ দিচ্ছেন, বড়োসড়ো অভিনেতারা যখন প্রশংসা করছেন, তখন কিছুটা হয়তো পেরেছি। তবে এখানেই থেমে থাকতে চাই না। আরো অনেক ভালো ভালো কাজ করতে চাই।'
আপাতত চরিত্রাভিনেতা। যতদিন যাচ্ছে নিজেকে ক্রমশ পরিণত করছেন ভিকি। হয়তো আরও কোন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে দেখা যাবে। সেই সুযোগ এখন ইউনূসের সামনে। পর্দায় নিজেকে আরো ভালোভাবে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন।
এতকিছু করার পরেও ভিকির মনটা ভালো নয়। কেন? ভিকি বলছেন,ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো নয়। আমরা সকলেই হতাশ হচ্ছি। মাসে কয়েকটা দিন বোর্ড মিটিং থাকে। সেখানে যাই, কিছু আলোচনা হয়। এই অবস্থায় এখন আছি। জানিনা আগামী দিনগুলোতে কি আছে।
যাইহোক, ভিকি তৈরি আছেন পর্দায় নিজেকে আরো ভালোভাবে মেলে ধরার। কতদূর তিনি এগিয়ে যেতে পারেন সময় বলে দেবে।