ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সাফল্য: ভারতের অনুপর্ণা রায় জয় করলেন সেরা পরিচালকের সম্মান

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 23 d ago
উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের আসর
উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের আসর
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে ইতিহাস সৃষ্টি করে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ৮২তম আসরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেরা পরিচালকের খেতাব জয় করেছেন ভারতের অনুপূর্ণা রায়। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এর Orizzonti (Horizons) বিভাগে এ বছর ভারতের পক্ষ থেকে একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী চলচ্চিত্র ছিল 'Songs of Forgotten Trees'। আর এই চলচ্চিত্রের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার অনুপর্ণা রায় জিতে নিলেন সেরা পরিচালকের পুরস্কার।

এই অর্জন শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ভারতীয় ও বিশেষ করে বাংলা স্বাধীন চলচ্চিত্রের জগতে এক অনন্য গৌরবের মুহূর্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ, লোকজ সংস্কৃতি ও হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির মেলবন্ধনে নির্মিত ‘Songs of Forgotten Trees’ ইতিমধ্যেই সমালোচকদের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে।

অনুপর্ণা রায় এই ছবির মাধ্যমে পুরুলিয়া ও তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলোর সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রার কথা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। চলচ্চিত্রটি দর্শকদের এক নান্দনিক ও ভাবনাচালিত যাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক গভীরভাবে অনুভব করা যায়।

ভেনিসের মঞ্চে তাঁর এই সম্মান প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে দিল, প্রতিভা সুযোগ পেলে সীমানা ডিঙিয়ে যায়। অনুপর্ণার এই জয় বাংলা ও ভারতের জন্য গর্বের, এবং অনেক তরুণ নির্মাতাকে অনুপ্রাণিত করবে নিশ্চয়ই।

অনুপর্ণার সেই ছাপোষা হাজার হাজার বাঙালির মতো, যারা  বাংলা বা নিজের মাতৃভাষা ছাড়া অন্য যেকোনও ভাষা বলতেই কম স্বচ্ছন্দ্য । কিন্তু এমন একটা অশান্ত সময়ে অনূপর্ণা ঘরে বিশ্বের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার তুললেন, যখন বাঙালি হওয়াটা একপ্রকার অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের একটা বিভাগে তিনি তাঁর ছবি Songs of Forgotten Trees এর জন্য প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়ে ইতিহাস তৈরি করলেন ।

অনুপর্ণা পুরুলিয়ার মেয়ে, সেই পলাশ, ধামসা, মাদলের পুরুলিয়া । পুরষ্কার জিতে তা নিজের দেশ ও শহরকে উৎসর্গ করেছেন।

তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে  বলেছেন ফিলিস্তিনের কথা, সেখানে অবাধে যে গণহত্যা ও শিশুহত্যা চলছে, তার কথা । প্রতিবাদ করেছেন। সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে রাষ্ট্র তার এই ফিলিস্তিনপ্রীতি সহ্য করবে না । অবশ্য তাতে যে তার কিছু যায় আসে না, তাও স্পষ্ট করেছেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ইস্যুতে  তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুর শান্তি, স্বাধীনতা অর্জনের অধিকার রয়েছে। প্যালেস্টাইনও ব্যতিক্রম নয়। হয়তো আমার এই কথায় আমার দেশেরও কেউ কেউ বিরক্ত হবেন, তবু আমি একথা বলবই।’কুর্নিশ অনুপর্ণা রায়।

 কোনো ভারতীয় পরিচালক এই বিভাগে এবারই প্রথম সেরা পরিচালকের সম্মান পেলেন। অনুপর্ণা বর্তমানে মুম্বাই থাকলেও তার জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায়। তিনি পড়াশোনা করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে!

অনুপূর্ণার হাতে পুরস্কার তুলে দেন ফরাসি পরিচালক জুলিয়া ডুকুরনো। সাদা শাড়ি পরে মঞ্চে উঠে পুরস্কার নেন পরিচালক। পুরস্কার হাতে চোখ ছলছল করে ওঠে তার।

সেরা পরিচালকের পুরস্কার হাতে নিয়ে অন্তরালে থাকা প্রত্যেক নারীর লড়াইকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনুপূর্ণা। তার কথায়, ‘এই সিনেমাটি প্রত্যেক মহিলার লড়াইয়ের গল্প। যারা নিঃশব্দে লড়াই করার পরেও তেমন গুরুত্ব পান না, তাদের উৎসর্গ করা হল। এই জয় হয়তো নীরব বিপ্লবীদের ভাষা হয়ে উঠবে। শক্তি হয়ে উঠবে।’

পরিচালক বলেন, ‘আমি প্রযোজক অনুরাগ কাশ্যপ এবং সমস্ত কলাকুশলীকে ধন্যবাদ জানাই।  আমার শহর, আমার দেশের প্রত্যেককে এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি।’

প্রসঙ্গত, সিনেমায় দেখানো হয়েছে থুয়া, এক প্রবাসী মেয়ের গল্প, যিনি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাইয়ে আসেন। নিজেকে প্রমাণ করতে নানা চেষ্টা চালান তিনি। একদিন নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া দেন শ্বেতাকে, যিনি আরেক প্রবাসী। এক ঘরে থাকা শুরু করলে গড়ে ওঠে অদ্ভুত সখ্যতা, যা ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়।

ছবিটি মূলত নিজেকে চিনে নেওয়া, বেঁচে থাকার লড়াই এবং অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্বের গল্প। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভুষণ শিম্পি, রবি মান, লাভলী সিং এবং প্রিতম পিলানিয়া।