শেষ যাত্রার জনসমাগমে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন 'অসম হৃদয় জুবিন গার্গের

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 10 d ago
শেষ যাত্রার জনসমাগমে নজির স্থাপন
শেষ যাত্রার জনসমাগমে নজির স্থাপন
দেবকিশোর চক্রবর্তী

এক মৃত্যুতে সব যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে, আপামোর অসমবাসীর কোনো কাজেই যেন মন নেই। জীবনের সুর তাল ছন্দ্যটাই যেন কেটে গেছে প্রিয় শিল্পীর অকাল প্রয়াণে। এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রিয় শিল্পীর শেষ যাত্রায় আস্ত শহর ঘন্টার পর ঘন্টা তুমুল জনপ্লাবনে ভেসে গেল। 
 
   তেত্রিশ বছরের শিল্পী জীবনে ৩৮ হাজারের বেশি গান গেয়ে নজির স্থাপন করে গিয়েছেন। আর ৫২ বছরের জীবনের শেষ যাত্রায় লিখে রেখে গেলেন এক নয়া ইতিহাস। 'অসম হৃদয়' জুবিন গার্গের শেষ যাত্রায় সামিল হলেন দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ। লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী শেষযাত্রায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানে থেকে গেলেন জুবিন। বিদায় বেলার জনসমাগমে প্রথম স্থানে আছেন মাইকেল জ্যাকসন,  দ্বিতীয় স্থানে ধর্ম যাজক পোপ ফ্রান্সিস, তৃতীয় স্থানে রানী এলিজাবেথ আর চতুর্থ স্থানে জুবিন গার্গ। 
 
    অসম প্রাণ জুবিনের প্রাণহীন দেহ একবার ছুঁয়ে দেখতে ক্ষণে ক্ষণে উত্তাল হয়ে উঠছিল কয়েক লাখের জনসমুদ্র। প্রিয় গায়কের বিয়োগ ব্যথায় সমুদ্র গর্জনের মতো সমবেত কান্নার ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল চরাচর। কান্নার সঙ্গে প্রিয় গায়কের গান গেয়ে মহালয়ার পূর্ণলগ্নে স্মৃতিতর্পণ করছিল লক্ষাধিক জুবিন ভক্ত। এই দৃশ্য দেখে আক্ষরিক অর্থেই আপ্লুত জুবিন পত্নী গরিমা শইকিয়া গার্গ। গোপীনাথ বড়দলই বিমানবন্দর থেকেই দুদিনের শেষ যাত্রার সঙ্গী ছিলেন গরিমা। প্রিয় জন হারানোর বিয়োগ ব্যথার মধ্যেই মানুষের ঢল দেখে আপ্লুত গরিমা বললেন,'আমি নিশ্চিত যে জুবিন এই ভালোবাসার স্রোত দেখে অভিভূত হতো। ওতো আজ আর কিছুই  বলতে পারছে না। তাই ওর হয়ে আমি প্রত্যেককে কৃতজ্ঞতা জানাই। জীবনে ও যেটুকু সাফল্য অর্জন করেছে তার পেছনে ছিল আপনাদের এই অপরিসীম ভালোবাসা। আমি বিশ্বাস করি, ওর সৃষ্টি ওর ভালোবাসার তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে।'
 
    ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর শেষ বারের মতন এমন জন জোয়ারে ভেসেছিলেন তামাম অসামবাসী। অসমের সুধা কন্ঠ ভূপেন হাজারিকা মারা গিয়েছিলেন মুম্বাইতে। তার মরদেহ বিমানে করে গুয়াহাটিতে পৌঁছতেই সেদিন বাঁধভাঙ্গা মানব ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বিমানবন্দরের রাস্তায়। হাজার হাজার কন্ঠ কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সুধা কন্ঠের প্রয়াণে। সেদিন যুবদের একটা অংশ বলেছিল, 'ভূপেনদা' চলে গেছেন। অসমের অপরনীয় ক্ষতি হয়েছে।' সেদিন অসমবাসীর ভরসা ছিলেন জুবিন। অনেকেই বলতেন, ভূপেনদা চলে গেলেও  আমাদের কিন্তু একজন জুবিনদাদা আছেন।‌' সেই সম্বলটুকু হারিয়ে এখন যেন আরও অসহায় লাগছে।