মালদা ঃ
বাংলার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ মাদল ও ধামসা। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ – কোনো জায়গাতেই কম নেই এই মাদল-ধামসার উচ্চাঙ্গ সুর। মিঠে তালে নেচে ওঠে আবিশ্ব প্রাণ। উত্তরবঙ্গের চা বাগানে আদিবাসীদের সংস্কৃতির মূল বাদ্যযন্ত্রই হল মাদল ও ধামসা। কিন্তু বিদেশি ডিজে সংস্কৃতির চাপে নতুন প্রজন্মের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে এই মাদল-সংস্কৃতি।
দীর্ঘদিন ধরে ধামসা-মাদল তৈরি করেও কার্যত ধুঁকছেন এই চর্মজাত বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা। গাজোল-১(Gazole) গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিম সুন্দরপুরে দীর্ঘদিন ধরে একটি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ তৈরি করে আসছেন ঢাক, ঢোল, ধামসা মাদল ইত্যাদী।
ইদানীং এই ব্যবসাতে তেমন লাভের মুখ দেখতে পান না কারিগররা। নেই ঠিকমতো সরকারি বিপণন ব্যবস্থা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কতদিন আর তাঁরা এই বাদ্যযন্ত্র নির্মাণ শিল্পকে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে সন্ধিহান খোদ শিল্পীরাই। বিমল রবিদাস নামে এক শিল্পী জানান, প্রায় ৮০ বছর ধরে এই কাজ তাঁরা করে আসছেন। সব থেকে বেশি তৈরি করেন মাদল এবং নাগড়া। তবে এই কাজে যা পরিশ্রম রয়েছে সেই তুলনায় পারিশ্রমিক পান না তারা।
বরঞ্চ লাভের গুড় খেয়ে যায় ফড়েরা। খুবই কম দামে ফড়েরা তাদের কাছ থেকে ধামসা মাদল কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করে বলে অভিযোগ। যে বাদ্যযন্ত্র তাঁরা বিক্রি করেন সেই যন্ত্র সারাই করতে কোনও পারিশ্রমিক নেন না শিল্পীরা। বিনিময়ে আড়াই মন ধান নিয়ে থাকেন তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
শিল্পী সুবল রবিদাসের ছেলে প্রদীপ রবিদাস বলেন, ‘ধামসা-মাদল তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। মাদল তৈরির জন্য এক একটি মাটির খোলের দাম পড়ে ৫০০ টাকা। অত্যাধিক হারে বেড়ে গেছে চামড়ার দামও। দুটি মাদল এবং একটি নাগড়া সেট বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা দামে। সরকার যদি কম সুদে সরকারি ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, এবং বাদ্যযন্ত্র বিপণনের সুযোগ তৈরি করে তাহলে অনেকটা উপকৃত হই আমরা।’