৩১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব: ঋত্বিকের শতবর্ষে সেলুলয়েডে নস্টালজিয়া ও নব ভাবনার মেলবন্ধন

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 20 h ago
৩১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব
৩১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ

আবারও আলোর শহরে সিনেমার উৎসবের জোয়ার। আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ৩১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব (KIFF)। চলবে টানা এক সপ্তাহ, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। সাংবাদিক বৈঠকে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য জানালেন রাজ্যের যুব ও ক্রীড়া এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, হরনাথ চক্রবর্তী, শান্তনু বসু, কোয়েল মল্লিক ও জুন মালিয়া-সহ চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

মন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই উদ্বোধন হবে এবারের উৎসবের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ নৃত্য পরিবেশন করবেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও জুন মালিয়া।

উদ্বোধনী ছবি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে অজয় কর পরিচালিত, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত কালজয়ী ছবি ‘সপ্তপদী’ (১৯৬১)। পুরনো ক্লাসিক দিয়ে উৎসবের সূচনা যেন একদিকে নস্টালজিয়ার আবেশ আনে, অন্যদিকে বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের স্মৃতিকে পুনর্জীবিত করে।

এ বছর মোট ৩৯টি দেশ থেকে বাছাই করা হয়েছে ২১৫টি ছবি— যার মধ্যে ১৮৫টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ও ৩০টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের। প্রদর্শিত হবে ১৮টি ভারতীয় ভাষা ও ৩০টি বিদেশি ভাষার ছবি। কোঙ্কনি, বোরো, তুলু, সাঁওতালি-সহ বহু উপভাষার চলচ্চিত্রও থাকবে প্রদর্শনের তালিকায়। বিশেষ বিভাগ “Unheard India: Rare Language Films”-এ অল্পচর্চিত ভাষার ছবিগুলির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।

তবে এবারের উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ঋত্বিক ঘটকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন। এই উপলক্ষে প্রদর্শিত হবে সুমন মৈত্র পরিচালিত নতুন ছবি এবং আয়োজিত হবে ঋত্বিকের জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ সেমিনার। প্রদর্শিত হবে তাঁর কালজয়ী চলচ্চিত্র— ‘অযান্ত্রিক’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘কোমল গান্ধার’ ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’।

সঙ্গে থাকছে সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল লেকচার, যেখানে উপস্থিত থাকবেন সিমি গারেওয়াল-সহ বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। এছাড়া উৎসবে প্রদর্শিত হবে পুনরুদ্ধার করা সত্যজিৎ রায় ও চার্লি চ্যাপলিনের ক্লাসিক সিনেমা— যা চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রতি এক বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

এই বছর বিশেষ ফোকাস থাকবে পোলিশ সিনেমায়। প্রদর্শিত হবে দেশটির বিশিষ্ট পরিচালকদের একাধিক ছবি, পাশাপাশি ক্রাকো শহরভিত্তিক প্রদর্শনীর আয়োজনও থাকছে। এ ছাড়াও উৎসবে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিষয়ক বিশেষ সেমিনার এবং সন্তোষ দত্ত ও গুরু দত্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক প্রদর্শনী।

চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ সম্মান জানানো হবে শ্যাম বেনেগাল, ডেভিড লিঞ্চ, অরুণ রায়, রাজা মিত্র ও শশী আনন্দকে। ‘শোলে’র ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পরিচালক রমেশ সিপ্পি দেবেন সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল লেকচার।

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “এই উৎসব শুধু সিনেমা প্রদর্শনের নয়, এটি বাংলা ও বিশ্বের সংস্কৃতির সংযোগের প্রতীক। ঋত্বিক থেকে রায়— সবাই এই উৎসবের মধ্য দিয়ে ফিরে আসবেন নতুন আলোয়।”

৬ নভেম্বর নন্দন প্রাঙ্গণ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠবে উৎসবের। শহর জুড়ে সিনেমাপ্রেমীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠবে কলকাতা— যেখানে সেলুলয়েডে মিলবে অতীতের স্মৃতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।