বোলপুরের মোহনপুরে ব্রাত্য বসুর নতুন ছবি ‘শেকড়’, বিভূতিভূষণের গল্পে মাটির টান

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 5 d ago
ভারতীয় চলচ্চিত্রের বলিষ্ঠ অভিনেত্রী অসম-কন্যা সীমা বিশ্বাস, ব্রাত্য বসুর ছবির ভরকেন্দ্রে রয়েছেন তিনি
ভারতীয় চলচ্চিত্রের বলিষ্ঠ অভিনেত্রী অসম-কন্যা সীমা বিশ্বাস, ব্রাত্য বসুর ছবির ভরকেন্দ্রে রয়েছেন তিনি
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

বীরভূম জেলার বোলপুর স্টেশন থেকে মাত্র আধ ঘণ্টার পথ মোহনপুর গ্রাম। এই শান্ত গ্রামের বুকেই এখন সরগরম শুটিং সেট। পরিচালক ব্রাত্য বসু তাঁর নতুন ছবি ‘শেকড়’-এর দৃশ্য ধারণ করছেন এখানেই। প্রচণ্ড রোদে, ধুলোমাখা পথে, গ্রামের মাটিতে একের পর এক দৃশ্য ধারণ করছেন অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও লোকনাথ দে।
 
ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প, ‘দ্রবময়ীর কাশীবাস’ ও ‘দাদু’-এর সংমিশ্রণে। দুটি গল্পেই মানুষের শিকড়, স্মৃতি, ও জীবনের অনিশ্চয়তার সুর মিশে আছে। ব্রাত্য বসু সেই আবেগ ও বাস্তবতাকে পর্দায় আনতে বেছে নিয়েছেন বীরভূমের গ্রামীণ প্রেক্ষাপট।
 
পরিচালকের কথায়, “বিভূতিভূষণের গল্পে যে সরল অথচ গভীর মানবিক সুর, সেটাকে ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে গ্রামবাংলার মাটি ও আলো-ছায়া প্রয়োজন ছিল। তাই মোহনপুরের মতো প্রাকৃতিক লোকেশন খুঁজে পেয়েছি।”
 
বীরভূমের মোহনপুরে মহরতের ফাঁকে অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস, বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং ছবির পরিচালক তথা বঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু
 
শুটিং সেটে দেখা গেছে মাটির বাড়ি, খড়ের ছাউনি, পুকুরপাড়, মাঠ, সবই সাজানো হয়েছে ছবির চরিত্রদের জীবনের সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো করে। প্রতিটি ঘরের রঙ, সাজসজ্জা এমনকি মাটির দেওয়ালের টেক্সচার পর্যন্ত পরিচালক নিজে খুঁটিয়ে ঠিক করেছেন।
 
স্থানীয়দের অংশগ্রহণও ছবির বড় আকর্ষণ। কেউ হয়েছেন সহকারী, কেউবা ব্যাকগ্রাউন্ড চরিত্রে অভিনয় করছেন। এক গ্রামবাসী বলেন, “আমাদের গ্রামে আগে কখনও সিনেমা হয়নি। এত বড় বড় অভিনেতাদের কাছ থেকে দেখা খুব আনন্দের।”
 
ছবির মূল ভাবনা ঘুরছে “শেকড়”-এর ধারণাকে ঘিরে, মানুষ যতই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হোক, তার ভিতরকার মাটির টান কোনোদিন মুছে যায় না। গল্পের চরিত্ররা সেই শেকড়ের সন্ধানেই ফিরে যায় নিজেদের জন্মভূমিতে।
 
ব্রাত্য বসু তাঁর আগের কাজের মতো এখানেও সমাজ, পরিবার ও মানবিক সম্পর্কের গভীর প্রশ্ন তুলতে চাইছেন। তাঁর কথায়, “এই ছবি শুধু গ্রামীণ জীবন নয়, আমাদের আত্মপরিচয়ের কথাও বলবে।”
 
ছবির প্রধান চরিত্রে রয়েছেন সীমা বিশ্বাস, যিনি দ্রবময়ীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। চঞ্চল চৌধুরী ও লোকনাথ দে দুই প্রজন্মের প্রতীক হিসেবে উঠে আসছেন ছবিতে। ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি হবে লোকসংগীতের ছোঁয়ায়, যা গল্পের আবহকে আরও মাটির কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
 
‘শেকড়’-এর শুটিং শেষ হবে নভেম্বরের মধ্যে, এবং আগামী বছর মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুটিংয়ের কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। দর্শকরা বলছেন, “ব্রাত্য বসুর ছবিতে আবার ফিরবে মাটির গন্ধ।”