শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার প্রিয় জুবিনের অন্তিম যাত্রা

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 11 d ago
জুবিন গার্গ(ফাইল চিত্র)
জুবিন গার্গ(ফাইল চিত্র)
অঞ্জু শাণ্ডিল্য 

আপনি কি এভাবেই যেতে পারেন?  অসমকে এত ভালবাসেন এমন একজন শিল্পীর কি সুদূরের সিঙ্গাপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা উচিত?  খবরটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অসমে শোরগোল পড়ে যায়। আর আমরাও পারলাম না। আমাদের মন শৈশবে ফিরে যায়। বিকেলে আমরা জোড়হাটে আমাদের বাড়ির সামনের পুকুরে বসেছিলাম যখন পাকুন (জয়শ্রী) সহ একটি মিষ্টি ছেলে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। পাকুন ছেলেটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল-"এটা হল গোল্ডি, আমাদের মামার ছেলে। সে তামুলপুরে থাকে। গ্রীষ্মের ছুটিতে এসেছে। "

ছেলেটার দিকে দেখি। মোজা ছাড়া স্পোর্টস জুতো, হাফ প্যান্ট, টি-শার্ট পরা ছেলেটির মুখে মিষ্টি হাসি।  আমাদের পাশে বসা ছেলেটির লম্বা চুল ছুঁয়ে দেখলাম। এটাই প্রথম দেখা। স্কুলের ছুটিতে জোড়হাটে আসার পর আমাদের মাঝে মাঝে দেখা হত। এক সময় তমুলপুর থেকে আসার পর গলদি জোড়হাটের বাংলাপুখুরীতে থাকতে শুরু করেন। জোড়হাট মিউজিক স্কুলে তবলা শেখার সময় গোল্ডির সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা হত। ১৯৯৩ সালে আমরা গুয়াহাটিতে আসি এবং গোল্ডিও বি. বরুয়া কলেজে ভর্তি হন। 
 

জুবিন গার্গের মঞ্চে গান পরিবেশনের এক মুহূর্ত

তবলা ও কিবোর্ড বাজানো গল্ডি অসমের মানুষজনের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল ‘অনামিকা’ গানের সংকলনে গান গাওয়ার মাধ্যমেই। ধীরে ধীরে অসংখ্য অ্যালবাম, ভিডিও সিডি সিনেমা, ক্যাসেট—সবখানেই গল্ডির গান ছড়িয়ে পড়ে।রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গল্ডি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠে। ‘অনামিকা’ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত—সংগীত, চলচ্চিত্র, আন্দোলন, সমাজের জ্বলন্ত সমস্যাগুলোর জন্য কোথায়, কী, কত কিছু করেছে গল্ডি, সব যদি একে একে লেখা হয়, তবে সেটা এক মহাভারতের মতো হয়ে উঠবে।

তবুও বলতে হয় — সবাই জানে, সবাই অনুভব করে।“জুবিন গার্গ” বললেই শিশু থেকে বৃদ্ধ — সবাই ভালোবাসে। আসলে, গল্ডিকে তো সবাই “জুবিন গার্গ” নামেই চেনে, জানে।শৈশবের সেই দুষ্টু-মিষ্টি, আপনভোলা, মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসা গল্ডিই তো আজকের জুবিন গার্গ। সেই গল্ডি, যিনি মাঝে মাঝে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, অকপটে কিছু বলে ফেলেন, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন।

সেই সময় আমি কখনো রাগ করে ফোনে বলি—"কেন, কেন এমন করছ বলো তো? এত মানুষ তোকে ভালোবাসে! এমন করলে তোর প্রতি মানুষ বিতৃষ্ণা পাবে। জানিস কত লোক কষ্ট পেয়েছে?"ওর উত্তরে আসে—"আজ কষ্ট পেয়েছে, কাল আবার আমায় ভালোবাসবে।আর তুই ভালোবাসিস বলেই তো আমায় এভাবে বলতে পারছিস।আর যখন বলিস, আমি বুঝতে পারি তোর চোখে জল এসেছে।"
 
জুবিন গার্গের কীবোর্ড বাজানোর একটি মুহূর্ত

আমরা সত্যিই কাঁদছিলাম। জুবিনকে ভালবাসেন এমন অগণিত মানুষের অশ্রু বেরিয়ে আসে, যখন জুবিন একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, এমন কিছু বলে যা বলা উচিত নয়, এতে হৈচৈ তৈরি করে। সবাই চায় জুবিন গার্গ সোনার মতো উজ্জ্বল হোক। গোল্ডি, গোল্ডি হও।সংগীত, কলা-কৃষ্টির সোণালী যাত্রা অব্যাহত থাকক।।

কিন্তু তা হয়নি। গোল্ডি আমদের ছেড়ে চলে গেছে ।  সবাইকে  কাঁদিয়ে, দুঃখের সমুদ্রে ডুবিয়ে চলে গেলেন ফিরে নাআশা পথে চলে গেলেন। দু 'দিন আগে আমি তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম তখন আমাকে বলেছিলেন,' আমার স্টুডিওতে আসবেন। ' অনেকদিন হয়েছে দেখা হয়নি। "কিন্তু সেটা আর দেখা হল না শেষবারের মতো সামনে থেকে দেখা হলনা। তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক। পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি সমবেদনা রইল।