শতানন্দ ভট্টাচার্য
মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতে পুরস্কৃত হলেন দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার শিলচরের ছেলে সুস্মিত নাথ। ফিল্মফেয়ার ওটিটি অ্যাওয়ার্ডে সেরা সাউন্ড ডিজাইনারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের সমালোচকদের প্রশংসিত ওটিটি সিরিজ 'স্টোলেন'- এর জন্য সোমবার মুম্বইয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুধু সুস্মিত নন, সেই অনুষ্ঠানে ওটিটি দুনিয়ার সেরা সিরিজ, ওয়েব ফিল্ম, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও অন্যান্য শাখার শ্রেষ্ঠদেরও পুরস্কার দেওয়া হয়।
সোমবার রাতে মুম্বাইয়ে ফিল্মফেয়ার আয়োজিত এই মর্যাদাপূর্ণ রঙিন জাঁকজমক অনুষ্ঠানে শত শত তারকার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ভিকি কৌশলও। এরকম এক গ্ল্যামারাস প্লাটফর্মে শিলচরের ছেলের উপস্থিতি সবাইকে আনন্দিত ও গর্বিত করেছে। অভিষেক ব্যানার্জী অভিনীত ২০২৩ এর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের টানটান উত্তেজনায় ভরা 'স্টোলেন' ছবিতে তাঁর অসাধারণ শব্দ সংযোজনার জন্যে সবাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। 'বব' অর্থাৎ সুস্মিত নাথের ভাষায়, "সাউন্ডের জন্যে 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' ছবিতে রেসুল পুকুতি অস্কার পুরস্কার জেতার পর থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং সেইস্বপ্ন কিছুটা হলেও স্বার্থক হয়েছে" বলে জানান।
শিলচর শহরের বিবেকানন্দ রোড এলাকার ছেলে সুস্মিত ১৯৯৯ তে স্কুল ফাইনেল পরীক্ষা পাস করে জি সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে দিল্লিতে একটি কল সেন্টারে যোগ দেন কিন্তু অন্য কিছু একটা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রচেষ্টায় তিনি রত থাকেন। ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্যে এন্ট্রান্স দেন এবং সফলতা আসে প্রথমবারই। ভর্তি হয়ে যান সাউন্ড রেকর্ডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা কোর্সে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল অব্দি মুম্বাইয়ে এইসব নিয়েই পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকেন। এরপর ডাক আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। মুম্বাই ছাড়াও বিভিন্ন সিনেমায় সাউন্ডের কাজ করেছেন ক্যানস, সান্ডেন্স, টরন্টো, ভেনিস প্রভৃতি এলাকায়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদানের পরবর্তী সময়ে তাঁর কাজকে সমৃদ্ধ করেছে অস্কার মনোনীত তথ্যচিত্র 'রাইটিং উইথ ফায়ার' (সুপারভাইজিং সাউন্ড এডিটর ও সাউন্ড ডিজাইনার) এবং 'অল দ্যাট ব্রিদস' (সিনিয়র সাউন্ড ডিজাইন কনসালট্যান্ট) এর মত আন্তর্জাতিক মানের প্রজেক্ট।
অবশ্য তিনি একজন সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে জীবনের স্বপ্নপূরণ এবং স্বাধীন চলচ্চিত্র ও বিশ্ব সিনেমা ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এফটিআইআই-কে কৃতিত্বও দেন তিনি। তিনি অসম তথা জন্মমাটি শিলচরের মানুষকে অনেক অনেক ধন্যবাদও জানান এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করার জন্যে আশীর্বাদ চেয়ে নেন।