জুবিন গার্গকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে সিনেমা হলে প্রদর্শিত হল "রই রই বিনালে"
গুয়াহাটি
অসমের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আজ রচিত হল এক নতুন অধ্যায়। আজ ভোররাত ৪টা ২৫ মিনিটে মুক্তি পেল অসমের প্রাণের শিল্পী জুবিন গার্গের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘ৰৈ ৰৈ বিনালে’ (রৈ রৈ বিনালে)। প্রতিটি অসমিয়ার হৃদয়ের স্পন্দন, আশার আলো এবং ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটল এই মুক্তিতে। সিনেমাটি দেখতে দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো, প্রবল বৃষ্টি সত্ত্বেও মধ্যরাত থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন অনুরাগীরা। কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রিয় শিল্পীর ছবিটি দেখার জন্য তাঁরা রাত জেগে ছিলেন।
গুয়াহাটির মেট্রিক্স সিনেমা হলে ভোর ৪টা ২৫ মিনিটেই শুরু হয় প্রথম প্রদর্শনী, যা নিজেই এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পেল ভোররাতে। মুক্তির আগেই রাত ৩টা ৩০ মিনিটে দর্শকরা হলে উপস্থিত হন, আর প্রথম দৃশ্য দেখেই অনেকে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন, প্রাণের শিল্পীকে জীবন্ত রূপে দেখার আবেগ সামলাতে পারেননি কেউ কেউ।
জুবিন গার্গের জন্য সিনেমা হলে সংরক্ষিত একটি বিশেষ আসন
জুবিন গার্গ এখন শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও, তাঁর প্রতি অসমবাসীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা যে অমর, তা স্পষ্ট হয়ে উঠল প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে। প্রায় সব সিনেমা হলেই তাঁর জন্য সংরক্ষিত ছিল একটি বিশেষ আসন। গুয়াহাটির মেট্রিক্স হলে জুবিনের জন্য রাখা হয়েছিল একটি সোফা, যার ওপর সুন্দরভাবে পরানো হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী "গামোচা"(অসমিয়া গামছা), আর তার ওপরে রাখা হয়েছিল জুবিনের একটি ছবি। মনে হচ্ছিল, যেন রাজাসনে বসে নিজেই উপভোগ করছেন তাঁর স্বপ্নের সৃষ্টি।
অন্যদিকে ঢেকিয়াজুলির নক্ষত্র সিনেমা হলে প্রথম সারিতেই সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল জুবিনের জন্য একটি আসন, যার ওপর রাখা ছিল তাঁর রাজকীয় ভঙ্গিমার একটি ফটো কাটআউট। দর্শকরা জানান, তাঁরা যেন ছবির প্রতিটি ফ্রেমে জুবিনকেই অনুভব করেছেন।
অসমজুড়ে ৯৪টি প্রেক্ষাগৃহে প্রতিদিন ৪৫৬টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ছবিটির। শুধু গুয়াহাটিতেই ১৩টি হলে প্রতিদিন ১৫৭টি প্রদর্শনী হবে। সকাল ৬টা থেকেই শুরু হবে প্রথম শো। তাছাড়া বিজয়নগর, রঙিয়া, মঙলদৈ, ছয়গাঁও, নলবাড়ি, বঙাইগাঁও, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, যোরহাট, গোলাঘাট, নগাঁও, তেজপুর, লখিমপুর, ডিফু, হাফলং, শিলচর ও মার্ঘেরিটা, সব জায়গায়ই দর্শকদের উন্মাদনা তুঙ্গে।
অসমের বাইরেও মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি, ইটানগর, নাহারলাগুন, মুম্বাই, দিল্লি-এনসিআর, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আহমেদাবাদ, পুনে, চেন্নাই, কলকাতা ও কোচি; সব জায়গাতেই প্রতিদিন একাধিক প্রদর্শনী হবে।
‘রৈ রৈ বিনালে’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি হয়ে উঠেছে অসমবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক। নব্বই বছরের অসমীয়া চলচ্চিত্র ইতিহাসে এই ছবি যেন এক নতুন ভোরের সূচনা। জুবিন গার্গ হয়তো আজ শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তাঁর সঙ্গীত, শিল্প ও আত্মা আজও বেঁচে আছে লক্ষ লক্ষ হৃদয়ে, আর এই ছবির মাধ্যমে তিনি যেন ফিরে এলেন আবার, আলো আর ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতে সমগ্র অসমকে।