হুগলির স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে 'সজাগ মঞ্চ' সমাজ সেবায় পথ দেখাচ্ছে বৃহত্তর বাংলাকে

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 3 d ago
বাহারুল ইসলাম
বাহারুল ইসলাম
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

মানুষ স্বপ্ন বিলাসী। প্রতি নিয়ত ছুটে চলে স্বপ্নের পেছনে। কখনও তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় কখনও হয়না। কিন্তু তা বলে মানুষ স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে না। কারণ, স্বপ্ন দেখার অধিকার তার জন্মগত। আর এই স্বপ্নই শেখ বাহারুল ইসলামের প্রাণভোমরা। হ্যাঁ, এই সেই মানুষ যিনি নিজের স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে সমাজসেবার গুরুদায়িত্বকে অন্তরে লালন করেন।
 
সেই কোন ছোটবেলায় এক বৃদ্ধার কষ্ট দেখে যিনি স্থির থাকতে পারেননি। বৃদ্ধার কাঁখের ভারী জিনিসপত্র নিজে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন বৃদ্ধার বাড়ি পর্যন্ত । আর সেই শুরু। এই পরোপকারের ভাবনা বলা বাহুল্য 'পরোপকারের নেশা' আজও সমানতালে বহমান। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিণত বাহারুল আজ হুগলি জেলার এক পরিচিত মুখ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির বালিপুরে জন্ম বাহারুল ইসলামের। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ তিনি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে বিস্তৃত করেছেন নিজের ডালপালা।
 
সালটা ২০১৬-র মাঝামাঝি। বাহারুল তখন কলকাতায় জমিয়ে নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অত্যন্ত ব্যস্ত তিনি তখন। কিন্তু সমাজসেবার নেশা যাঁর রক্তে, কাটখোট্টা ব্যবসায়িক হিসাবনিকাশ কি তাঁকে থামাতে পারে? তাই ব্যবসার কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়লেন সমাজসেবার মহান ব্রতে। সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে গড়ে তুললেন 'বেঙ্গল পিপলস ফোরাম।' মাত্র দু-মাসের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠান রূপ নিল 'সর্বজন জাগরণ গণকল্যাণ মঞ্চ' বা 'সজাগ মঞ্চ' নামে। এখান থেকেই শুরু হল বৃহত্তর ক্ষেত্রে 'সজাগ মঞ্চ' তথা বাহারুলের পথচলা।
 
গাছ রোপন করা মুহূর্তে বাহারুল ইসলামের একটি ছবি 
 
বাহারুলের কথায়, "এই কাজের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দেব আমি বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিল্পপতি, কবি ও সাহিত্যিক শেখ আফতাবউদ্দিন সরকারকে। কেননা,  তাঁর প্রেরণাতেই 'বেঙ্গল পিপলস ফোরাম' পরিণত হয় 'সজাগ মঞ্চে'। মঞ্চের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আফতাবউদ্দিন সাহেব। 'সজাগ মঞ্চ' নামটিও তাঁরই দেওয়া।"
 
সজাগ মঞ্চের বর্তমান ও প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক শেখ বাহারুল ইসলামের কথায়, "সজাগ মঞ্চ গুটি গুটি পায়ে ইতিমধ্যেই পার করে ফেলেছে বেশ কয়েকটি বছর। এই ক'বছরে মঞ্চের কাজের ফিরিস্তি দিতে গেলে গোটা একটা বই হয়ে যাবে।"
 
'সজাগ মঞ্চ' গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাহারুল বলেন, 'সমাজসেবী সংগঠন তো অনেক আছে। তাহলে নতুন করে আবার এমন একটা সংস্থা তৈরির দায় পড়ল কেন? আসলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হয়রানি, অসহায়তা আমাদের হৃদয়কে বিক্ষত করে তোলে বারংবার। সেই দায়বোধ থেকেই একটু হলেও যদি মানুষের কাজে এগিয়ে আসতে পারি, তার জন্যই 'সজাগ মঞ্চ' গড়ে তোলা।" তিনি বলেন, "দায়বোধের চিন্তা করলে বেশিরভাগ এনজিও বা সমাজসেবী সংস্থাগুলো ফুলেফেঁপে উঠত না। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত তারা। আর এখানেই ব্যতিক্রম 'সজাগ মঞ্চ।' নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করার দুঃসাহস দেখিয়েছি বলেই আমরা আজ সর্বজনপ্রিয়। নিঃস্বার্থ মানবসেবার তাগিদকে পাথেয় করেই তাই উল্কার গতিতে ছুটে চলেছে আমাদের স্বপ্নের সজাগ মঞ্চ।" 
 
তবে এই পথচলা এতটা সহজ ছিল না। হুগলির রামমোহন উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। তার কারণ বাহারুলের প্রতিবাদী স্বভাব এবং সৎ মানসিকতা।  আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। তৎকালীন শাসকদলের গুণ্ডাদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। চলে এলেন কলকাতায়। নিজের চেষ্টায় এবং পিতার আর্থিক সহযোগিতায় বই বাঁধাই এবং প্রিন্টিং লাইনে মনোনিবেশ করলেন। আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে এলো স্কুল-জীবনের স্মৃতি।
 
সমাজ সেবায় কর্মরত বাহারুল ইসলামের একটি ছবি 
 
হুগলির সু-সন্তান বিশিষ্ট সমাজসেবী আফতাবউদ্দিন সরকার আরেক জন মানবদরদী সমাজসেবী। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না বাহারুলের। কাকতালীয়ভাবেই একরকম তৈরি হল পরিচয়ের আবহ। তার পরের ইতিহাস তো সকলেরই জানা। 'আফতাবউদ্দিন চাচা'-র হাত ধরেই শুরু হল বাহারুলের পথচলা। সময় এগিয়ে চলে তার নির্দিষ্ট গতিধারা অনুসরণ করে। তাই সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে হয় সকলকেই। যিনি পিছিয়ে পড়েন তিনি পরাজিত হন সময়ের কাছে। আর যিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, আমাদের কাছে সফল মানুষ বলে পরিচিতি পান তিনি। কিন্তু বাহারুল যেন এর চেয়েও এককদম এগিয়ে। সময়কে ছুঁয়ে, সময় পেরিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর যাপিত জীবনের মুকুটে যুক্ত হয়েছে 'সময়-জয়ী' অভিধা। আর এই পথ ধরেই তাঁর সঙ্গে একে একে যুক্ত হয়েছেন মানবদরদী ব্যক্তিরা।
 
নিজের একমাত্র বোন থেকে শুরু করে স্কুল-জীবনের বন্ধুরা বাহারুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রথমদিকে ঘরোয়াভাবে তাঁদের সেবার কাজ শুরু হলেও বৃহত্তর আঙিনায় বাহারুল এসে পড়েন আরও কিছুটা পরে।
 
বাহারুলের নেতৃত্বে 'জঙ্গলমহল' নামে পরিচিত পুরুলিয়া জেলা জুড়ে ইফতার সামগ্রী ও শীতবস্ত্র বিতরণ করে মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেয় 'সজাগ মঞ্চ।' লকডাউন পিরিয়ডটা খেটে খাওয়া সাধারণ গরিবগুলো মানুষের কাছে যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চারিদিকে হাহাকার শুনে স্থির থাকতে পারেনি 'সজাগ মঞ্চ।' এখানেও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাহারুল। কিন্তু তাঁর এই কাজে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন সজাগ মঞ্চের কোষাধ্যক্ষ তথা বাহারুলের বাল্যবন্ধু শেখ ইয়াসিন আলি। ত্রাণ নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান মানুষের দরজায় দরজায়। একবার মাঠে নেমে পড়লে যেমন আর ফিরে আসা যায় না, বাহারুলরাও সেই নীতিবাক্যের কবলে পড়ে আর ফিরতে পারেননি। ৩০০ মানুষের জন্য করলেন খাদ্যসামগ্রী ও ইফতার সামগ্রীর ব্যবস্থা। পেলেন মানুষের অজস্র ভালোবাসা আর দোয়া। এর মধ্যেই গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এসে হাজির 'আমফান' ঝড়। নিঃস্ব-অসহায় মানুষগুলো পড়লেন আরও ফাঁপরে। ঈদের সামান্য সিমাইটুকু কেনার পয়সা জোগাড় করাও যে তাঁদের জন্য দুরূহ। এ কথা কানে গেলে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি মানবদরদি বাহারুলরা। সিমাই ও চিনির ব্যবস্থা করে দিয়ে মুখে হাসি ফোটালেন অসহায় মানুষগুলির। 
 
বাহারুলদের এই কাজ যেমন প্রশংসিত হল, তেমনই এলাকার তরুণ তুর্কীদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ল ব্যাপকভাবে। তরুণ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা একে একে আসতে লাগলেন 'সজাগ মঞ্চে'র ছাতার নিচে। এই ধারাতে প্রথমেই যুক্ত হলেন বালিপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তথ্য শিল্পপতি শেখ একরামুল হক। যিনি তাঁর লজের একটি ঘর অফিস হিসাবে দান করলেন। 'সজাগ মঞ্চে'র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে দিলেন লজের মধ্যে থাকা বিরাট কমিউনিটি হলখানা। 
 
'সজাগ মঞ্চ' অনুষ্ঠিত ইফতার সামগ্রী বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে বাহারুল 
 
বর্তমানে 'সজাগ মঞ্চে'র অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ একরামুল হক ওরফে আক্রাম ভাই। সেই ২০২১ সালে ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়ে তার ব্যয়ভার এখনও বহন করে চলেছেন বিশিষ্ট সমাজদরদি এই মানুষটি। বাহারুলের স্কুলজীবনের সহপাঠী তথা বাল্যবন্ধু আমেদাবাদ প্রবাসী মীর সম্রাটও মুগ্ধ হলেন 'সজাগ মঞ্চে'র কাজে। নিজ উদ্যোগে ফোন করলেন সম্পাদক বাহারুল ইসলামকে। 'সজাগ মঞ্চে'র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বাড়িয়ে দিলেন আর্থিক সহযোগিতার হাত। শেখ ইন্তাজুল হোসেন বাপী, শেখ মিসবাউল হক, শেখ ফজলুল, শেখ সালাউদ্দিন মল্লিক, শেখ বাবলু আলি, শেখ নূর মহম্মদের মতো স্বর্ণব্যণবসায়ী এবং অধ্যাপক ড. মইনুল রহমান, শিক্ষাবিদ মীর্জা আনিসুর রহমানের মতো বিশিষ্টরাও 'সজাগ মঞ্চে'র থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেন না। স্বেচ্ছায় জুড়ে গেলেন এই মঞ্চের সঙ্গে। আর একজনের কথা উল্লেখ করতেই হয় কথা প্রসঙ্গে। তিনি শেখ ফিরোজ আলী। 'সজাগ মঞ্চ' কিছু দুঃস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে বিনা সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই ঋণের জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান দিয়ে 'সজাগ মঞ্চে'র ভার লাঘব করেছেন সেখ ফিরোজ আলী।
 
বহতা নদীর মতো বয়ে চলেছে 'সজাগ মঞ্চ।' তার কাণ্ডারী শেখ বাহারুল ইসলাম শিখর ছোঁয়ার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন। তিনি যে একদিন শিখরের শীর্ষদেশে পৌঁছে যাবেন, একথা এখন থেকেই হলফ করে বলা যায়। কারণ বহুমুখী কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যেই 'সজাগ মঞ্চ' সমাজের বুকে নিজের ছাপ রেখে চলেছে। প্রবল করোনার কালে মুমুর্ষু রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা বা ত্রাণসামগ্রী বিলি, কনকনে ঠাণ্ডায় শীতবস্ত্র বিতরণ হোক বা বাচ্চাদের স্টাডি কিট-সবকিছুতেই সেরার সেরা তকমা পেয়েছে এই সামাজিক সংগঠন। এমনকী বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রেও সামাজিক এই সংগঠনটির জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবছর রক্তদান শিবির করে আসছে 'সজাগ মঞ্চ।' সমাজের গুণী ব্যক্তিদের সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের পুরস্কৃত করা হয় মঞ্চের তরফ থেকে। 
 
এই মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল মঞ্চের উদ্যোগে মাসে দু'দিন রোগীদের স্বাস্থ্য‌ পরীক্ষা। আর এর জন্য বসছেন কমিউনিটি হেলথ অফিসার আনোয়ারা পারভীন। 'সজাগ মঞ্চে'র সহ-সভাপতি ছাড়াও তিনি স্বাস্থ্যসেবা কমিটিরও চেয়ারপার্সন। বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন তিনি। অপরদিকে শুধুমাত্র মহিলাদের চিকিৎসার জন্য মাসে একদিন বসছেন একজন মহিলা গাইনোকলজিস্ট। যার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করছেন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আফতাবউদ্দিন সরকারের জেষ্ঠ্য পুত্র শিল্পপতি সেখ আলতাফউদ্দিন সরকার। পাশাপাশি শিক্ষকদের এনে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের ব্যবস্থাও করেছে 'সজাগ মঞ্চ।' এছাড়াও দূরশিক্ষার মাধ্যমে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
 
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা 'মিসাইলম্যান' নামে খ্যাত ড. এ. পি. জে. আব্দুল কালাম একবার বলেছিলেন, 'স্বপ্ন সেটা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।' এই আপ্ত বাক্যকেই হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছেন বাহারুল ইসলাম। তাই তো স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করে চলেছেন তিনি। 'সজাগ মঞ্চ'র সাফল্যকে পুঁজি করেই মিশন স্কুল প্রতিষ্ঠার মতো বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে হাত দিয়েছেন।  'সজাগ মঞ্চ'র উদ্যোগে মিশন নির্মাণের কাজ শুরু হয় দুবছর আগেই। ২০২৪ সালেই পঠন-পাঠন শুরুর মধ্যে দিয়ে পথচলা শুরু হয় বাহারুলের স্বপ্নের মিশনের। ইতিমধ্যেই ৪৫ বিঘা জমি হাতে এসেছে মঞ্চের ট্রাস্টি বোর্ডের। 'সজাগ মঞ্চে'র সভাপতি নিজেই মিশনের জন্য দান করেছেন এক বিঘা জমি। এই তালিকায় নাম জুড়েছে শেখ একরামূল হক, মীর সম্রাট, শেখ ফজলুল, শেখ ইন্তাজুল হোসেন বাপী, শেখ মিসবাউল হক, সালাউদ্দিন মল্লিক, শেখ নইম, শেখ কালোর মতো মহৎ হৃদয়ের মানুষগুলোর।
 
বাহারুল ইসলাম তার 'সজাগ মঞ্চ' গঠনের সংগঠনের সমাজকর্মীদের সঙ্গে 
 
অনুভূতি বা আবেগের স্রোতে ভেসে গিয়ে নয়, সমাজটাকে বাহারল দেখেন রূঢ় বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে এই কাজ করার পর যে শান্তি বা তৃপ্তি তিনি পান, প্রকৃত অর্থেই তা অকৃত্রিম। বোধহয় সেই কারণেই কাজ করার উৎসাহ তাঁর বেড়ে যায় শতগুণ। সেই উৎসাহকে পাথেয় করেই গতবছর বন্যায় খানাকুল, মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলা সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২ লক্ষ টাকার ত্রাণসামগ্রী তাঁরা তুলে দেন মানুষের হাতে।
 
তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় শেখ বাহারুল ইসলাম। স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁর ওপর সাংসারিক দায়দায়িত্ব একটু বেশিই বর্তায়। স্ত্রী, বাবা-মা এবং দুই ছেলেমেয়ের জনক বাহারুল এই দায়িত্ব পালনে কোনো কার্পণ্য করেননি কখনও। ফলে পরিবারও অত্যন্ত খুশি তাঁর ওপর। এক সময়ের অভিজাত বংশ হলেও এখনও তার কৌলিনা খর্ব হয়নি। যথেষ্ট সম্মানিত তাঁর পরিবার। প্রায় সকলেই শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত।
 
শেখ বাহারুল ইসলাম অজাতশত্রু মানুষ নন। তিনি মনে করেন ভালো কাজ করতে গেলে সমালোচনা-কটুক্তি থাকবে। সেসব সহ্য না করতে পেরে পিছিয়ে আসাটা বাহাদুরি নয়। বরং কাজের মধ্যে দিয়েই শত্রুদের মুখে ছাই ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। তবে মানবপ্রেমী এই মানুষটি শত্রুকেও বুকে টেনে নিতে চান। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির রেখে সবাইকে নিয়ে চলার পক্ষপাতী তিনি। কারণ, মানুষের কল্যাণটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়। 'Rise the hand of humanity' অর্থাৎ সকলের দিকে মনুষ্যত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে 'সজাগ মঞ্চ' তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ব্যক্তি বাহারুলের অন্যতম ধ্যানজ্ঞান। তাই তো সমাজের প্রতি তাঁর বার্তা-পৃথিবীতে আসা এবং পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার মাঝে যেটুকু সময় পাওয়া যাবে সেই সময়টুকুকে মানবসেবার কাজে লাগাতে হবে। কারণ মানবসেবার থেকে বড় কাজ কোনো কিছুতেই নেই।