স্ক্র্যাপ থেকে স্মার্ট সড়কযান: সুরাটের তিন পড়ুয়ার হাতেই জন্ম নিল AI বাইক ‘গরুড়’

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 2 d ago
AI বাইক ‘গরুড়’
AI বাইক ‘গরুড়’
 
নয়া দিল্লি 

সুকুমার রায়ের কল্পনার জগতে যেমন অসম্ভব মুহূর্তে সম্ভব হয়ে ওঠে, তেমনই বাস্তবের মাটিতে এক বিস্ময়কর উদ্ভাবনের জন্ম দিলেন সুরাটের তিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। ফেলে দেওয়া যন্ত্রাংশকে নতুন জীবন দিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন এক অত্যাধুনিক এআই নির্ভর ইলেকট্রিক বাইক, নাম তার ‘গরুড়’। ছিল বাতিল লোহালক্কড়, আর সেখান থেকেই গড়ে উঠেছে ভবিষ্যতের স্মার্ট বাহন, যা কণ্ঠ নির্দেশে চলে, সামনে বাধা দেখলেই নিজে থেকে থেমে যায় এবং নিরাপত্তার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে।

ভগবান মহাবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শিবম মৌর্য, গুরপ্রীত অরোরা ও গণেশ পাটিলের এই বাইকটি শুধু প্রযুক্তির দিক থেকেই নয়, ভাবনার দিক থেকেও অভিনব। কারণ ‘গরুড়’-এর প্রায় ৫০ শতাংশই তৈরি ফেলে দেওয়া যন্ত্রাংশ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে। প্রায় এক বছর ধরে কাজ করে তাঁরা মাত্র ১.৮ লক্ষ টাকা খরচে এই প্রোটোটাইপটি দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, দামি, আমদানিনির্ভর যন্ত্রাংশ ছাড়াই কীভাবে স্মার্ট ও নিরাপদ ইলেকট্রিক বাইক বানানো যায়। 
 
কম্পিউটারের স্ক্রিনে AI বাইকের মডেল (ফাইল)
 
এই বাইকের কেন্দ্রবিন্দু হল একটি রেসপবেরি পাই, যা কার্যত ‘গরুড়’-এর মস্তিষ্ক। এই সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের মাধ্যমেই বাইকটি ভয়েস কমান্ড বুঝতে পারে, গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রয়োজনে নিজে থেকেই থেমে যায়। ওয়াই-ফাই সংযোগের সাহায্যে নির্দিষ্ট নির্দেশ, যেমন নির্দিষ্ট দূরত্বে গতি কমানো বা দাঁড়িয়ে যাওয়া, সহজেই কার্যকর হয়। ছাত্রদের দাবি, এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় দু’চাকা বাহন তৈরির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
 
নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই ‘গরুড়’ সবচেয়ে বেশি চমক দেয়। উচ্চ ক্ষমতার সেন্সর দিয়ে বাইকটি সারাক্ষণ সামনের রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে। ১২ ফুটের মধ্যে কোনও যানবাহন এলেই গতি কমে যায়, আর তিন ফুটের মধ্যে বাধা পড়লে আরোহী ব্রেক না চাপলেও বাইকটি নিজে থেকেই থেমে যায়। এমনকী কণ্ঠ নির্দেশেও নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এতে। পথ দুর্ঘটনায় জর্জরিত ভারতের প্রেক্ষাপটে এই এআই নির্ভর সুরক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। 
 
AI বাইকের ব্যাটারি (ফাইল)
 
ফিচারের দিক থেকেও কোনও প্রথম সারির ইলেকট্রিক বাহনের থেকে কম নয় এই বাইক। সম্পূর্ণ টাচস্ক্রিন ড্যাশবোর্ডে জিপিএস নেভিগেশন, ফোন কানেক্টিভিটি ও মিউজিক প্লেব্যাকের সুবিধা রয়েছে। সামনে ও পিছনের ক্যামেরা থেকে লাইভ ভিডিও সরাসরি স্ক্রিনে দেখা যায়, যা যানজটপূর্ণ শহুরে রাস্তায় চালকের সচেতনতা বাড়ায়। দৈনন্দিন ব্যবহার মাথায় রেখে রাখা হয়েছে ওয়্যারলেস মোবাইল চার্জিংয়ের ব্যবস্থাও।
 
পারফরম্যান্সের দিক থেকেও ‘গরুড়’ নজর কেড়েছে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতে চালিত এই বাইক ইকো মোডে একবার চার্জে প্রায় ২২০ কিলোমিটার এবং স্পোর্ট মোডে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার চলতে পারে বলে দাবি নির্মাতাদের। মাত্র দু’ঘণ্টায় সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাওয়ায় ইলেকট্রিক বাহনের অন্যতম বড় সমস্যা, চার্জিং সময়, অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এই প্রোটোটাইপ। 

AI বাইক প্রস্তুতিকরণের এক দৃশ্য  (ফাইল)
 
এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে শিবম মৌর্যের ইউটিউব যাত্রাও। ডিআইওয়াই ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর চ্যানেলের অনুসারীর সংখ্যা দুই মিলিয়নের বেশি। যদিও ভাইরাল জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে ‘গরুড়’ তাঁদের কাছে একটি ভিত্তি মাত্র, যার উপর দাঁড়িয়ে আরও বড় কিছু গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তিনজন।
 
‘গরুড়’ শুধু একটি ছাত্র-প্রকল্প নয়, এটি এক বার্তা। পরিবেশবান্ধব ভাবনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সীমিত সংস্থানের মধ্যেও যে বিশ্বমানের উদ্ভাবন সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছে সুরাটের এই তিন তরুণ। কর্পোরেট গবেষণাগারের বাইরে, কলেজের ওয়ার্কশপ থেকেই যে ভারতের আগামী দিনের স্মার্ট ও পরিচ্ছন্ন পরিবহণের ধারণা জন্ম নিতে পারে, ‘গরুড়’ তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।