নদিয়া জেলার নবদ্বীপে ফের একবার মানবিকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সামনে এল। মহিশুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মনিপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন গোপাল গোস্বামী। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাঁকে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর মুসলিম বাড়িওয়ালি আর্যুমনা খাতুন ও তাঁর স্বামী। শুক্রবার গভীর রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় গোপালের।
মৃত্যুর পর বড় সমস্যায় পড়েন বাড়িওয়ালারা। গোপাল গোস্বামীর কোনও আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় আর্যুমনা খাতুন ও ইসলাম সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, মানবিকতার দৃষ্টান্ত রেখে হিন্দু রীতি মেনেই গোপালের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
নবদ্বীপের গোপাল গোস্বামীর অন্তিম কার্য সম্পন্নে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীরা
শনিবার দুপুরে নবদ্বীপ মহাশ্মশানে হিন্দু মতে গোপাল গোস্বামীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মরদেহ কাঁধে তুলে নেন আমিরুল, মানোয়ার, রিপন ও রিহান-সহ একাধিক মুসলিম যুবক। শেষকৃত্যের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচও নিজেদের কাঁধে তুলে নেন আর্যুমনা খাতুন ও স্থানীয় প্রতিবেশীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপাল গোস্বামীর আদি বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়। পেশায় আইনজীবী ছিলেন তিনি।পারিবারিক বিবাদের কারণে তিনি মা-কে নিয়ে নবদ্বীপে চলে আসেন। কয়েক বছর আগে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই নবদ্বীপ থানা এলাকার জেলা পরিষদের সদস্যা আর্যুমনা খাতুনের বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন তিনি। প্রায় এক দশক ধরে নবদ্বীপেই বসবাস করছিলেন গোপাল।
নবদ্বীপের গোপাল গোস্বামীর অন্তিম কার্য সম্পন্নে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীরা
শ্রীচৈতন্যদেবের সম্প্রীতির বাণীতে গড়ে ওঠা নবদ্বীপে এই ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দিল, ধর্ম নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আসল পরিচয়। ভিন্ন ধর্মের হলেও মানবিকতার টানে এক হয়ে উঠলেন প্রতিবেশীরা, যা আজকের সময়ে সমাজের কাছে এক শক্তিশালী সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।