বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত আচারের যোগান দেওয়ার প্রচেষ্টা শ্বেহনাজ আহমেদের

Story by  Munni Begum | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 1 d ago
শ্বেহনাজ আহমেদ
শ্বেহনাজ আহমেদ
মুন্নী বেগম , গুয়াহাটি ঃ

আচার সবার প্রিয়। আচারে খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি হয়। কিন্তু বাজারে উপলব্ধ অধিকাংশ আচার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই গুয়াহাটির হাতিগাঁওর বাসিন্দা শ্বেহনাজ আহমেদ স্বাস্থ্যসম্মত আচার তৈরী করে বাজারে সরবরাহ করছেন।

আওয়াজ-দ্যা ভয়েস-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে শ্বেহনাজ আহমেদ বলেন, "সত্যি বলতে, আমি রান্না করতে খুবই ভালোবাসি। আমি অসমীয়া তরকারি যেমন টক, খাড়, ভর্তা, সহ অসমীয়া মুসলিম খাবার, বেকেরির সামগ্রী ঘরে তৈরি করি। এছাড়া আমি বিভিন্ন প্রকারের আচারের প্রস্তুতি করি। আমি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আয়োজিত রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। এই ক্ষেত্রে আমাকে আমার স্বামী যথেষ্ট সাহায্য উৎসাহ এবং সমর্থন দিয়েছেন। আমি রেঙণি টিভির 'গৃহিনী সুপারস্টার' শিরোনামের রান্নার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় বিজয়ী হয়েছি।"
 

 
শ্বেহনাজ আহমেদের খাদ্য সম্ভার
 
আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে টকজাতীয় ফলগুলি আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে। কিন্তু আম, আমলকি, করদৈ, চালতা, আমরা, জলপাই ইত্যাদি টকফলগুলি সবসময় পাওয়া যায় না। তাই অনেক দিন ধরে গুণাগুণ নষ্ট না হয়ে, মশলা, তেল এবং নুনে সংরক্ষণ করা পদ্ধতিতে আচার তৈরি হয়। পুরানো আচার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য আরও উপকারী বলে একটি ধারণা রয়েছে। তাই ঘরে মহিলারা খুব তাড়াতাড়ি বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি করেন। আচার তৈরির পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ফলগুলোতে তেল, মশলা ইত্যাদির মিশ্রণ এবং রোদে শুকানোর ফলে এগুলোর গুণ বাড়ে। নুনে রাখা তেতুল, গোললেবূ প্রভৃতি আচার যতদিন রাখা হয়, ততদিন এগুলোর গুণ বৃদ্ধি পায়।

শ্বেহনাজ আহমেদ বলেন, "আমাদের সবার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আচার অপরিহার্য। কিন্তু বাজারে যে আচার পাওয়া যায়, তাতে প্রচুর পরিমাণে নুন এবং মশলা থাকে। তাই আমি কম নুন এবং মশলা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত আচার প্রস্তুত করি। আমি আম, মরিচ, মোচা, আমলকি, জলপাই, চালতা, কাচাকলা, টমেটো, রসুন পাতা, ভুত মরিচ(নাগা মরিচ), ওলকচু, গাজর, লেবূ, বাস গাজ, আদা-মরিচ, মাংস, কূল, মেথি প্রভৃতি আচার প্রস্তুত করি। জিরা, সরিষা, মোরি, রান্নার মশলা, ধনিয়া, মরিচ এবং তেল ব্যবহার করে অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আচার তৈরি করি।"
 

শ্বেহনাজ নানান আচার নিয়ে 
 
বহুতে ভাবে মশলা খেলে অন্যায় হতে পারে। আসলে আমি আচার প্রস্তুত করতে যে মশলা ব্যবহার করি তা হলো হলুদ, জিরা, গুল মরিচ, মেথি,  জৈন, মিষ্টি জিরা, লং, এলাচি, দারচিনি ইত্যাদি। এগুলি শরীরের রোগভেদে প্রতিদিনই আমাদের শরীর রক্ষা করে ঔষধের কাজ করে। কারণ মেথি, লং, এলাচি, দারচিনি ইত্যাদি কফ এবং বাতজনিত রোগে উপকারী,  জৈন বা জোয়ান , জিরা, কালোজিরা ইত্যাদি পিত্তজনিত রোগে উপকারী। ফলে মশলা শরীরের বাত, পিত্ত, কফের সমতা রক্ষা করতে যথেষ্ট সাহায্য করে, বলছেন শ্বেহনাজ।

শ্বেহনাজ আহমেদ আচার প্রস্তুত করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন এবং আচার ব্যবসা শুরু করে নিজের উপার্জনের পথ খুলে নিয়েছেন। পরিষ্কার এবং ঘরোয়া খাবার এবং আচার প্রস্তুতির জন্য শ্বেহনাজ গ্রাহকদের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছেন। গ্রাহকরা ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে শ্বেহনাজকে অর্ডার দেন। শ্বেহনাজ নিজে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে খাবার সরবরাহ করেন এবং অনেক গ্রাহক অর্ডারগুলি শ্বেহনাজের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। শ্বেহনাজ এখন ছোট ছোট পার্টি, জন্মদিন ইত্যাদির জন্য খাদ্য প্রস্তুত করেন।

শ্বেহনাজ বলেন, "প্রথমে আমি বাড়ির লোকজনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অসমীয়া ব্যঞ্জন প্রস্তুত করতাম। সেগুলোর জন্য আমি সবাই থেকে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিলাম। তারপর আমি আমার খাবারগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবলাম এবং সফলতা পেলাম। এখন আমার রান্না করা খাবার গ্রাহকদের মধ্যে যথেষ্ট চাহিদা লাভ করেছে।"
 

 
সুস্বাদু চাটনি আদি
 
শ্বেহনাজ আহমেদ শুধু আচারই নয়, বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু অসমীয়া ব্যঞ্জন, পিঠা-লাডু, কেক ইত্যাদির পাশাপাশি মোগল খাবার যেমন বিরিয়ানি, পোলাও, চিকেন রোস্ট, কোফতা, কাবাব ইত্যাদি প্রস্তুত করে বেশ কিছু সম্মান লাভ করেছেন।

শ্বেহনাজ তার ব্যবসার বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, "কোভিডের আগে আমি যা আচার প্রস্তুত করতাম,তা বিক্রির জন্য আশেপাশের দোকানগুলোতে সরবরাহ করতাম। কিন্তু কোভিডের সময় আমার ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।  কোভিডের পড়ে আমি আবার বিক্রি শুরু করেছি। আমি নতুন করে আচার বিক্রির  পরিকল্পনা করেছি। এখনও আমার বাড়ি থেকেই বিভিন্ন লোক আচার কিনতে আসে। এছাড়াও, অনেকেই আমাকে খাবার এবং আচার অর্ডার করেন। তাছাড়া, আমি ছোট ছোট অনুষ্ঠানের জন্য যেমন জন্মদিন, গেট টু গেদার ইত্যাদির জন্য খাবার সরবরাহ করি।"