মুন্নী বেগম , গুয়াহাটি ঃ
নিজেকে সাজিয়ে সুন্দর হয়ে থাকাটা প্রায় প্রত্যেক নারীরই কাম্য। কিন্তু বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি যদি কোনো মহিলা অন্য নারীদের জীবনেও সৌন্দর্যের ছোঁয়া এনে দিতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে সেই নারী সমাজে একটি ব্যতিক্রমী অবস্থান লাভ করেন। ঠিক তেমনই একজন নারী হলেন রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ নাজনীন সুলতানা আহমেদ, যিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত "নাজনীন মেকওভার, প্রফেশনাল মেকআপ অ্যান্ড বিউটিশিয়ান ট্রেনিং একাডেমি"-এর মাধ্যমে বহু মহিলা ও যুবতীকে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে তাঁদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছেন।
রূপচর্চাবিদ নাজনীন সুলতানা আহমেদ
‘আওয়াজ দ্য ভয়েস’ এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নাজনীন সুলতানা আহমেদ বলেন,"আমি ছোট থেকেই নিজে সুন্দর হয়ে থাকতে এবং অন্যদেরও সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিতে ভালোবাসতাম। মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার সময়েই আমি মেকআপের প্রশিক্ষণ নিই। যদিও তখন নিজের পার্লার খোলার কথা ভাবিনি, বাড়িতেই আত্মীয়স্বজনদের রূপচর্চা করিয়ে আনন্দ পেতাম।"
বর্তমানে তিনি তাঁর একাডেমির মাধ্যমে পেশাগতভাবে মেকআপ ও বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি অনেক মহিলাকে আত্মনির্ভর করে তুলেছেন। নাজনীন কেবলমাত্র একটি রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ নন তিনি অন্য নারীদের জীবনে সৌন্দর্য, স্বনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাসের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন।লাস্যময়ী চেহারা আর সুন্দরের সংজ্ঞা শুধু বাহ্যিক রূপে সীমাবদ্ধ নয় এই সত্যকে প্রমাণ করে চলেছেন রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ নাজনীন সুলতানা আহমেদ। তিনি কেবল নিজে একজন সফল বিউটিশিয়ান নন, বরং আরও অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০০-এরও বেশি যুবতীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের জীবনে পরিবর্তন এনেছেন। অনেকে তাঁর থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছেন।
অভিনেত্রীর পাশে নাজনীন
এই প্রসঙ্গে নাজনীন বলেন,"২০০০ সালে আমি 'সিগনেচার' থেকে বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিই। এরপর নগাঁও-এ নিজের বাড়ির একটি ছোট ঘরে একটি ছোট পার্লার খুলি। তখন সেখানে প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না—শুধু নারীদের রূপচর্চার কাজ করতাম। তখন আমি অনেক উচ্চশিক্ষিত কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল মেয়েদের দেখেছি। তখনই ভাবি, যদি এদের জন্য কিছু করতে পারি! পরে কলিয়াবরে যখন আমি নতুন পার্লার খুলি, তখন থেকেই আর্থিকভাবে দুর্বল মেয়েদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি। এখন প্রায় হাজারের কাছাকাছি মহিলা আমার থেকে শিখে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এটা আমার জীবনের বড় অর্জন।"
নাজনীন সুলতানা আহমেদ: সুন্দর মুখ, সুন্দর হৃদয়ের অধিকারিণী এক অনন্যা নারী ।তিনি বর্তমানে ৬ মাসের ডিপ্লোমা, ১ বছরের অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা, ১ মাস ও ১৫ দিনের মেকআপ আর্টিস্ট ট্রেনিং কোর্স পরিচালনা করে আসছেন।নাজনীন শুধু বিউটিশিয়ান হিসেবেই নয়, ফ্যাশন জগতেও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি বলেন,"আমি বিউটিশিয়ান হিসেবে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছি। কানপুরে আয়োজিত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় 'বেস্ট মেকআপ আর্টিস্ট' খেতাব, নেবাকাচ থেকে 'নর্থ ইস্ট বেস্ট বিউটিশিয়ান' জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। ২০২১ সালে নিশিতা প্রোডাকশন আয়োজিত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় 'নর্থ ইস্ট পারফেক্ট' খেতাব, চান-ই-হিন্দুস্তান সম্মাননা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস অ্যান্ড কিডস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড, নারী শক্তি পুরস্কার এবং প্রেরণা পুরস্কারও লাভ করেছি।"
একজন মুসলিম নারী হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা নাজনীন আরও জানান যে, তিনি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রতি অগ্নিহোত্রি এবং অসমীয়া চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ বরষা রাণী বিষয়ার রূপচর্চাও করেছেন।
রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ নাজনীন সুলতানা আহমেদকে সংবর্ধনা
নাজনীন বলেন,"আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। অনেক সময় আমাদের সমাজে অনেকে অভিযোগ করেন যে মুসলিম সমাজ নারীদের এগিয়ে যেতে বাধা দেয়। কিন্তু আমি এটা সত্য বলে মনে করি না। কারণ, আমি কখনো কোনো ধরনের বাধার মুখোমুখি হইনি। বরং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আমি সবসময় আমার পরিবার এবং সমাজের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি। তারা আমাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিগুণ উৎসাহ জুগিয়েছে।"