ভারতীয় ফুটবলের একমাত্র দ্রোণাচার্য সৈয়দ নাঈমউদ্দিন

Story by  Shanti Roy Chowdhury | Posted by  Aparna Das • 29 d ago
সৈয়দ নাঈমউদ্দিন
সৈয়দ নাঈমউদ্দিন
 
শান্তি রায়চৌধুরী :
 
সৈয়দ নাঈমউদ্দিন একজন বিখ্যাত ভারতীয় প্রাক্তন ফুটবলার এবং প্রশিক্ষক। তিনি ১৯৭০ সালের এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি অর্জুন পুরস্কার এবং ১৯৯০ সালে দ্রোণাচার্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে, তাকে মোহনবাগান রত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়। তিনি একমাত্র ফুটবল প্রশিক্ষক যিনি দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৬২ সালে হায়দ্রাবাদ সিটি পুলিশ দিয়ে ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন নাঈমুউদ্দিন। 
 
১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মহামেডান স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনার পর, নাঈমুদ্দিনকে ভারত অনূর্ধ্ব-১৭ দলের প্রধান কোচ নিযুক্ত করা হয় এবং ১৯৮৫ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬  বাছাইপর্বে দলকে নেতৃত্ব দেন।১৯৮৭ সালে, নাঈমুদ্দিন অমল দত্তের সহকারী কোচ হন এবং দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতার তিন প্রধানে কোচিং করিয়ে অনেক ট্রফি এনে দিয়েছেন তিনি। 
 
 
১৯৯৭ সালে নাঈমুউদ্দিনকে ভারতের জাতীয় দলের কোচ করা হয়। তিনি মালদ্বীপকে ৫-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কাপ জিতেছিলেন এবং প্রথমবারের মতো নেহেরু কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলেন।তিনি ১৯৯৮ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে দল পরিচালনা করেন , যেখানে দল দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিল।
 
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরের পর ভারতের সাথে তার মেয়াদ শেষ হয়। ভারতের সাথে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয় ২০০৫ সালে সুখবিন্দর সিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে, কিন্তু ২০০৭ সালের এশিয়ান কাপের জন্য যোগ্যতা অর্জনের সময় জাপান এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে খারাপ পারফরম্যান্সের পর ২০০৬ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।তাছাড়া তিনি বাংলাদেশি ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নকেও কোচিং করিয়েছেন এবং ভারতে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের নেহেরু কাপের আগে তাকে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
 
ফুটবল ময়দানে নাঈমুউদ্দিন
 
নাঈমুউদ্দিন সর্বশেষ ২০১৭ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশি ক্লাব ঢাকা মহামেডানের কোচ ছিলেন।দ্রোণাচার্য ও মোহনবাগান রত্নের বর্তমান দিনগুলো এখন কি ভাবে কাটছে।
 
মানসিক অবস্থা:
 
দ্রোণাচার্য এখন হায়দ্রাবাদে মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কয়েক বছর আগে স্ত্রী মারা গেছেনl কলকাতার ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়ে হায়দরাবাদে মেয়ের কাছে চলে এসেছেনl মানসিক দিক থেকে তাই দ্রোণাচার্য ভালো জায়গায় নেই।
 
অর্থনৈতিক অবস্থা:
 
নাঈমুউদ্দিনের বয়স এখন ৮০। জন্ম ১৯৪৪ সাল। শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন সেই সঙ্গে  অর্থনৈতিক কষ্টটাও তাকে চিন্তায় রেখেছে। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করেন।
 
প্রধানমন্ত্রী সকাশে নাঈমুউদ্দিন
 
সরকারি ভাতা:
 
তিনি দ্রোণাচার্য অ্যাওয়ার্ড ১৯৯০ ও অর্জুন পুরস্কার ১৯৭০ সালে পেয়েছেন। এই দুই পুরস্কারের কারণে কিছু মাসিক অনুদান, পেনশন  হিসাবে পাচ্ছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী এই ভাতা খুব সামান্য। প্রায় কুড়ি হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক। তবে সেটা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ওপর নির্ভর করেন।
 
ফুটবলের সঙ্গে যোগাযোগ :
 
ফুটবল নিয়ে এখন আর সক্রিয়ভাবে আলোচনা বা কোচিং করেন নাl তবে মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি বা তার ছাত্রদের কথা বলতেই পছন্দ করেন। তার শিষ্যদের মধ্যে বাইচুং ভুটিয়া, সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, এমন কি বাংলাদেশি কিছু খেলোয়াড়ও আছেন। তবে আজ কোচিং থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়েছেন বহুদিন। আক্ষেপের শুরে তিনি বলছেন "সবাই ভুলে গেছে,কেউ ডাকে না আজ"।