খান স্যারের নতুন প্রকল্প শুধু শিক্ষা নয়, বিহারকে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপহার

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 15 h ago
খান স্যার
খান স্যার
অভিষেক কুমার সিং/বারাণসী

ভারতে এমন কোনও ছাত্র নেই যারা খান স্যারকে চেনে না। প্রত্যেক ছাত্র খান স্যারকে চেনে বা তাঁর নাম শুনেছেন। খান স্যার বিহারের পাটনার একজন বিখ্যাত শিক্ষক এবং ইউটিউবার। খান স্যার তাঁর অনন্য শিক্ষাদান শৈলী এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা কম খরচে শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিচিত। কিন্তু এবার শিক্ষার পর তিনি এক নতুন দিকের যাত্রায় সামিল হয়েছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার পর খান স্যার এখন চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন।

খান সারের লক্ষ্য হল বিহারের প্রতিটি জেলার মানুষ যেন সাশ্রয়ী মূল্যের,সহজলভ্য এবং অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। চিকিৎসার জন্য অন্য শহরে যাওয়ার খরচ সাধারণ মানুষকে বহন করতে হবে না। খান স্যার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন,  তিনি বিহারের প্রতিটি জেলায় ডায়ালাইসিস সেন্টার, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল খুলবেন।
 
খান স্যার
 
মজার ব্যাপার হল, খান স্যার কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়াই এই কাজটি করবেন। ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের বিনিময়ে যে অর্থ তিনি পান তা দিয়ে তিনি এই মহান কাজটি করতে চলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ফি শুধুমাত্র শিক্ষার বিনিময়ে নেওয়া ফি নয়, এই ফি সমাজে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তাঁর রয়েছে।

খান স্যার বললেন যে ডায়ালাইসিস কিডনি বিকল হওয়া রোগীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি ডায়ালিসিসের খরচ প্রায় ৪০০০ টাকা এবং এক মাসে ৫০,০০০ টাকা খরচ হয়। একটি দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

খান স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বিহারের প্রতিটি জেলায় ডায়ালাইসিস কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেখানে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে খুব কম খরচে এই সুবিধা দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় অন্তত ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হবে। এর মধ্যে প্রথম ১০টি মেশিন ইতিমধ্যেই আনা হয়েছে এবং মেশিন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
 

গরিবদের কষ্ট বোঝা খান স্যার
 
এই মেশিনগুলি জার্মানি এবং জাপান থেকে অর্ডার করা হয়েছে। পরিকল্পনা শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ঘোষণা করেছেন যে বিহারের মানুষ প্রতিটি উৎসবে স্বাস্থ্যসেবার নতুন উপহার পাবেন।
 
নবরাত্রির প্রথম দিনে খান স্যার জাপানের আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত একটি ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করবেন। এই ব্লাডব্যাঙ্কটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে রক্তের অভাবে কাউকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে না হয় এবং রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীকে অবিলম্বে এবং সহজেই রক্ত পাওয়া যায়।

একইভাবে দীপাবলির দিন খান সার বিহারকে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল উপহার দেবেন। এই হাসপাতালটি সরকারি হাসপাতালের মতো হবে, তবে এর সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি হাসপাতালের সমান হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে এই হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা খান স্যারের কোচিং নিয়েছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। খান স্যারের শিক্ষা ও সেবার এই সংমিশ্রণ সমাজকে অনেক অনুপ্রেরণা দেবে।

তারপর ছট পূজার শুভ উপলক্ষে খান সার একটি অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উদ্বোধন করবেন যেখানে সমস্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরীক্ষা করা হবে। এই যন্ত্রগুলি জাপান, জার্মানি এবং আমেরিকা থেকেই আনা হয়েছে, যার ফলে এই কেন্দ্রটি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের থেকে কম হবে না।

এই সমস্ত পরিকল্পনার জন্য খানসারে অবস্থিত কয়েলভার মৌজায় ৯৯ কাট্টা জমি কেনা হয়েছে। যেখানে এই চিকিৎসা সুবিধার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি কোনও প্রচার ছাড়াই রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়েছিলেন এবং মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছিলেন। এটি তাঁর সরলতা ও নিষ্ঠার প্রতীক।
 

খান স্যারের ক্লাসরুম
 
প্রতিটি উৎসবকে সেবার সঙ্গে যুক্ত করার সংকল্প খান স্যারের এই চিন্তাভাবনাকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। তিনি বলেন, মানুষ যেমন উৎসবের সময় তাঁদের প্রিয়জনদের উপহার দেন, তেমনই তিনি প্রতিটি উৎসবে বিহারের মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপহার দেবেন।

তিনি আরও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে এই পুরো অভিযানে কোনও সরকারি তহবিল বা সহায়তা নেওয়া হবে না। এ সবই সম্ভব হয়েছে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায়। এই ঘোষণার সময় খান স্যার শিবের ভক্ত হিসাবে আবির্ভূত হন।

কপালে তিলক এবং তিনটি পাগড়ি নিয়ে তিনি শ্রাবণের শেষ সোমবার শপথ নিয়েছিলেন যে, "শিক্ষার মাধ্যমে যদি পরিবর্তন সম্ভব হয়, তবে সেবার মাধ্যমে কেন নয়? বিহারের মতো রাজ্যে, যেখানে এখনও গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা সীমিত, খান স্যারের এই উদ্যোগ সুস্থ ভবিষ্যতের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।

তিনি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যুবকদের স্বনির্ভর করেছেন এবং এখন তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার কথা ভাবছেন। খান স্যারের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র বিহারের জন্য নয়, সমগ্র ভারতের জন্য অনুপ্রেরণার একটি মডেল হতে পারে।

খান স্যারের এই সংকল্প শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি সমাজের একটি ভিত্তি। যেখানে শিক্ষকরা কেবল শিক্ষাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, প্রয়োজনে তাঁরা সমাজের সবচেয়ে বড় চাহিদাও বহন করতে পারেন। এটি শিক্ষা থেকে পরিষেবার দিকে একটি পদক্ষেপ, যা আগামী দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে।

খান স্যার প্রমাণ করেছেন যে, যদি ভাল উদ্দেশ্য থাকে এবং চিন্তাভাবনা সঠিক হয়, তাহলে সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন নেই এবং কোনও বড় প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন নেই। একজন শিক্ষক সমাজে পরিবর্তন আনতে পারেন।