প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক পেয়ে ইতিহাস গড়লেন জেড স্পেন্স

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 2 d ago
ইংল্যান্ড জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত প্রথম মুসলিম ফুটবলার জেড স্পেন্স
ইংল্যান্ড জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত প্রথম মুসলিম ফুটবলার জেড স্পেন্স
 
শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী

প্রথমবার ইংল্যান্ড জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হলো এক মুসলিম ফুটবলার। ইংল্যান্ড দলে ডাক পেয়ে জেড স্পেন্স নিজেই চমকে উঠেছেন। তিনি মনে করছেন সামনে রয়েছে আরও বড় অর্জনের হাতছানি। আর ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলে তার অন্তর্ভুক্তি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে অভিষেক হতে পারে ২৫ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের, যা ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ফুটবল ইতিহাসে এক রেকর্ড।
 
ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ চলছে এখন। তারা খেলবে  অ্যান্ডোরা ও সার্বিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচ দুটো আছে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। সেই ম্যাচের জন্য টোটেনহামের  স্পেন্সকে দলে ডেকেছেন ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ টমাস টুখেল। টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ফুলব্যাকের আশা, প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন তিনি।
 
স্পেন্সের ক্যারিয়ার কিন্তু বদলে গেছে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে। এর আগে  ২০২৪-২৫ মরসুমে তিনি খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ৬৪ মিনিট। স্টেডিয়ামে বসেই তাকে টোটেনহামের খেলা দেখতে হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি। এরপর ডিসেম্বর থেকে টটেনহ্যামের ২২ ম্যাচের ১৯টিতেই পুরো সময় মাঠে ছিলেন তিনি। আর এই ধারাবাহিকতা তাকে   এবার প্রথমবার জাতীয় দলের দরজাও খুলে দিলো।  যদিও ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কখনও তাদের দলে ফুটবলারদের ধর্মের তথ্য সংগ্রহে রাখে না। তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেন্সই হবেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে নামা প্রথম মুসলিম ফুটবলার।
 
ইংল্যান্ড ফুটবল এসোসিয়েশন থেকে এই খবর পেয়ে আনন্দে  আত্মহারা স্পেন্স। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য আমি নিয়মিতই প্রার্থনা করেছি। “এটি একটি আল্লাহর আশীর্বাদ। এই অসাধারণ খবর জানার পর আমি খুবই অবাক হয়েছি যে, আমিই প্রথম! দারুণ ব্যাপার। এ নিয়ে বলতে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।”
 
সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্‌-ই সর্বশক্তিমান। আমি অনেক প্রার্থনা করি। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে, সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্‌ আমার সঙ্গে আছেন। এই বিশ্বাসই আমাকে সব সময় তাড়া করে বেড়ায়।”
 
প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে কোনো চাপ অনুভব করছেন না স্পেন্স। বরং অন্যদের অনুপ্রাণিত করার আনন্দই বেশি তার। “আমি আসলে নির্দিষ্ট কিছুর জন্য চাপ অনুভব করি না। মুখে হাসি নিয়ে ফুটবল খেলতে চাই। আনন্দে থাকতে চাই। বাকি সব কিছু নিজ থেকেই হয়ে যাবে। আর আমি যদি করতে পারি, তুমিও করতে পারবে। শুধু মুসলিম বাচ্চারাই নয়, যে কোনো ধর্মের শিশুদের বলছি, যে কোনো কিছুতে মন স্থির করো তাহলেই দেখবে তুমিও করতে পারবে,"বলছেন স্পেন্স।
 
অথচ গত মরসুমের শুরুতে টটেনহ্যাম তাকে নিয়মিত খেলার সুযোগই দিচ্ছিল না। ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বের জন্য তাকে স্কোয়াডেও রাখেননি কোচ। পরে নক আউট পর্ব থেকে দলে ফিরে শেষ ষোলোর দুই লেগে পুরো ম্যাচই খেলেন তিনি। ইউরোপা লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে লিগের ফাইনালে বদলি হিসেবে নামেন স্পেন্স। সেই ছন্দ ধরে রেখে জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ ভালো খেলা এই ফুলব্যাক। জাতীয় দলে সুয়োগ পেয়ে স্পেন্সের আশা, নতুন এই যাত্রা ভালো কাটবে তার।
 
স্পেন্স বলছেন,“ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারা বড় ব্যাপার হবে। যে স্বপ্নটা এতদিন দেখে এসেছি তা সার্থক হল। ইংল্যান্ড কোচ আমাকে পছন্দ করেছে ভেবে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছি। তাছাড়া দলের প্রতিটি ফুটবলার আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। আমি অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলেছি। সেটাই হয়তো আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে ।”
 
সেই সঙ্গে তিনি এও বলছেন, “সিনিয়র পর্যায়ে জাতীয় আর জুনিয়র পর্যায়ের জাতীয় দল কিন্তু এক নয়। সিনিয়র জাতীয়  দলের হয়ে  কখনও খেলিনি। একটা চাপ তো আছেই। সেটা কাটিয়ে উঠে আমাকে ভালো খেলতে হবে। যদি পারি তাহলে জাতীয় দলে একজন মুসলিম খেলোয়াড় হিসেবে আমি একটা রেকর্ড করব। খুব ভালো লাগছে সিনিয়র দলের প্রতিটি ফুটবলার আমাকে সাদরে স্বাগত জানিয়েছে, তাদের একজন করে নিয়েছে। সেজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এবার শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলার আমার লক্ষ্য থাকবে। "