দেবকিশোর চক্রবর্তী
ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনে জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমান প্রশাসকদের একাংশের অকর্মণ্যতার কারণে দেশের ফুটবলে সংকট বাড়ছে।ভারতের ফুটবল প্রশাসনে বড় পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ফেডারেশনের নতুন সংবিধানকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই সংবিধান কার্যকর করতে হবে। তবে নতুন নিয়মের একটি ধারা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিপাকে পড়েছেন বহু কর্তা, যাদের অনেককেই হয়তো আসন্ন দিনগুলোতে পদ ছাড়তে হবে।
আগামী ১২ অক্টোবর, রবিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ফুটবল ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে এই নতুন সংবিধান। যে সংবিধান প্রস্তুত করেছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাও। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনার পর সংবিধান খসড়া তৈরি করেছিল। পরে সুপ্রিম কোর্ট সেই খসড়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন এনে চূড়ান্ত রূপ দেয়।
নতুন সংবিধানের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হচ্ছে ধারা ২৫.৩ (সি)। এই ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, এআইএফএফ-এর কর্মসমিতির কোনও সদস্য যদি একই সময়ে কোনও রাজ্য সংস্থার (স্টেট অ্যাসোসিয়েশন) পদে থাকেন, তবে তাঁকে একটি পদ ছাড়তে হবে। অর্থাৎ, তিনি হয় কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন, নয়তো রাজ্য সংস্থার কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন—দু’টি একসঙ্গে নয়। যদি কেউ পদ না ছাড়েন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তাঁর রাজ্য সংস্থার পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খালি বলে গণ্য হবে।
এই নিয়ম কার্যকর হলে দেশের ফুটবল প্রশাসনে এক বড়ধরনে রদবদল আসতে পারে। বর্তমানে ফেডারেশনের কর্মসমিতির বহু প্রভাবশালী সদস্যই রাজ্য সংস্থার শীর্ষপদে রয়েছেন। তাঁদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে একই সঙ্গে দুই পদ সামলে আসছেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে তাঁদের যে কোনো একটি পদ ছাড়তেই হবে। এর সিদ্ধান্তের ফলে একাধিক রাজ্যে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে বাধ্য বলে অনেকেই মনে করছেন।
ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কর্মসমিতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কেউ কেউ আবার রাজ্য সংস্থার নেতৃত্ব বজায় রেখে ফেডারেশনের পদ ছাড়বেন বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। এই প্রক্রিয়ায় এআইএফএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এক নতুন ভারসাম্য তৈরি হতে পারে।
প্রাক্তন বিচারপতি নাগেশ্বর রাও-এর কমিটি যে উদ্দেশ্যে সংবিধানটি তৈরি করেছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল ফুটবল প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো। অতীতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, দ্বৈত পদে থেকে স্বার্থের সংঘাতসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। নতুন নিয়মের ফলে সেই দ্বৈত ভূমিকা বন্ধ হবে এবং রাজ্য সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের মধ্যে দায়িত্বের সীমানা আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তবে দেশের অন্যান্য কয়েকটি রাজ্য সংস্থার কর্তা এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, রাজ্যের প্রতিনিধিত্বের অভিজ্ঞতা ফেডারেশনের নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে। একই ব্যক্তি যদি দুই জায়গায় থেকে কাজ করতে না পারেন, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।
সবমিলিয়ে, নতুন সংবিধানের প্রয়োগ এআইএফএফ-এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলেও এটি প্রশাসনিক অস্থিরতার সূচনা করতে পারে। রবিবারের এজিএম-এর পরই স্পষ্ট হবে কারা পদে থাকবেন আর কারা বাধ্য হয়ে বিদায় নেবেন। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক রূপ এখন নির্ভর করছে সেই সভার সিদ্ধান্তের ওপর।