কাশ্মীরের শাল ব্যবসায়ী নাজাকত আলি আজ কেন দেশের সবার চোখের মণি

Story by  atv | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 3 d ago
নাজাকত আলি
নাজাকত আলি
 
আওয়াজ – দ্য ভয়েস অসম ব্যুরো

নাজাকত আলি একজন কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ী। যিনি প্রতি বছর শীতকালে বিক্রেতা হিসেবে দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে ছত্তীসগঢ়ের চিরমিরিতে উষ্ণ পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে আসেন। কিন্তু এ বছর চিরমিরির মানুষ আতশবাজি ফাটিয়ে, ফুলের মালা পরিয়ে তাকে নায়কের মতো সংবর্ধনা জানিয়েছে। কিন্তু কেন একজন সাধারণ শাল ব্যবসায়ীকে এত সম্মান দেওয়া হলো? কী কারণে তিনি চিরমিরির মানুষের চোখের মণি হয়ে উঠলেন? চলুন জেনে নিই।

কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ী নাজাকত আলি নিজের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে সাম্প্রতিক জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা থেকে ১১ জন পর্যটকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা নাজাকত সেদিন তার কিছু গ্রাহকের সঙ্গে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত কাশ্মীরের বৈসারান উপত্যকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। যেখানে সেই দিন সন্ত্রাসীরা ২৬ জন পর্যটকের রক্তে উপত্যকাকে রঞ্জিত করেছিল।
 

ছত্তিশগড়ের চিরমিরির মানুষ ফুলের মালা পরিয়ে নায়কের মতো সম্মান জানিয়েছে কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ী নাজাকত আলিকে

পর্যটকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের মধ্যেই নাজাকত চারটি পরিবারের শিশু-সহ মোট ১১ জনকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে শিশুদের পিঠে তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তার উদ্ধার করা ব্যক্তিদের মধ্যে স্থানীয় বিজেপি নেতা অমিত আগরওয়ালের সন্তানরাও ছিল।

নিজের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে নিজের জীবন বিপন্ন করে এমন অসাধারণ কাজ করার জন্য, এইবার যখন নাজাকত চিরমিরিতে ফিরে আসেন, তখন অমিত আগরওয়াল স্থানীয় মানুষদের নিয়ে তাকে নায়কের মতো উষ্ণ সংবর্ধনা জানান।
 
এক্স-এ (X) পোস্ট করা একটি ভিডিওতে নাজাকত বলেন,
“চিরমিরির মানুষের দেওয়া এই সম্মান ও ভালোবাসা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। লাকি ভাইয়া, রাজু ভাইয়া, হ্যাপি ভাইয়া, টিটু ভাইয়াকে আবার একবার দেখতে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। তাদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। তারা আমার জন্য খুবই বিশেষ, কারণ তারা আমার কাছে ভাইয়ের মতো।”নাজাকত জানান, তিনি কেবল একবার লাকি ভাইয়াকে ফোন করে চিরমিরিতে ফিরে আসার কথা জানিয়েছিলেন।

২২ এপ্রিল যখন পাহেলগামের বৈসারান উপত্যকা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে এবং গুলির শব্দ শোনা যায়, তখন নাজাকতের চিরমিরির চার বন্ধু কুলদীপ স্থাফক, শিবাংশ জৈন, হ্যাপি বধওয়ান এবং অরবিন্দ আগরওয়াল — ও তাদের পরিবার উপত্যকার শীতল জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে মগ্ন ছিলেন। শুরুতে কেউ বুঝতে পারেনি আসলে কী ঘটছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন চারদিক থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে, তখনই তারা বুঝতে পারে — এটি আসলে সন্ত্রাসীদের আক্রমণ।
 

বিজেপি নেতা অমিত আগরওয়াল ফেসবুকে করা এক পোস্ট

হঠাৎ করে বৈসারান উপত্যকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং পর্যটকেরা প্রাণ রক্ষার জন্য যেকোনো পথে দৌড়াতে শুরু করে। অনেকেই লক্ষ্য করেছিল যে, তারা পথের দু’পাশে ফেঁসে গেছে। নাজাকত বলেন,“আমি আমার সঙ্গে থাকা পর্যটকদের মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেছিলাম। আমি নিজেও শুয়ে পড়েছিলাম। কিছু সময় পর আমরা পথ পেরিয়ে ১১ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করেছিলাম। সেই সময়ের দৃশ্যটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল, তবে আমার সঙ্গে থাকা এই ১১ জন পর্যটকের জীবন রক্ষা করা আমার দায়িত্ব ছিল।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজাকত আলি তাদের উদ্ধার করতে এসে হত্যাকারীদের সামন থেকে কোন পথে তাদের নিরাপদে বের করবে তা কেউ নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝে নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নাজাকত দায়িত্ব নিয়ে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। নাজাকত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পাহেলগামের সেই হামলায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে আমার মামার ছেলে ও ছিলেন।
 

পাহেলগামে সন্ত্রাসীদের করা হামলার পরের একটি দৃশ্য

সবাই যখন নিজের জীবন রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছিল, তখন নাজাকত আলি ধৈর্য্য, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি একে একে মোট ১১ জন পর্যটককে বিপজ্জনক স্থানের হাত থেকে সরিয়ে নিরাপদে লজে পৌঁছে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, হামলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেনার সাহায্যে আরও কয়েকজন পর্যটককে উদ্ধার করে একটি নিরাপদ হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

যেহেতু গত কয়েক বছর ধরে নাজাকত ছত্তীসগড়ের কোরিয়া জেলার চিরমিরি অঞ্চলে উষ্ণ কাপড় বিক্রি করে আসছেন, তাই এই স্থানের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নাজাকত বলেন,“আমি গত ১১ বছর ধরে চিরমিরি ও চুরগুজিতে শাল বিক্রির জন্য আসছি। এর আগে আমার বাবা ২৪ বছর ধরে চুরগুজিতে ব্যবসা করতেন।”