ভারতের মেয়েদের বিশ্বজয়: শেফালি-দীপ্তির ব্যাটে-বলে ইতিহাস লিখল হরমনপ্রীতের দল

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 18 h ago
প্রথমবারের মতো একদিনের বিশ্বকাপ জিতল ভারতীয় মহিলা দল
প্রথমবারের মতো একদিনের বিশ্বকাপ জিতল ভারতীয় মহিলা দল
 
শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ 

কাজটা এত সহজ ছিল না। একের পর এক হারের পর ঘুরে দাঁড়ানো, আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা, আর শেষ পর্যন্ত বিশ্বজয়, এই গল্পটা আজ ভারতের মহিলা ক্রিকেটের অধ্যায়ে সোনার হরফে লেখা থাকবে। নবি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনের বিশ্বকাপ জিতল ভারতীয় মহিলা দল।
 
এদিনের জয় ছিল অনেক প্রতীক্ষার ফল। আগের দুই ফাইনালে হারের যন্ত্রণা ভুলে হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে মেয়েরা লিখল নতুন ইতিহাস। যেমনটা হয়েছিল ২০১১ সালের ২ এপ্রিল, ধোনির নেতৃত্বে যখন ভারতের পুরুষ দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ঠিক ১৪ বছর পর, আরেক ২ তারিখে, নভেম্বর মাসে, ইতিহাস যেন পুনরাবৃত্তি করল নিজেকে, এইবার মেয়েদের হাত ধরে।
 
শেফালি বর্মা ও স্মৃতি মন্ধনা
 
টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে খেলতে নামেন ওপেনার শেফালি বর্মা ও স্মৃতি মন্ধনা। দু’জনের জুটি ভারতের ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়। প্রথম ১০ ওভারেই দল ৬০ পেরোয়, আর ১৭ ওভার শেষে ১০০। মন্ধনা ৪৫ রানে আউট হলেও অপর প্রান্তে আগুন ঝরাতে থাকেন শেফালি। ২১ বছর ২৭৮ দিনের শেফালি হয়ে গেলেন পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্ধশতরান করা ভারতীয় ওপেনার। ৭৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে ভর করে তিনি ভারতকে এনে দেন দৃঢ় ভিত্তি।
 
মাঝে হরমনপ্রীত (২০) ও জেমিমা রডরিগেজ় (২৪) দ্রুত ফিরে গেলে ইনিংস সামলান দীপ্তি শর্মা ও রিচা ঘোষ। একদিকে ধৈর্য আর অন্যদিকে আগ্রাসন, দু’জনের মিলিত খেলায় ভারতের ইনিংস পায় গতি। রিচার ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৩৪ রান, আর দীপ্তি ৫৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে যান। শেষ দিকে আমনজ্যোত কৌরের (১২) সহায়তায় ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান তোলে।
 
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ শুরু হতে দেরি হলেও ভারতের মনোবল তাতে একটুও কমেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে লরা উলভার্ট একাই লড়ে গেছেন, ১০১ রানের ঝলমলে ইনিংস। কিন্তু বাকিদের মধ্যে কেউই হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে পারেননি।
 
বিজয়ের পরবর্তী মুহূর্তের একটি দৃশ্য
 
ম্যাচের গতি ঘুরিয়ে দেয় ভারতের দুরন্ত ফিল্ডিং ও স্পিন আক্রমণ। শুরুতেই রান আউট করে ব্রিটসকে ফেরান আমনজ্যোত। এরপর বল হাতে বাজিমাত করেন শেফালি বর্মা, যিনি এর আগে আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে মাত্র ১৪ ওভার বল করেছিলেন! কিন্তু ফাইনালে যেন নতুন রূপে আবির্ভূত হলেন তিনি। প্রথম ওভারেই সুনে লুসকে ফেরান, পরে বিপজ্জনক মারিজান কাপকেও আউট করেন।
 
এরপর বল হাতে আসেন দীপ্তি শর্মা, এবং এখানেই গল্পের মোড় ঘোরে। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার নিজের স্পিনে একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার ভেঙে দেন। উলভার্ট শতরান করলেও তাঁর সঙ্গী আনেরি ডের্কসেন (৩৫) আউট হন দীপ্তির বলেই। তার পর উলভার্টকেও (১০১) ফেরান তিনি। শেষ দিকে ট্রিয়ন ও ডি ক্লার্ককে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গের শেষ কফিনে পেরেক ঠোকেন দীপ্তি।
 
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়। ভারতের পক্ষে দীপ্তি নেন ৫ উইকেট, শেফালি ২টি, আর শ্রীচরণী ১টি। দীপ্তির নাম ওঠে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। ম্যাচসেরার পুরস্কার যায় শেফালির ঝুলিতে, ৮৭ রান ও ২ উইকেটের জোড়া পারফরম্যান্সে।
 
বিজয়ের উল্লাসে ভারতীয় মহিলা দল
 
শেষ ক্যাচটি হাতে নেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর, আর সেই মুহূর্তেই ইতিহাস তৈরি হয়ে যায়। গ্যালারিতে উঠে আসে “চ্যাম্পিয়নস” ধ্বনি, টিমমেটদের চোখে জল, আর আকাশভরা তিরঙ্গা। সেই ছবিটাই হয়তো চিরকাল থেকে যাবে স্মৃতির পাতায়, যেমন থেকে গেছে ১৯৮৩-র কপিল দেব, কিংবা ২০১১-র ধোনি।
 
হরমনপ্রীতদের এই জয় শুধু একটি ম্যাচের নয়, এক প্রজন্মের বিশ্বাসের জয়। মেয়েরা প্রমাণ করে দিল, “মেয়েরাও পারে”, শুধু পারে নয়, বিশ্বকে জিতে হাতের মুঠোয় আনতে জানে। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে ২০২৫ সালের ২ নভেম্বরের রাত তাই হয়ে রইল এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়।
 
একনজরে ফলাফল: ভারত ২৯৮/৭ (৫০ ওভার); দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ (৪৫.৩ ওভার)
 
* ভারত জয়ী ৫২ রানে
 
* ম্যাচসেরা: শেফালি বর্মা
 
* সিরিজের সেরা: দীপ্তি শর্মা