আগরতলায় তৃণমূল প্রতিনিধিদের বাধা — তড়িঘড়ি ত্রিপুরা সফরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Sudip sharma chowdhury • 20 d ago
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

ত্রিপুরার রাজনৈতিক অঙ্গন ফের উত্তপ্ত। আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের বাধা দেওয়া ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার পরই পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি সফর করছেন আগরতলা। তৃণমূল নেত্রীর এই সফর ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুরে আগরতলার বনমালীপুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সাংগঠনিক বৈঠক নির্ধারিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের আগে থেকেই তৃণমূলের কর্মীদের এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দলীয় সূত্রের দাবি, বেশ কয়েকজন কর্মীকে পথ থেকে আটকানো হয়, এমনকি একাধিক গাড়ি ভাঙচুরও করা হয়। পরবর্তীতে অজ্ঞাত দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের আগরতলা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কাচ ভাঙচুর ও আসবাবপত্র নষ্ট করে দেয়।

এই ঘটনার পরই রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। তৃণমূল নেতৃত্ব সরাসরি বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে। দলের রাজ্য ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত। ত্রিপুরায় ভয় দেখিয়ে আমাদের থামানো যাবে না। মানুষই এর জবাব দেবে।” অন্যদিকে বিজেপির তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তৃণমূল নিজেরাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জরুরি বৈঠক ডেকে বুধবারই ত্রিপুরা সফরের সিদ্ধান্ত নেন। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সকালে আগরতলায় পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং প্রশাসনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দাবি জানাবেন।

ত্রিপুরায় গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন ধীরে ধীরে জোরদার হচ্ছে। বিশেষত, পশ্চিমবঙ্গের পর উত্তর-পূর্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবে তৃণমূল ত্রিপুরাকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে। আগের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলটি রাজ্যে নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করছে। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনাগুলি সেই প্রচেষ্টায় বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর শুধুমাত্র একটি প্রতিবাদমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং ত্রিপুরায় তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থানকে পুনরায় দৃঢ় করার প্রচেষ্টা। বিশ্লেষক দেবাশিস ধর বলেন, “ত্রিপুরায় এখন কংগ্রেস দুর্বল, আর সিপিএম আগের মতো সক্রিয় নয়। ফলে তৃণমূল সেখানে বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই সফর তারই কৌশলগত অংশ।”

এদিকে, ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। আগরতলা সদর থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তৃণমূলের দাবি, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে না। দলের এক স্থানীয় নেতা অভিযোগ করেন, “আক্রমণকারীরা বিজেপি কর্মী, কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না।”

ঘটনার পর আগরতলায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

ত্রিপুরার রাজনীতিতে এ ঘটনা নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পর রাজ্য রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা এখন নজর কেড়েছে দেশজুড়ে। তবে আপাতত স্পষ্ট—আগরতলার ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে ক্ষমতার নতুন লড়াইয়ের ইঙ্গিতও মিলছে।