ধর্মীয় ঐক্যের প্রতীক: হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে কালীপূজা বাংলায়

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 10 d ago
লালগোলার রাজ কালী বাড়ি
লালগোলার রাজ কালী বাড়ি
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী

বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় মিলেমিশে কালীপূজা উদযাপন করে আসছেন, যা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সম্প্রীতি ও সামাজিক ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
 
মুর্শিদাবাদের লালগোলা এলাকা এ ধরনের মিলনের অন্যতম কেন্দ্র। এখানে মুসলিম ও হিন্দু প্রতিবেশীরা একসঙ্গে ইফতার আয়োজন করেন, এবং পরবর্তী দিন একই স্থানে কালীপূজায় অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “আমরা কাউকে বিভক্ত হতে দেব না”, এই প্রতিজ্ঞার সঙ্গে তারা প্রতিটি বছর পূজা উদযাপন করছেন।
 
তবে শুধুই লালগোলা নয়, বীরভূমের শিলবাড়িহাটের তরষা ইউনাইটেড ক্লাব, মালদা, কেন্দুয়া, এবং জঙ্গলমহলের মতো জায়গাতেও হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় একত্রে পুজা আয়োজন করছেন। মালদায় ১১ জন হিন্দু ও ১৩ জন মুসলিম সদস্য মিলিতভাবে পূজার সমস্ত আয়োজন পরিচালনা করেন। কেন্দুয়া গ্রামে একজন মুসলিম মহিলা গত তিন দশক ধরে কালীপূজার আয়োজন করছেন, যা স্থানীয়দের কাছে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত।
 
এই মিলেমিশে পূজার আয়োজন শুধু সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করছে না, বরং যুবসমাজকেও একতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দিচ্ছে। পূজার সময় মসজিদের আজান ও মন্দিরের মাইক ব্যবহারে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা, প্যান্ডেল তৈরি, প্রতিমা আনা ও প্রসাদ বিতরণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, এই সব কর্মকাণ্ড স্থানীয় সম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরও গভীর করছে।
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মিলেমিশে পুজো কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ, যা দেশের অন্য অঞ্চলেও অনুকরণীয় হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, পার্থক্য থাকলেও মানবিক এবং সামাজিক বন্ধনকে প্রাধান্য দিলে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব।
 
স্থানীয়রা জানান, “পুজোর আনন্দ আমরা সবাই মিলে ভাগাভাগি করি। এখানে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। এই মিলন আমাদের সমাজকে আরও শক্তিশালী করছে।”
 
বাংলার এই মিলেমিশে কালীপূজা দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়, ধর্মের ভিন্নতা যতই থাকুক, ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজকে সুন্দর ও শক্তিশালী করা সম্ভব।