শান্তিপ্রিয় রায়চৌধুরী
নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলার ইতিহাস কথা বলে। এই গ্রামের ৯৯ বছরের মানোদা বসাক যিনি চরকা বুড়ি নামে পরিচিত। সেই চরকা বুড়ি গ্রামের এক ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসে সেই স্বাধীন ভারতের আগে থেকে দু'হাতে চরকায় টান দিয়ে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে। ভাঙা ঘরে চরকা কেটেই দিনযাপন করছেন মানোদা দেবী।
স্বাধীনতার আগে থেকেই চরকাতে সুতো কাটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। স্মৃতিটাতো ধূসর হয়ে গেছে। এই বয়সে এটাইতো স্বাভাবিক। আত্মীয়রাতো অনেকেই চলে গেছে। চরকা কেটেই তিন ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। মানোদা দেবীর আজও ভরসা করতে হয় চরকা কাটা উপার্জনের ওপরেই। নেই কোন সরকারি সাহায্য ও সম্মান।
মানোদা দেবী
সুতোর মালিক বীরেন বসাক 'পদ্মশ্রী' পেলেও, কিছুই পাননি মানোদা দেবী। তার দুঃখটা এখানেও। উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক কিছু করলেও, তাঁর বাড়িতে পড়েনি ইট-বালি, সিমেন্ট। ছেলেদের ১০০ দিনের কাজ হোক বা মায়ের বার্ধক্য-বিধবাভাতা কিছুই মেলেনি বলছেন ছোট ছেলে কমল বসাক।
অভিমানের সুরে তিনি বলেছেন, "বেশ কয়েকবার সরকারি প্রকল্পে কাগজপত্র জমা দিয়েছি, কিছুই হয়নি। আজীবন চরকায় সুতো কেটে সংসার চালানো স্বত্বেও তাঁতি কার্ড বা তাঁত কিছুই মেলেনি।"
নদিয়ার ফুলিয়া চটকাতলা গ্রামের একটি দৃশ্য
এই মানোদা দেবী হয়ে উঠেছেন সেই সব মানুষের প্রতীক যারা প্রতিকূলতার মাঝেও হার মানেন না। তার দৃঢ়তা সাবলম্বিতা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার জীবন দেখিয়ে দিচ্ছে একটি চরকা শুধুমাত্র সুতো কাটার যন্ত্র নয় এটি মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তিরও প্রতীক।