ভাবনায় শতবর্ষে মহানায়ক: কালীপুজোয় উত্তম কুমারকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মধ্যমগ্রামের রবীন্দ্রপল্লি ইয়ং অ্যাসোসিয়েশন

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 15 d ago
মহানায়ক উত্তম কুমার (ফাইল)
মহানায়ক উত্তম কুমার (ফাইল)
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী 

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যাঁর নাম উচ্চারণ না করে আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না, সেই মহানায়ক উত্তম কুমার-এর জন্মশতবর্ষকে শ্রদ্ধা জানাতে এবারের কালীপুজোয় বিশেষ থিম নিয়েছে মধ্যমগ্রামের রবীন্দ্রপল্লি ইয়ং অ্যাসোসিয়েশন। তাদের এবারের থিম, “ভাবনায় শতবর্ষে মহানায়ক”। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পুজোর মাধ্যমে তাঁরা শুধু এক মহান অভিনেতাকেই স্মরণ করছেন না, বরং এক যুগের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীককেও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

রবীন্দ্রপল্লির মণ্ডপে ইতিমধ্যেই চলছে জোরকদমে সাজসজ্জার কাজ। ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মণ্ডপের নকশা করা হয়েছে উত্তম কুমারের জীবনের নানা অধ্যায়কে কেন্দ্র করে। প্রবেশপথে থাকবে তাঁর জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর পোস্টার, সপ্তপদী, নায়ক, হারানো সুর, অগ্নিপরীক্ষা থেকে শুরু করে চৌরঙ্গী, সবকিছুই দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বাংলা সিনেমার সোনালি যুগে।
 
মণ্ডপের শিল্প নির্দেশনা করছেন তরুণ শিল্পী সুব্রত মণ্ডল। তিনি জানান, “উত্তম কুমার শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন বাঙালির স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। আমাদের লক্ষ্য, দর্শক যেন মণ্ডপে এসে সেই যুগের আবহ অনুভব করতে পারেন।” পরিবেশবান্ধব উপকরণ; বাঁশ, খড়, কাপড় ও কাগজ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপের কাঠামো।
 
কেবল মণ্ডপ নয়, দেবী মূর্তিতেও থাকবে ‘উত্তম-ছোঁয়া’। মূর্তিশিল্পী কাঞ্চন পাল জানান, “আমরা মায়ের মুখাবয়বে এমন এক প্রশান্ত, আত্মবিশ্বাসী হাসি আনতে চেয়েছি, যা মহানায়কের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” মণ্ডপজুড়ে বাজবে উত্তম-সুচিত্রা যুগের অমর গান, এই পথ যদি না শেষ হয়, তুমি রবে নীরবে, আমার স্বপ্নে তুমি, যা পুজোয় এনে দেবে এক নস্টালজিক পরিবেশ।
 
ক্লাবের সভাপতি অরিন্দম দাস বলেন, “এই পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় আয়োজন নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম জানুক, কীভাবে উত্তম কুমার বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন।” ক্লাব সম্পাদক প্রিয়ব্রত মুখার্জি যোগ করেন, “মহানায়কের মানবিকতা থেকেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাই পুজোর পাশাপাশি আয়োজন করছি রক্তদান শিবির, শিশুদের জন্য বই বিতরণ ও প্রবীণদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা।”
 
মধ্যমগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ইতিমধ্যেই এই বিশেষ থিম ঘিরে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অনিন্দিতা ঘোষ বলেন, “উত্তম কুমার আমাদের আবেগ। তাঁকে ঘিরে পুজোর থিম মানেই আলাদা এক আকর্ষণ। এমন ভাবনা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
 
পুজো আয়োজক কমিটির আশা, এ বছর তাদের মণ্ডপে ভিড় হবে হাজারো দর্শকের। প্রশাসনও জানিয়েছে, দর্শকদের সুবিধার্থে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে। বাংলা সিনেমার সেই অবিস্মরণীয় যুগের মহানায়ককে স্মরণ করে রবীন্দ্রপল্লি ইয়ং অ্যাসোসিয়েশন এ বছর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির কাছে এক আবেগঘন শ্রদ্ধার্ঘ্য।
 
মধ্যমগ্রামের আকাশে এবার তাই দেবীর সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হবে এক নাম, ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’।