দেবকিশোর চক্রবর্তী
দিনাজপুরের হাকিমপুর সীমান্ত এলাকায় অবৈধ বাংলাদেশি প্রবেশ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথাকথিত “ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর” সংবাদকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি কিছু অনলাইন ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে তা দ্রুত সামাজিকমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং শুক্রবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমে যে দাবি করা হয়েছে—সেটি বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের মতে, স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও “অতিমাত্রায় অতিরঞ্জিত তথ্য” প্রচার করা হয়েছে, যা সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে অযথা প্রশ্ন তুলেছে। অনেক বাসিন্দা জানান, এসব খবর পুরো এলাকার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং সাধারণ মানুষের মনে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক তৈরি করছে।
বিক্ষোভকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে হাকিমপুরের প্রধান সড়ক ধরে মিছিল করেন। “ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই” এবং “দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিশ্চিত করো”—এ ধরনের স্লোগান শোনা যায় মিছিলে। স্থানীয়রা জানান, গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে; তাই যেকোনো সংবেদনশীল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের আগে সঠিক যাচাই–বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের যুক্তি, সীমান্ত এলাকাকে নিয়ে এমন খবর প্রকাশিত হলে তা শুধু মানুষের ভয়ের কারণই হয় না, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমেও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে নির্দিষ্ট কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি, অথচ এমন খবর প্রচার করা হয়েছে যেন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাদের দাবি, সীমান্ত এলাকায় কোনো অস্বাভাবিকতা নেই, নিয়মিত টহল এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের মতোই সচল রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আরও জানান, তথ্য বিভ্রান্তির কারণে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—সকলেই মানসিকভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠে নামে। কর্তৃপক্ষ জানায়, সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যেন কোনো ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “কিছু গণমাধ্যমে যে খবর ছড়ানো হয়েছে তা যাচাইয়ের জন্য আমরা খোঁজ নিচ্ছি। স্থানীয় মানুষকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
প্রশাসন আরও জানায়, গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ একটি সংবাদ পুরো এলাকা বা জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ালে সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই প্রশাসন এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
অন্যদিকে, কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী জানান, তারা নিজেদের প্রকাশিত খবর সম্পর্কে মতামত দিতে প্রাথমিকভাবে অপারগ। তবে তারা দাবি করেন,সংবাদটি তাঁদের নিজস্ব তথ্যসূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্যতা যাচাইয়ের পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেওয়া হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এ ঘটনায় সামাজিকমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, যে কোনো সংবেদনশীল বিষয় প্রচারের আগে গণমাধ্যম, প্রশাসন এবং স্থানীয়দের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলের মতো স্থানে ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা আতঙ্কের জন্ম দিতে পারে।
হাকিমপুর সীমান্তে প্রকাশিত অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া ঘিরে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয়রা আশা করছেন, তথ্যের যথাযথ যাচাই–বাছাই এবং দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন বিভ্রান্তি আর সৃষ্টি হবে না।