সুদীপ শর্মা চৌধুরী, গুয়াহাটি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের মূল উদ্দেশ্য রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও রেল-সড়ক সংযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি শান্তি ও পুনর্বাসন ও বিশেষত মণিপুরে সম্প্রদায়ভিত্তিক সংঘাতের পর বাস্তুচ্যুতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সহযোগিতা। অসমে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থানের উন্নয়ন সহ ভারতরত্ন ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের পুনর্নির্মাণ উদ্বোধন ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটনের সুযোগ বাড়ানো। মণিপুরে মোদীর কার্যক্রমে প্রায় চুরাচান্দপুরে প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকার সড়ক, নগর উন্নয়ন, drainage system, IT-hub, মহিলা হোস্টেলসহ নানা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
ইম্ফল( Imphal)
আনুমানিক ১,২০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন, নতুন পুলিশ সদর দপ্তর, সিভিল সচিবালয়, ইমা মার্কেট সংস্কার, কলেজ ও হাসপাতালের উন্নয়ন। সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপুর্ন অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের (IDPs) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পুনর্বাসন ও শান্তি স্থাপনের বার্তা প্রদান।
মিজোরামের প্রকল্প
* ভৈরবী–সাইরাং রেললাইন (৫১.৩৮ কিমি): প্রথমবারের মতো মিজোরামের রাজধানী আইজল সরাসরি ভারতীয় রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।
* নতুন ট্রেন পরিষেবা: সাইরাং–দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, সাইরাং–গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ও সাইরাং–কলকাতা এক্সপ্রেস।
পরিকাঠামো উন্নয়নে আইজল বাইপাস সড়ক, ইনডোরপি স্টেডিয়াম, আবাসিক স্কুল ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্প।
অসমের অনুষ্ঠান ও প্রকল্প
ভারতরত্ন ভুপেন হাজরিকার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গুয়াহাটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
শিল্প ও পরিকাঠামো প্রকল্পতে রয়েছে নুমালিগড় রিফাইনারিতে বায়ো-ইথানল প্লান্ট, পলিপ্রোপিলিন প্লান্ট, ব্রহ্মপুত্র নদে নতুন সেতু আদি। মোট অর্থ বিনিয়োগ আনুমানিক ১৮,৩৫০ কোটি।
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের উদ্বোধন যাকিনা রয়েছে উদয়পুর, গোমতী জেলায়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রচুর ৫১ শক্তিপীঠের একটি; প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা ধন্য মনিক্য কর্তৃক।
পুনর্নির্মাণ প্রকল্প:
কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের PRASHAD প্রকল্পে প্রায় ৯৭.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দির এলাকা উন্নয়ন।
মন্দির চত্বর সংস্কার, পর্যটক সুবিধা কেন্দ্র, ফুড কোর্ট, স্মারক দোকান, পার্ক প্রভৃতি।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের অংশ হিসেবে এই পুনর্নির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি
* মণিপুরে বিশেষ নিরাপত্তা বল, সেনা ও পুলিশ মোতায়েন।
* জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার।
* ত্রিপুরায় মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে রাজ্য প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
* রেল ও সড়ক প্রকল্পের ফলে পণ্য ও যাত্রী চলাচল সহজ হবে।
* নতুন শিল্প প্রকল্প, রেল ও পর্যটন পরিকাঠামো স্থানীয় ব্যবসা বাড়াবে।
* ভারতরত্ন ভূপেন হাজরিকা জন্ম শতবর্ষ উদযাপন ও ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির সংস্কার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পর্যটন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
* মণিপুরে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে এবং বাস্তুচ্যুত জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর কেবল উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন নয়, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তি, সংযোগ, শিল্পায়ন ও ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবনের এক নতুন অধ্যায়। মণিপুর থেকে মিজোরাম, অসম থেকে ত্রিপুরা প্রতিটি রাজ্যে তাঁর উপস্থিতি উন্নয়ন ও সংস্কৃতির যৌথ বার্তা বহন করছে।