বিহারের জয়ের পর বাংলায় নজর বিজেপির, মার্চ থেকেই বাড়ছে কেন্দ্রীয় তৎপরতা

Story by  Debkishor Chakraborty | Posted by  Aparna Das • 24 d ago
বিহারের জয়ের পর বাংলায় নজর বিজেপির
বিহারের জয়ের পর বাংলায় নজর বিজেপির
 
দেবকিশোর চক্রবর্তী

বিহারে অপ্রত্যাশিত জয়ের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠন ও ভোট-প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাস থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় একটি অংশ ধারাবাহিকভাবে রাজ্যে আসা-যাওয়া শুরু করবেন। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বাংলায় সংগঠন ছেড়ে থাকার সুযোগ নেই।”
 
বিজেপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মহলের কথায়, বিহারের জয় দলকে নতুন রাজনৈতিক গতি দিয়েছে, এবং সেই গতি ব্যবহার করেই বাংলায় আগাম প্রস্তুতি চালাতে চায় তারা।
 
এক কেন্দ্রীয় সংগঠন-সম্পৃক্ত নেতা জানান, “বিহারের ফল আমাদের শক্তি বাড়িয়েছে। নেতৃত্বের নির্দেশ, বাংলায় কাজ শুরু করতে হবে অবিলম্বে, পরে নয়।”
 
বিহারের নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক পালাবদলের ছবি বিজেপির পক্ষে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্যে কার্যকর প্রার্থী বাছাই, গ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক ও বুথ-স্তরের প্রস্তুতির প্রশংসা হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। ফলে বাংলার ক্ষেত্রেও একই ধরনের ‘মাইক্রো প্ল্যানিং’-এ গুরুত্ব বাড়ছে।
 
এক রাজ্যস্তরের নেতা বলেন, “বিহারে আমরা ফল পেয়েছি কারণ দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনকে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করে কাজ করা হয়েছে। বাংলাতেও সেই পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্র।”
 
বিহারে জয় ঘোষণার পর থেকেই বঙ্গ বিজেপি ইউনিটে মিটিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে, সাংগঠনিক সমন্বয়ও দ্রুততর হয়েছে বলে জানা যায়।
 
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের সফর শুরু হবে। এরা সরাসরি বুথ কমিটির কাজ, সাংগঠনিক যোগাযোগ, এবং প্রচারের বার্তা কীভাবে সাধারণ ভোটারের কাছে পৌঁছচ্ছে, এসব মূল্যায়ন করবেন।
 
এক জাতীয় স্তরের সংগঠন-নেতার বক্তব্য, “অনেক জেলায় কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক স্থায়ীভাবে থাকবেন ১০–১৫ দিন। বুথে কোথায় ঘাটতি, কোথায় কর্মী সংকট, সব তথ্যই সরাসরি রিপোর্ট আকারে যাবে দিল্লিতে।” এই পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কিছু সিনিয়র নেতা আছেন, যাঁরা পূর্বেও বাংলার নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদেরকেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের ‘ইন-চার্জ’ হিসেবে মনোনীত করা হচ্ছে।
 
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল গত এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রাধান্য ধরে রেখেছে। ফলে অনেক জেলায় তাদের গ্রামীণ সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। বিজেপি সেই এলাকাগুলিতেই বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছে যেখানে গত বিধানসভা বা লোকসভায় তারা কাছাকাছি লড়াই দিয়েছিল।
 
রাজ্য বিজেপির এক জেলা পর্যবেক্ষক জানান, “উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, এই অঞ্চলে বিশেষভাবে দল আরও কর্মী, পর্যবেক্ষক ও প্রচার সামগ্রী পাঠাচ্ছে।”
 
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কাটমানি, এবং প্রশাসনিক বিরোধ, এসবই প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। তবে বিজেপির কৌশলবিদরা মনে করছেন, শুধু ইস্যুভিত্তিক প্রচার নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ওপর জোর দিতে হবে।
 
এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “রাজনৈতিক প্রচার শো-কেস নয়। মানুষের ঘরে পৌঁছনোই মূল কাজ। সেই অনুযায়ী আমাদের দলের প্রত্যেক নেতাকে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
 
বিজেপির নির্বাচনী কৌশলবিদদের মতে, ২০২১ সালের অভিজ্ঞতার অনেক অংশই নথিভুক্ত করা হয়েছে। কোথায় দুর্বলতা, কোথায় প্রচার ব্যর্থ হয়েছে, সে সব তথ্যের ভিত্তিতেই নতুন পরিকল্পনা।
 
এক দলীয় মুখপাত্র বলেন, “এইবার দলের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার, প্রতিটি বুথে ৩০ থেকে ৫০ জন সক্রিয় কর্মী থাকতে হবে। প্রতিটি বুথ কমিটি কার্যকর কি না, প্রতিটি গ্রামে সংগঠন কাজ করছে কি না, এই হিসেবই ঠিক করবে প্রচারের মাত্রা।”
 
বুথ-স্তরের ডেটা সংগ্রহ, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে অঞ্চলভিত্তিক কৌশল, নেতাদের সফরসূচি, এসব নিয়েও বিস্তারিত নির্দেশিকা তৈরি হচ্ছে বলে জানা যায়।
 
বিজেপির এই আগাম প্রস্তুতির কারণে রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন দেখা গেছে। পর্যবেক্ষকদের একটি অংশের মতে, বিহারের সাফল্য বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক বার্তা হতে পারে, যার প্রভাব বাংলায় পড়া স্বাভাবিক।
 
অন্যদিকে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, বাংলার ভোটের মাটিতে বহিরাগত নেতৃত্বের তেমন প্রভাব পড়বে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “বাংলা নিজের ছন্দেই চলে। বাইরে থেকে কেউ এসে সেটা বদলে দিতে পারবে বলে আমরা মনে করি না।”
 
তবে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, বিহারের মতো ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তেই প্রভাব পড়েছিল মাইক্রো লেভেলের ক্যাডার-অ্যাক্টিভেশনে। তাই বাংলায় আগাম প্রস্তুতি বিজেপির কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
 
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, বিহারের সাফল্যের পর বিজেপি বাংলাকে লক্ষ্য করে পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি শুরু করেছে। মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক সফর, বুথ-স্তরে নজরদারি, শক্ত ঘাঁটিতে নতুন কৌশল, এসবই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলার রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হতে চলেছে, এমন ইঙ্গিত এখন থেকেই মিলছে দুই শিবিরের বক্তব্য এবং মাঠপর্যায়ের নড়াচড়া থেকেই।