স্বার্থপর সরকার একটি জাতিকে দুর্বল করে: অজিত ডোভাল

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 17 d ago
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং ঐক্যের মূর্তি
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং ঐক্যের মূর্তি
 
আওয়াজ দ্যা ভয়েস / নয়াদিল্লি

রাষ্ট্রীয় ঐক্য দিবস উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় শাসনব্যবস্থার ভূমিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে, একটি দেশের শক্তি নির্ভর করে তার সরকারের দৃঢ়তা এবং সততার উপর।
 
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আজকের ভারতের প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে পরিবর্তনের এই সময়ে সর্দার প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গির প্রাসঙ্গিকতাকে তুলে ধরেন।
 
সর্দার প্যাটেলের স্মরণসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ডোভাল বলেন, “আমি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে চাই, যেখানে একজন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে আমি শাসন প্রক্রিয়াকে কীভাবে দেখি। আমি বিশ্বাস করি, জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় শাসনব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি শুধু একটি দেশকে নিরাপদ রাখে না, বরং তাকে তার লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৫ সালে আমাদের আবারও সর্দার প্যাটেলকে পুনরাবিষ্কার করা উচিত।”
ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করে ডোভাল বলেন, ভারত বর্তমানে এক বিশেষ ধরনের শাসনব্যবস্থা ও বৈশ্বিক অবস্থান থেকে পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছে। তিনি ভারতের ঐক্য ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্যাটেলের দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং উল্লেখ করেন যে, প্যাটেলের নেতৃত্ব ও দর্শন আজকের ভারতে আগের চেয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
 
ডোভাল আরও বলেন, “অনেক সময় মানুষ বলে, একটি দেশের শক্তি তার জনসংখ্যা, সম্পদ বা সামগ্রিক জাতীয় চেতনায় নিহিত। কিন্তু এগুলো সবই বিমূর্ত ধারণা। বাস্তবে, একটি দেশের প্রকৃত শক্তি নিহিত থাকে তার সরকারের সামর্থ্য, দৃঢ়তা এবং নীতিগত স্পষ্টতার উপর।”
 
তিনি আরও যোগ করেন, “সর্দার প্যাটেলের দূরদৃষ্টি আজ ভারতের জন্য আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি প্রয়োজনীয়। শুধু ভারতই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা নয়, ভারতের শাসনব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো এবং বৈশ্বিক অবস্থান সবই পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীতেও ঘটছে এক বিশাল রূপান্তর। আর যখনই পরিবর্তন আসে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে প্রস্তুত করা এবং সজ্জিত রাখা। যখন সরকার দুর্বল ও বিভ্রান্ত হয়, কিংবা স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন ফলাফল সবসময় একই, দেশ অস্থির ও দিশাহীন হয়ে পড়ে।”
 
ডোভাল ইঙ্গিত করেন যে, ভারত এখন এক গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, শাসনব্যবস্থার কাঠামো, সমাজের গতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অবস্থান ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি সভ্যতাকে জাতি-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, এবং এটি কেবল কার্যকর ও নৈতিক শাসনব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। সরকারের চিন্তাভাবনা ও কাজের পরিধি সাধারণ প্রত্যাশার চেয়েও বড় হওয়া উচিত।
 
কেন্দ্রীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় ঐক্য দিবস উদযাপনের একটি দৃশ্য
 
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐক্য কেবল কোনো স্লোগান বা উদযাপনের বিষয় নয়, বরং এটি দেশের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ভারতের শক্তি তার বৈচিত্র্য এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নিহিত, কিন্তু এটিকে ধরে রাখতে হলে শক্তিশালী, জবাবদিহিমূলক এবং নৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন।
 
তিনি বলেন, “দেশ বড় হোক বা ছোট, শক্তিশালী হোক বা দুর্বল, প্রকৃত শক্তি নিহিত সেই সরকারে, যা স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিঃস্বার্থ মনোভাব নিয়ে কাজ করে। যখন সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অথবা যখন তারা নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত হয়, তখন পরিণতিও একই হয়, সেই জাতি দুর্বল হয়ে পড়ে। যে সরকার জাতির সেবায় নিয়োজিত, সেই সরকারই শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে তোলে।”
 
ডোভাল আরও বলেন, “বাংলাদেশ ও নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আসলে দুর্বল প্রশাসনের ফলাফল। মহান সাম্রাজ্য, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র বা গণতন্ত্রের উত্থান-পতন, সবকিছুই আসলে তাদের শাসনের ইতিহাস। সম্প্রতি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে অসাংবিধানিক উপায়ে শাসন পরিবর্তন ঘটেছে, যা দুর্বল শাসনব্যবস্থার ফল।”
 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সময় ডোভাল আহ্বান জানান, জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখতে হবে। তিনি বলেন, “যখন সরকার ও নাগরিক উভয়ই নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চিন্তা করবে, তখনই প্রকৃত ঐক্য সম্ভব হবে।”