ফ্যাটি লিভার নিয়ে সমাজে চলমান ৩টি ভ্রান্ত ধারণা

Story by  atv | Posted by  Aparna Das • 3 d ago
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
 
‘আওয়াজ দ্য ভয়েস অসম ব্যুরো’

ফ্যাটি লিভার বর্তমানে স্বাস্থ্যগত একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি কেবল ভারতেই নয়, সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করছে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই রোগ সম্পর্কিত নানা ভুল ধারণা সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, যা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভুল দিশা দেখাচ্ছে।
 
প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট, হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডঃ সৌরভ সেঠি সম্প্রতি তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কিত ৩টি বড় ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।
 
ভ্রান্ত ধারণা ১: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ফ্যাটি লিভার হয়
 
অনেকে মনে করেন যে খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ করতেই ফ্যাটি লিভার হয়। এটি সত্য নয়। ডঃ সেঠি জানান, ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ হলো অতিরিক্ত পরিমাণ ফ্রুক্টোজযুক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর তেল খাওয়া, স্বাস্থ্যকর চর্বি নয়।
 
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি 
 
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম ইত্যাদি উৎস থেকে আসা স্বাস্থ্যকর চর্বি লিভারের জন্য উপকারি। লিভারে চর্বি জমার প্রধান কারণ হলো প্রক্রিয়াজাত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর তেল বেশি খাওয়া।
 
আপনি যেন খাদ্য থেকে চর্বি বাদ না দিয়ে, বরং চিনি ও অস্বাস্থ্যকর তেল পরিহার করেন। স্বাস্থ্যকর চর্বির পাশাপাশি সুষম খাদ্য যকৃতের সুস্থতা ও পরিচালনায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
 
ভ্রান্ত ধারণা ২: ফ্যাটি লিভার নিরাপদ রোগ
 
ফ্যাটি লিভার কোনো ক্ষতিকর নয় এবং চিকিৎসার দরকার নেই এই ভুল ধারণা প্রচলিত। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ডঃ সেঠি বলেন, ফ্যাটি লিভার রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখায় না, কিন্তু যকৃতের ৫% ওজনের ওপর চর্বি জমা হলে প্রদাহ এবং দাগ (inflammation and scarring) সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা না করলে এটি যকৃত বিকল করে দিতে পারে।
 
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
 
গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসা না করলে ফ্যাটি লিভার থেকে ক্যান্সারসহ মারাত্মক যকৃত রোগ পর্যন্ত হতে পারে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে সঠিক সময়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করতে হবে যাতে এই রোগ ধরা পড়ে এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা যায়।
 
ভ্রান্ত ধারণা ৩: সাপ্লিমেন্ট ফ্যাটি লিভারের অপরিহার্য চিকিৎসা
 
ডঃ সেঠি বলেন, সাপ্লিমেন্ট ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এটিকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা বলে মনে করা ভুল। ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক চিকিৎসা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম।
 
তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে গাখির থিসল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, এন-অ্যাসিটাইল সিস্টেইন ইত্যাদি সাপ্লিমেন্ট লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। তবে এগুলো ব্যবহৃত হওয়া উচিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। কারণ সাপ্লিমেন্ট নির্ভরতা এবং ঔষধের সঙ্গে ক্রিয়াশীলতা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
 
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
 
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও চিনি কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। সাপ্লিমেন্ট শুধুমাত্র সম্পূরক হিসেবে কাজ করে, এটি রোগের মূল সমাধান নয়।
 
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের উপায়
 
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
 
ফলমূল, শাক-সবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ আঁশযুক্ত খাদ্য খাদ্যতালিকার প্রধান অংশ হওয়া উচিত। বাদাম, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস তালিকায় থাকা উচিত। চিনি যুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অস্বাস্থ্যকর তেল খাওয়া এড়াতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
 
২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম:
 
প্রতিদিন হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং যকৃতের চর্বি হ্রাস করে। ইনসুলিন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
 
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
 
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
 
শরীরের মোট ওজনের মাত্র ৩-৫% কমলে ফ্যাটি লিভারের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। সামান্য ওজন কমালে লিভার এনজাইম ফলাফল উন্নত হয়, প্রদাহের মাত্রাও হ্রাস পায়।
 
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
 
রক্ত পরীক্ষা এবং ইমেজিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার শনাক্ত করা যায়। ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, মেটাবলিক সিন্ড্রোম ইত্যাদি সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের তাদের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করানো জরুরি।