আওয়াজ দ্যা ভয়েস
সোশ্যাল মিডিয়া আজ সাধারণ মানুষকে পরিণত করেছে বিশ্বব্যাপী পরিচিত মুখে। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে এক নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার, যারা ট্রেন্ড, মতামত এবং যুব সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছেন।
ভারতের ডিজিটাল বিপ্লবের এই পরিবর্তিত ধারার উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন ফয়সাল শেখ, আওয়েজ দরবার, আরিশফা খান, রিয়াজ আলি ও জান্নাত জুবায়ের।
ফয়সাল শেখ
ফয়সাল শেখ (Mr Faisu)
ফয়সাল শেখ, যিনি Mr Faisu নামে বেশি পরিচিত, সৌন্দর্য, ফিটনেস ও বিনোদনমূলক কনটেন্টের জন্য জনপ্রিয় এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ইনস্টাগ্রামে তাঁর প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। কোকা-কোলা, জিলেট, ওয়ানপ্লাস ও স্পাইকারের মতো বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। ২৮ বছর বয়সি ফয়সাল প্রথমে টিকটকের মাধ্যমে পরিচিতি পান এবং পরে ইনস্টাগ্রামে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।
তরুণ প্রজন্মের কাছে তাঁর কনটেন্ট জনপ্রিয় হওয়ার কারণ, সেগুলি সহজ, বিনোদনমূলক ও বোধগম্য। পাশাপাশি সাইবার বুলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় নিয়েও তিনি কথা বলেন।
ফয়সালের জীবনসংগ্রাম অনুপ্রেরণামূলক, দিনে মাত্র ৫০ টাকা উপার্জন থেকে আজ তিনি সফল ইনফ্লুয়েন্সার, উদ্যোক্তা ও রিয়্যালিটি শো তারকা। একসময় বাবার ছোট ব্যবসায় কাজ করার পাশাপাশি লিঙ্কিং রোডে রোদে পুড়ে দিনে ৯ ঘণ্টা কাজ করে কাপড় বিক্রি করতেন। আজ তাঁর রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি ও শক্তিশালী ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড।
আওয়েজ দরবার
আওয়েজ দরবার একজন জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ৩০.৬ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট ও পেপসির মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। শক্তিশালী ও সৃজনশীল নৃত্য ভিডিওর জন্য তিনি পরিচিত, যা প্রায়ই ভাইরাল হয়। বলিউডের একাধিক সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওতেও তিনি কোরিওগ্রাফি করেছেন।
টিকটকে লিপ-সিঙ্ক ও ডান্স ভিডিওর মাধ্যমে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ভারতে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ইনস্টাগ্রাম রিলস ও ইউটিউবে নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। তিনি Atrangz Studio-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা ডান্স ও এন্টারটেইনমেন্ট কনটেন্টের একটি সৃজনশীল কেন্দ্র।
১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ মুম্বইয়ে জন্ম নেওয়া আওয়েজ ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সারা আলি খান, কার্তিক আরিয়ান ও উর্বশী রাউতেলার মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করে তিনি আজ ডিজিটাল ও বলিউডের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন।
আরিশফা খান
আরিশফা খান একজন লাইফস্টাইল, ফ্যাশন ও বিনোদনমূলক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ইনস্টাগ্রামে তাঁর প্রায় ৩০ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। তিনি নিজস্ব মেকআপ ব্র্যান্ড ‘Missy Me Cosmetics’-এর প্রতিষ্ঠাতা। ছোটবেলায় টেলিভিশনে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করে তিনি প্রথম পরিচিতি পান এবং পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাফল্য অর্জন করেন। ইউটিউবেও তিনি অভিনয় ও সৃজনশীল কনটেন্ট শেয়ার করেন।
২০০৩ সালে ভারতে জন্ম নেওয়া আরিশফা নিজের পড়াশোনা শেষ করার পর গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন এবং বিসনেসে নিজের জায়গা তৈরি করেন।
রিয়াজ আলি
রিয়াজ আলি
রিয়াজ আলি একজন স্টাইল ও এন্টারটেইনমেন্ট ইনফ্লুয়েন্সার, যাঁর ইনস্টাগ্রামে ২৭.৩ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। র্যাজ, নিসিন কাপ নুডলস ও জিও সিনেমার মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। টিকটকে লিপ-সিঙ্ক ভিডিওর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়ে পরে ইনস্টাগ্রামে নিজের দর্শক ধরে রাখতে সক্ষম হন।
রিয়াজ আলির আসল নাম রিয়াজ আফরিন। তাঁর দিদিও টিকটক ভিডিও বানাতেন। ভুটানে জন্ম নেওয়া রিয়াজ সেখানেই পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। টিকটকে তাঁর ফলোয়ার ছিল ২৭.৫ মিলিয়নের বেশি। প্রতি স্পনসর্ড পোস্ট থেকে আনুমানিক এক লক্ষ টাকা আয় করেন বলে জানা যায়।
জান্নাত জুবায়ের
জান্নাত জুবায়েরের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্টের সঙ্গে আধুনিক ডিজিটাল আয়ের সমন্বয়। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ৪০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে এবং তাঁর পোস্টের এনগেজমেন্ট রেট ৮ থেকে ১০ শতাংশ।
২০০১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম নেওয়া জান্নাত জুবায়ের রহমানি শিশু শিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়াকে আপন করে নিয়ে তিনি আজ ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার। তাঁর ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন সেন্স ও সহজ-সরল কনটেন্ট লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
এই ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সাররা ভারতের খ্যাতির সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন। তাঁদের জীবনকথা প্রমাণ করে, প্রতিভা, ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকলে সাধারণ জীবন থেকেও আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করা সম্ভব। ডিজিটাল যুগে সাফল্যের নতুন মানদণ্ড গড়ে তুলছেন তাঁরাই।