দেবকিশোর চক্রবর্তী, কলকাতা:
সারাদিন বইয়ে মুখ গুজে থাকা মেয়ে সে নয়, বরং চালচলনে একেবারে সাধারণ এক মেয়ে। সেই মেয়েই কিনা সাফল্যের শিখরে উঠে গোটা কাটোয়া শহরকে গর্বিত করলেন। নিলুফা ইয়াসমিন। হার না মানা ইচ্ছে শক্তি এবং মেধার জোরে দেশের সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলার মেয়ে নিলুফা।
সর্ব ভারতীয় স্তরের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতা ইউজিসি নেট/জেআরএফ-এর চলতি সালের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। কাটোয়ার পালিটা রোড এলাকার বাসিন্দা নিলুফার এই কৃতিত্বে উৎসবে মেতেছে তার পরিবার, পাড়া, এমনকি গোটা শহর।
এই চূড়ান্ত সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক অবিচল মনোযোগ, কঠোর অধ্যবসায় আর অদম্য জেদ। নিলুফা জানিয়েছেন, এর আগেও দু’বার তিনি এই পরীক্ষায় বসেছিলেন, কিন্তু ফল আশানুরূপ হয়নি। অনেকেই হয়তো সেখানেই থেমে যেতেন কিন্তু নিলুফা থামেননি। বরং প্রতিবার ব্যর্থতার পর নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছেন, নিজের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে এগিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন,প্রথম দু’বার ব্যর্থ হই। মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু ভেঙে পড়িনি। জানতাম আমি পারব। এবারের প্রস্তুতিতে ছিল দৃঢ় লক্ষ্য শুধুই পাশ নয়, শীর্ষে পৌঁছানোর।
ফলাফল প্রকাশের দিন ফল প্রকাশের পর প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেননি নিলুফা। অল ইন্ডিয়ার নিরিখে র্যাঙ্কে তিনি প্রথম হয়েছেন দেখে আনন্দে চোখে জল আসে পরিবারের সদস্যদের। মা-বাবা, শিক্ষক, প্রতিবেশী সবাই উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন। ছোট শহর থেকে উঠে এসে সর্বোচ্চ র্যাংক অর্জন করা যেন স্বপ্নের মতো।নিলুফা শুরু থেকেই পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। পরবর্তীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরেও তিনি বরাবরই অসাধারণ ফল করেন। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগ্রহ থেকেই তিনি ইউজিসি নেট/জেআরএফ-এর প্রস্তুতি শুরু করেন।
UGC NET JRF তে সারা দেশে প্রথম
এই সাফল্যের পর কী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? উত্তরে নিলুফা বলেন,দেশের একজন শিক্ষিকা হিসেবে গবেষণায় অবদান রাখতে চাই। উচ্চশিক্ষার জগতে কিছু অর্থবহ কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে পিএইচ.ডি-তে ভর্তি হয়ে গবেষণার মাধ্যমে সমাজে কিছু ফিরিয়ে দেওয়াই এখন লক্ষ্য।নিলুফার এই কৃতিত্ব কাটোয়ার মতো শহরের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের কাছে এক বড় অনুপ্রেরণা। প্রমাণ করে দিলেন প্রতিভা,পরিশ্রম ও সাহস থাকলে সীমাবদ্ধতা কোনো বাধা হতে পারে না। তাঁর এই সাফল্যে আজ শুধু তাঁর পরিবার নয়, গোটা কাটোয়া গর্ব অনুভব করছে।
নিলুফার গল্প হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য এক উদাহরণ বারবার ব্যর্থ হলেও হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সাফল্য ধরা দিতেই পারে। তাঁর এই অধ্যবসায় ও অদম্য জেদ ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
বাঙালির মেধা আর লড়াইয়ের জয়গাঁথায় লেখা থাকুক নিলুফা ইয়াসমিনের নাম স্বর্ণাক্ষরে।ছোট থেকেই মেধাবী নিলুফা। ২০২০ সালে কাটোয়া কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক। ২০২২ এ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। সেই বছরেই, বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন নিলুফা। ভবিষ্যতে অধ্যাপনা করতে চান তিনি। সেই জন্যই নেট-পরীক্ষায় বসা। আর সাফল্য। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও কঠোর অধ্যাবসায় জীবনের সাফল্য এনে দেয়, বিশ্বাস করেন তিনি। তাই দুইবারের ব্যর্থতাও তাঁকে ক্লান্ত করতে পারেনি। পরিবারের কথায়, ছোট থেকেই পড়েছেন বিবেকানন্দের বাণী, সেটাই তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে।
নিলুফা আওয়াজ দ্যা ভয়েস-কে বলেন, “ জানেন, প্রথম দু’বার ব্যর্থ হই। খুব মন খারাপ হয়েছিল, কিন্তু কখনও ভেঙে পড়িনি। মনের জোর ছিল। জানতাম আমি পারব। এবার লক্ষ্য ছিল শুধু পাশ করা নয়, শীর্ষে পৌঁছনো।” তার সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তাঁর এই গল্প আজকের এবং আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য এক দৃষ্টান্ত। বারবার ব্যর্থ হলেও হাল না ছেড়ে, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় নিয়ে লড়ে গেলে সাফল্য আসবেই। এটাই বোধ হয় প্রমাণ করলেন তিনি। তাঁর বাবা মোল্লা মহম্মদ বিল্লাল খোয়াই বান্ধা গোরক্ষনাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আর মা রউসোনা খাতুন পাহাড়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এমন এক পরিবারের মেয়ে নিলুফা যেখানে শিক্ষাই শেষ কথা বলে, সেই পরিবেশে থেকে যে তিনিও সমাজকে নিজের সেরা শিক্ষাটা দিয়েই কর্ষণ করবেন তা তো বলাই বাহুল্য।