শম্পি চক্রবর্তী পুরকায়স্থ
দশমীর সন্ধ্যায় রীতি মেনে চন্দননগর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জগদ্ধাত্রীর কাঠামো পুজো, যেখানে ক্লাবের সদস্যরা একত্রিত হয়ে পুজোর আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। দুর্গা পুজোর ঠিক এক মাস পরে অনুষ্ঠিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। এদিন কাঠামো পুজোর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে মূর্তি গড়ার কাজও শুরু করেন মৃৎশিল্পরা। দশমীর দিনই কাঠামো পুজোর মাধ্যমে শহর যেন এক প্রকার বিদায়ের বিষাদকে সামাল দিয়ে দ্রুত নতুন আনন্দ-উৎসবের প্রস্তুতিতে নেমে পড়ে।
চলতি রীতি অনুযায়ী, দুর্গাপুজোর এক মাস পরেই জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হয়, ঋতুপূর্বক কালী বা দুর্গার বিদায়ের পরে শহরবাসী আবারও জগদ্ধাত্রীর অভ্যর্থনা ও নিরঞ্জনের প্রস্তুতি শুরু করেন। চন্দননগরের ঐতিহ্যগত ভাব, পরিবেশ ও সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ এটিকে এক ভিন্ন রকম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করে। তবে জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভদ্রেশ্বর, মান কুন্ডু, রিষড়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়।
কাঠামো পুজোকে স্থানীয়ভাবে এক ধরনের ‘আলোচনা-সম্ভাষণ’ ও আনুষ্ঠানিক শুরু হিসেবে দেখা হয়। এক দিকে যেখানে দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের পারম্পরিক আচরণ চলে, অন্য দিকে কাঠামো পুজোতে হয় বিভিন্ন ক্লাব ও বারোয়ারি-সমিতির সদস্যদের সমাবেশ, পরিকল্পনা ও দায়িত্ববণ্টন। এখানে মণ্ডপ-থিম, আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রা, এবং নিরঞ্জন-সময়ের আয়োজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; ফলে কাঠামো পুজোকে পুজোর প্রকৌশল ও সংস্কৃতিক রূপরেখার প্রথম অধ্যায় বলা যায়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী উৎসবের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিচিতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত, ফরাসি শাসনকালীন সময় থেকেই এখানে উৎসবটি একটি আলাদা স্বীকৃতি পেয়েছে, শহরের আলোকসজ্জা ও মণ্ডপ-শৈলী বহু বছর ধরেই দর্শনীয়তার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবারের মতো এ বছরও মণ্ডপ-শৈলে স্থানীয় কারিগরেরা শোলা, কাগজ, বনকাপাসের মতো স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে বিশেষ শোভা তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে।
কাঠামো পুজোর পর থেকেই শুরু হয় মূর্তি গড়ার তৎপরতা, স্থানীয় শিল্পীরা হাতে-কলমে দেবীর দেহ ও পরিধান তৈরি করবেন, শোলার অলংকার ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জার কাজ দ্রুত অগ্রসর হবে। একইসঙ্গে ক্লাব-কর্তৃপক্ষ মণ্ডপ থিম, পথসাজ, নিরাপত্তা ও ভক্তদের সুবিধার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে থাকে। চন্দননগরের অন্যান্য আচরণগুলির মধ্যে একটি হল শেষ দিনীয় অনুষ্ঠানিকতা, কেউ কেউ ঐতিহ্যগত রীতিতে পোশাক বা অভিনয়েও অংশ নেন, যাতে উৎসবটি কেবল ধর্মীয় নয়, সমষ্টিগত সামাজিক অনুশীলনেও পরিণত হয়।
মণ্ডপ-প্রস্তুতি ও কাঠামো পুজো সম্পর্কে জগদ্ধাত্রী কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির এক সদস্য জানান, ‘দক্ষিণ থেকে উত্তর, ছোট-বড় সকল ক্লাব মিলেই জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঐতিহ্য ও পরম্পরার রূপ দিতে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে কাজ করে। জগদ্ধাত্রী উৎসব চন্দননগরের অহংকার। এটি শহরের ঐতিহ্য ও সম্প্রদায়ের মিলনের প্রতিচ্ছবি। ' দশমীর দিনকার এ অনুষঙ্গটি চন্দননগরের জনজীবনে
নতুন আনন্দের সূচনা।